নগরীতে আবারও গ্যাসলাইন বিস্ফোরণ কেজিডিসিএলকে দায় এড়াতে পারে ?

17

নগরীর বাকলিয়া এলাকার বলিরহাট। ঘনবসতিপূর্ণ একটি এলাকা। সেইসাথে কাটশিল্পের কারখানাসহ কয়েকশত ফার্নিচার দোকান রয়েছে এ এলাকায়। এখানেই গত বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত তিনটায় চল্লিশ বছরের পুরনো গ্যাস সঞ্চালন লাইন বিস্ফোরণ হয়ে অগ্নিদগ্ধসহ গুরুতর আহত হয়েছেন ৮জন। বিস্ফোরণে উড়ে গেছে কয়েকটি বাড়ির দেয়াল। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকার আসবাবপত্র। এ ঘটনা চট্টগ্রামবাসীকে নতুনভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এ জন্য কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিভিউশন কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলাকে দায়ি করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে নগরীর পাথরঘাটায় গ্যাস সঞ্চালন লাইন বিস্ফোরণ ঘটে ৭ জনের মৃত্যু হয়। আরো প্রায় পঞ্চাশজনের শতাধিক আহত হন। এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ নগরীর মানুষ শোকে স্তব্ধ ও আতঙ্কি হলেও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিভিউশন কোম্পানী নির্লিপ্তভাবে তাদের দায় অস্বীকার করেছিল। পরে সবকটি তদন্ত প্রতিবেদনে কেজিডিসিএলের অবহেলা এবং গ্যাস লাইনে লিকেজ সরানোর সময়োচিত উদ্যোগ না নেয়ার কারণকেই চিহ্নিত করা হয়। তবে গ্যাস ডিস্ট্রিভিউশন কোম্পানি এ চরম অবহেলার জন্য দায়িদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিয়েছিল কিনা, তা আমাদের জানা নেই। এবারও কেডিডিসিএলের দিকে অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। তারা গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিস্ফোরিত গ্যাস লাইনটি ৪০ বছরের পুরনো। পূর্বদেশে ঘটনার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন প্রতিদিনের মত রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েন মাহমুদা খাতুন। বয়স সত্তরের কাছাকাছি। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। তাই রাত ১১টার দিকে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। রাত তিনটার দিকে ঘুম থেকে উঠে আলো জ্বালাতে যাবেন, এমন সময় বিস্ফোরণ হয় সেপটিক ট্যাংকের। মুহূর্তেই ধসে পড়ে পুরো একতলা ভবনসহ পার্শ্ববর্তী এক বেড়ার ঘর ও আরেকটি ভবনের একপাশ। স্থানীয়দের মতে, ‘পর পর দুইটি বিস্ফোরণ হয়। এতেই বিধ্বস্ত হয় তিনটি বাড়ি।’ তারা আরও বলেন, ‘গ্যাসের লাইনটি ৪০ বছর পুরনো। নালা বা সড়কের কাজ চলার সময় পুরনো গ্যাস লাইনের বিভিন্ন অংশে ছিদ্র হয়ে গ্যাস লিক হতে থাকে। আমরা বিষয়টি কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছিলাম। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেননি।’
সম্প্রতি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ এবং বিভিন্ন সময় সিটি কর্পোরেশনের নালা পরিষ্কারের কাজ করতে গিয়ে গ্যাস লাইনটির বিভিন্ন অংশে লিকেজ হয়। নালা ও বিভিন্ন বাড়ির সেপ্টিক ট্যাংক ঘেঁষে এলাইনটি বিভিন্ন বাসাবাড়িতে চলে যায়। লিকেজ অংশে মাঝেমধ্যে আগুন জ্বলতে দেখা যায়, এছাড়া কয়েকটি ছোট ছোট বিস্ফোরণও হয়। এসময় স্থানীয়দের পক্ষ থেকে কয়েকদফায় কেজিডিসিএলকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়, কিন্তু তারা পরিদর্শন করে গেলেও কার্যত কোন লাইনের কোন সংস্কার করেন নি। ফলশ্রæতিতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার স্বীকার হয়েছে এলাকার মানুষ। ক্ষতি হয়েছে বসতবাড়ি ও আসবাবপত্রের। বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা পূর্বদেশকে বলেছেন, ‘একতলা ভবনটির সেপটিক ট্যাঙ্কের পাইপলাইন গেছে ভবনের সঙ্গে লাগোয়া নালা দিয়ে। সেই নালা দিয়ে আবার কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পাইপলাইনও গেছে। গ্যাস সেপটিক ট্যাঙ্কের পাইপলাইনে ঢুকে টয়লেট দিয়ে পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। রাতে দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় ঘরের মধ্যে গ্যাস জমে যায়। সকালে পরিবারের একজন উঠে বিদ্যুতের সুইস অন করেন। তখন অন্যরা সবাই ঘুমে ছিলেন। বিদ্যুতের সুইস অন করার সাথে সাথে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়।’ এ বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা দায় স্বীকার না করে বলেন, ঘটনাস্থলে টিম পাঠিয়ে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। কেজিডিসিএল কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন এবার তা দেখার বিষয়। তবে একথা সত্যি গ্যাস লাইন বলি আর সিলিন্ডার বোতল বলি নগরবাসী এ দুই মরণ ঝুঁকি কাঁদে নিয়ে দিনাতিপাত করছে। মাঝেমধ্যে বাসাবাড়ি আর সিএনজি চালিত গাড়ির বিস্ফোরণের খবর সংবাদপত্রে আসে। এসব ঘটনা একেকটি বিভিষিকাময় অধ্যায় রচনা করে বটে, ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয় না। পাথরঘাটা ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যদি কেজিডিসিএল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিত তবে এ জাতীয় দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্ত হতো না। আমরা মনে করি, বলিরহাট দুর্ঘটনার দায় কেজিডিসিএল কোনভাবেই এড়াতে পারে না। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারির অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। একই সাথে যেসব উন্নযন ও সেবামূলক কর্তৃপক্ষ তাদের সংস্কার কাজ করতে গিয়ে অসাবধানতাবশতঃ গ্যাস লাইনের পাইপ লিকেজ করেছে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে লিকেজ হওয়ার পর তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে নি, তাদেরও ঘটনার দায় বহন করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দায়িদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপসহ গ্যাস লাইনের লিকেজগুলো চিহ্নিত করে দ্রæত সংস্কারের উদ্যোগ নেবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।