নতুন তিন রেলপথ উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী

16

পূর্বদেশ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যানজট নিরসনে ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরী একটি ভিন্ন রেল যোগাযোগের সাক্ষী হবে। তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ ২০৩০ সালের মধ্যে এই ঢাকা শহরেই রেল যোগযোগের একটা আলাদা পরিবেশ তৈরী হবে। এতে মানুষের যোগাযোগ, যাতায়াত এবং আমাদের তেলের খরচ-অনেক কিছুই বাঁচবে। ঢাকা শহর যানজটও মুক্ত হবে। সেভাবেই আমরা আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩টি প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত ৬৯ দশমিক ২০ কি.মি. রেলপথে রূপপুর (ঈশ্বরদী), শশীদল (কুমিল্লা) এবং জয়দেবপুর (গাজীপুর) স্টেশন থেকে যুগপৎভাবে ট্রেন চলাচল এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রূপপুর, শশীদল ও জয়দেবপুরে একযোগে এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। খবর বাসস।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা মেট্রোরেল উদ্বোধন করেছি- যেটা পরবর্তীতে উত্তরা থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে আমরা পাতালেও যাচ্ছি। ইতোমধ্যে এমআরটি লাইন-১ এর অধীনে পাতাল রেলের নির্মাণ কাজেরও শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেল খাতে সকল প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশীয় এবং আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় নব-দিগন্তের সূচনা হবে এবং রেল পরিসেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থেকে মন্দবাগ ও কুমিল্লার শশীদল থেকে রাজাপুর পর্যন্ত ডাবল লাইনে ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ, একই সঙ্গে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ১১ কিলোমিটার ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল এবং পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় রূপপুর রেলস্টেশন, নবনির্মিত ও সংস্কার করা ২৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রেললাইন উদ্বোধন করেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় যে সব রেল-লিংক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকার সেগুলো একে একে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি-১) এর অর্থায়নে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ (ডিটিজেডিএলপি)’- শীর্ষক প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। এই প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ১১ দশমিক ০৯ কিলোমিটার রুটে ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এই সেকশনে ডাবল লাইনে ট্রেন চালু করা হলে ধীরাশ্রম স্টেশনে ক্রসিং এর জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। ফলে সকল ট্রেনের যাত্রা সময় বাঁচবে এবং দুর্ঘটনার আশংকা হ্রাস পাবে।
রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রেলপথ সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির স্বাগত বক্তব্য রাখেন। আরো বক্তব্য রাখেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ড. বিনয় জর্জ। অনুষ্ঠানে রেলের তিনটি প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি-হানাদার বাহিনী ২৭৮টি রেলব্রিজ এবং ২৭০টি সড়ক সেতু গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। দু’টি বন্দরে মাইন পুঁতে রেখেছিল। সদ্য স্বাধীন দেশে জাতির পিতা শেখ মুজিব তাঁর দূরদর্শী সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত রেলওয়ের স্থাপনাসমূহ সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করেন। তিনি রেলপথ স¤প্রসারণের মাধ্যমে রেলওয়েকে গণপরিবহনে রূপান্তরের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শূন্য হাতে যাত্রা শুরু করে এই দেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুতে রেলপথ সংযোগ স্থাপনসহ রেলকে পুনর্গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় বার সরকারে এসে তাঁর সরকার রেলের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ বছরে তাঁর সরকার ৬৫০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ, ২৮০ কিলোমিটার মিটারগেজকে ডুয়ালগেজে রূপান্তর এবং ১ হাজার ২৯৭ কিলোমিটার লাইন পুনর্বাসন/পুনঃনির্মাণ করেছে। ১২৬ নতুন স্টেশন ভবন ও ২২৩টি স্টেশন ভবন পুনর্বাসন/পুনঃনির্মাণ করেছে। পাশাপাশি ৭৩২টি নতুন রেলসেতু, ৭৭৪টি রেলসেতু পুনর্বাসন/পুনঃনির্মাণ এবং ৫০টি ব্রডগেজ ও ৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ পুনর্বাসন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ১০৬টি লোকোমোটিভ, ২০ সেট ডিইএমইউ, ৫৩৫টি যাত্রীবাহী ক্যারেজ এবং ৫১৬টি মালবাহী ওয়াগন সংগ্রহ করেছি। ১৩০টি স্টেশনে সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করেছি। ইতোমধ্যে ৪৪টি নতুন এবং বর্ধিত রুটে মিতালী এক্সপ্রেসসহ মোট ১৪২টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। সরকারপ্রধান বলেন, আজকে (বৃহস্পতিবার) লুপলাইন ও আপ-ডাউন লাইনসহ মোট ৩২ কিলোমিটার নবনির্মিত লাইন উদ্বোধনের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে ট্রেন চলাচল অধিকতর নিরাপদ ও দ্রæততর হবে এবং অধিক সংখ্যক ট্রেন চালু করা সম্ভবপর হবে।