দেশের তুমব্রু সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা জরুরি

19

দেশের দক্ষিণ পূর্ব সীমান্ত মিয়ানমারের সাথে লাগোয়া। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রæ সীমান্ত দেশের অধিবাসীদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মিয়ানমারের জান্তা সরকার আন্তর্জাতিক আইন কানুনের তোয়াক্কা করে না। দীর্ঘদিন হতে মিয়ানমারের সাময়ীক বাহিনী সেদেশের আরকানসহ রোসাং অঞ্চলের মুসলিমদের উপর দমনপীড়ন করে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে চলেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অমানবিক অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য একটি বিষফোঁড়া হয়ে বিরাজ করছে। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের এখানে সরকার আশ্রয় দিয়ে নানা সমস্যায় রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে দেশের সরকার রোহিঙ্গা বিষয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে সমস্যাটি উপস্থাপন করলেও প্রতিশ্রæতি প্রদান করার পরও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের জান্তা সরকার ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে নানারকম গড়িমসি করছে। যার কোন সুরাহা এখনো দেশের সরকার করতে সক্ষম হয়নি। অন্যদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবসানের চেষ্ট করছে দেশের সরকার। রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর যারা মিয়ানমার সীমান্তবর্তী অঞ্চল দেশের টেকনাফ, উকিয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে তাদের প্রায় নরনারী আধুনিক শিক্ষার সাথে পরিচিতি নয়। যার কারণে বিবেক বিবেচনার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পক্ষ হতে আশানুরূপ শৃঙ্খলা ও ভালো আচরণ পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে দেশের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের লোক নানা সমস্যায় জর্জরিত। সরকারি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়ে মহাসংকটে রয়েছে। এদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দেশীয় কিছু সুবিধাভোগী অসাধু জনগণের নানা অপকর্মে অনেক রোহিঙ্গা ব্যবহৃত হতে দেখা যাচ্ছে। দেশ ও দেশের মানুষ তাদের নিয়ে সীমাহীন সংকটের মধ্যে দিন পার করছে। এমতাবস্থায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এবং আরাকান আর্মির মধ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যুদ্ধ চলছে। যার ফলে ভোগতে হচ্ছে দেশের সীমান্তবর্তী অধিবাসীদের। মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং আরকান আর্মির বিরোধের স্বশস্ত্র যুদ্ধের গোলাবারুদ মর্টার সেল দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এসে পড়ছে।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায়-মিয়ানমারের মর্টার সেলের আঘাতে ১৬ সেপ্টেম্বর এক রোহিঙ্গা তরুণ নিহত হয়। আরো ৮ জন বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরের লোক আহত হয়েছে। তাছাড়া মিয়ানমার ভূখÐে একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে একজন বাংলাদেশি নাগরিকের এক পা উড়ে গেছে। মিয়ানমার সামরিক জান্তা এবং আরাকান আর্মির বিরোধের জের ধরে দেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বের উপর এমন হুমকি ও ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবাদের ভাষা আমাদের জানা নেই। দেশের সরকারি খবরের বরাতে জানা যায়- বান্দরবানের তুমব্রæ সীমান্ত এবং মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। দেশের সেনাবাহিনীও পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে। তারপরও ‘একের কপালে বহে/আরের কপালে দহে’, এমন অবস্থা জাতির জন্য আতঙ্কের বিষয়। মিয়ানমারের অভ্যন্তরিন বিষয় দেশের মানুষের যানমালের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনার বিষয়সমূহ আন্তর্জাতিক পরিমÐলে সরকার তুলে ধরছে। তারপরও দেশের গরু-ছাগল মিয়ানমার অংশে ঢুকে পড়া রোধ করা সীমান্তবর্তী নাগরিকদের উচিৎ। গরু ফেরাতে গিয়ে অংজ্ঞাথোরাই তঞ্চঙ্গ্যা (২২) এর একটি পা উড়ে গিয়েছে- এমন দুর্ঘটনা হতে দেশের নাগরিকদের সতর্ক থাকতে হবে। বর্তমানে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী গোলযোগপূর্ণ এলাকার লোকদের সচেতনভাবে চলাফেরা করা জরুরি। আর সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়াও প্রয়োজন। মিয়ানমারের বুলেট, মর্টার শেল ইত্যাদির আঘাতে আমাদের সীমান্তের কোন লোকের হতাহত হওয়া কাম্য নয়। এ ব্যাপারে সরকারও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, সেনাবাহিনী এবং বিজিবি’র সক্রিয় ভূমিকা আশা করে দেশের মানুষ।