ধর্ষণ প্রতিরোধে চাই পারিবারিক সচেতনতা

64

নাহিদা তুলতানা

হঠাৎ বেড়ে গেছে নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা। দেশব্যাপী প্রতিবাদ চলছে। ধর্ষকের লোলুপদৃষ্টি থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশু ও বৃদ্ধরাও। এমনকি রেহাই পাচ্ছে না বাকপ্রতিবন্ধী বা ভবঘুরে পাগলও। এই করোনা মহামারির মধ্যেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। গা শিউরে ওঠার মতো এমন ধর্ষণের খবর প্রতিনিয়তই গণমাধ্যমে উঠে আসছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পত্রিকার খবরের বাইরেও প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটছে। আপত্তিকর ছবি তুলে ও গোপন ভিডিও ধারণ করে বøাকল্যাক মেইল করে ফাঁদে ফেলে অহরহ ধর্ষণ হচ্ছে। ধর্ষকের লোলুপদৃষ্টি থেকে বাদ যাচ্ছে না কন্যাশিশু ও বৃদ্ধ নারীরাও। এমনকি রেহাই পাচ্ছে না বাক বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরাও। শুধু তাই নয়, ধর্ষণ শেষে নির্মম-নির্যাতন, এমনকি চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিয়ে কিংবা আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। নারীরা প্রতিনিয়ত শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে, চলতি বছরে সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা, বিশেষত ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নিপীড়ন এবং পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ও ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সংস্থাটির ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নিপীড়নের এ তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময়কালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৭৫ জন, যার মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার হন ৭৬২ জন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ২০৮ নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হন ৪৩ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১২ নারী। গত নয় মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৬১ নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানির কারণে ১২ নারী আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী এবং ৯ পুরুষ নিহত হয়েছেন। গত নয় মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৩২ নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হন ২৭৯ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭৪ নারী। অনেক সময়ই যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার পর ‘নারীর পোশাক’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যতটা সরব আলোচনা হয় ধর্ষকের বিচারের দাবিতে ততটা অবস্থান লক্ষ্য করা যায় না। পোশাকের সঙ্গে ধর্ষণের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। নচেৎ ২/১ মাসের শিশু ধর্ষিত হতো না। তবে সম্ভ্রম বিষয়টি পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য।
ধর্ষণ প্রতিরোধে পারিবারিকভাবে সচেতনতা ও সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির পাশাপাশি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে হবে। সন্তান যাতে ভালো বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিশে নৈতিকতা বজায় রেখে চলতে পারে, প্রত্যেক অভিভাবককে সেদিকে যত্নবান হতে হবে। ধর্ষণের ঘটনা রোধে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যেমন আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে, তেমনি পারিবারিক সচেতনতাও বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক অনুশাসনের প্রতিও জোর দিতে হবে। সন্তানদের প্রতি যদি বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া যায় এবং তারা কী করছে, কোথায় সময় কাটাচ্ছে, সেদিকে খেয়াল রাখা হয় তাহলে হয়তো সামাজিক অপরাধের মাত্রা অনেকটাই কমে যাবে।এ ক্ষেত্রে আকাশ সংস্কৃতি, প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব ও মাদকের বিস্তারের কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের জিঘাংসা ও মানসিক অস্থিরতা কাজ করে। ধর্ষণ একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। আর এই ব্যাধিটির বিস্তার আমাদেরকেই রোধ করতে হবে। যেন ধর্ষকের দংশন আর বিস্তৃত না হয়।

লেখক : শিক্ষক