দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের অপচেষ্টা হচ্ছে

11

পূর্বদেশ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার দেশব্যাপী একটি শক্তিশালী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেলেও দেশে একটি শ্রেণী রয়েছে, তারা এই উন্নয়ন দেখে না বরং নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী এদের সম্পর্কে দেশবাসীতে সচেতন হওয়ার আহব্বান জানান। তিনি গতকাল রোববার পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালীতে খরস্রোতা পায়রা নদীর ওপর নির্মিত ‘পায়রা সেতু’র উদ্বোধনকালে দেয়া ভাষণে এই আহব্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এই সেতুর উদ্বোধন করেন। তিনি একই অনুষ্ঠানে ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পেরও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যোগাযোগের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না। এর মাঝেই কিছু কিছু ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটছে, ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনানো হচ্ছে সেটা আপনারা নিজেরাও টের পান। যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। সেইসাথে প্রচারও চালানো হয়। আমরা যতই উন্নতি করি, ভাল কাজ করি একটা শ্রেণীই আছে বাংলাদেশের বদনাম করতেই তারা ব্যস্ত।
এই শ্রেণীর লোকদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক তারা কি তা চায় না? একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাদের একটু কদর বাড়ে। সেজন্য উন্নয়নটা তারা দেখে না বরং ধ্বংসই সবসময় করতে চায়, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে আরো সতর্ক থাকতে হবে।
ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকার খরস্রোতা পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে এই পায়রা সেতু। খবর বাসসের।
সেতুটি চালু হওয়ায় বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সঙ্গে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত সড়ক পথ ফেরিবিহীন হয়ে গেছে। অতীতে বরিশাল থেকে মহাসড়ক পথে কুয়াকাটা পৌঁছাতে হলে ৬টি স্থানে ফেরি পার হতে হতো। এরআগে ৫টি সেতুর পর এখন ৬ নম্বরে এই পায়রা সেতু নির্মিত হওয়ায় এ অঞ্চলে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলো।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম প্রকল্পগুলোর ওপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রকল্পগুলোর ওপর পৃথক ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়। প্রকল্পের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী এবং সিলেট প্রান্তে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত প্রশাসন, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপি, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, তাঁর সরকারের ১ম মেয়াদে সর্বপ্রথম লাউকাঠি নদীতে পটুয়াখালী সেতু নির্মাণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে কীর্তনখোলা নদীর উপর শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু (দপদপিয়া সেতু), খেপুপাড়ায় আন্ধারমানিক নদীর উপর শহীদ শেখ কামাল সেতু, হাজীপুরে সোনাতলা নদীর উপর শহীদ শেখ জামাল সেতু এবং মহিপুরে খাপড়াভাঙ্গা নদীর উপর শহীদ শেখ রাসেল সেতু নির্মিত হয়েছে। আর পায়রা নদীর ওপর দৃষ্টিনন্দন পায়রা সেতু নির্মিত হলো। এরফলে এখানে পর্যটনের সুযোগ যেভবে বৃদ্ধি পাবে তেমনি তাঁর সরকার পায়রায় যে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগও সৃষ্টি হবে। আর সমগ্র বাংলাদেশেও একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরী হয়ে যাবে।
এদেশের যতটুকু উন্নয়ন সেটা আওয়ামী লীগ সরকারই করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বাংলাদেশে একটি যোগাযোগের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য ’৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেই আওয়ামী লীগ সরকার ‘ধরলা সেতু’ নির্মাণ করে। যমুনা নদীর ওপর রেল যোগাযোগসহ বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই করা।
তাঁর সরকারের আমলে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের খÐচিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বরিশাল বিভাগে কেবল সুন্দর রাস্তাই আমরা করিনি এখানে আমাদের ক্যান্টনমেন্ট নির্মাণ হয়েছে (লেবুখালি), একটি নৌ ঘাঁটি ও বিমান ঘাঁটি হচ্ছে সেইসাথে কোস্টগার্ডের প্রশিক্ষণের জন্য কোস্টগার্ড ঘাঁটিও এখানেই করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, গলাচিপায় বীজ গবেষণা কেন্দ্র করা হয়েছে এবং পায়রা বন্দর করা হয়েছে এভাবেই পুরো বরিশাল নিয়েই একটি বড় কর্মযজ্ঞ চলছে।
এদিন, ২০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং সিলেট হতে তামাবিল পর্যন্ত আরও ৫৬ কিলোমিটার মহাসড়ককে ৬-লেনে উন্নীতকরণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা-সিলেট-তামাবিল জাতীয় মহাসড়ক দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক করিডোর। এ সড়কটি রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও দেশের অন্যান্য অংশের সাথে বৃহত্তর সিলেট বিভাগের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ও পর্যটন সমৃদ্ধ সিলেটের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত তামাবিল একটি প্রসিদ্ধ স্থলবন্দর। এ মহাসড়ককে কেন্দ্র করে কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে এ মহাসড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সিলেটবাসীর দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা পূরণে বাংলাদেশ সরকার ও এডিবি’র অর্থায়নে সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর উন্নয়ন প্রকল্প এবং বাংলাদেশ সরকার ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাক্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)’র অর্থায়নে সিলেট-তামাবিল সড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ৬-লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।