দু’বছরেও মেরামত হয়নি চন্দনাইশ ধোপাছড়িতে ধসে পড়া সেতু

60

বন্যার পানিতে ধসে পড়া সেতুর মেরামত কাজ দুই বছরেও শুরু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ সেতু নির্মাণ করতে না পারায় ধোপাছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। এখন এলাকার লোকজনকে চলাফেরা করতে হচ্ছে খালের দু’পাশে মাটি ভরাট করে। তবে ভরা বর্ষা মৌসুমে খালে পাহাড়ি ঢল নেমে এলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে ধোপাছড়ি ইউনিয়নের পূর্বাংশের মানুষেরা। উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি জনপদ ধোপাছড়ি ইউনিয়নের ধোপাছড়ি খালের উপর চামাছড়ি গ্রামে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। যেটি উদ্বোধনের আগেই নির্মাণ ত্রæটির কারণে পাহাড়ি নেমে আসা ঢলের পানির তোড়ে ধসে পড়ে। ধোপাছড়ি চামাছড়ি খালের উপর ৫৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৬০ ফুট দীর্ঘ একটি সেতু উদ্বোধন করার তারিখ ঘোষণার আগে গত ২০১৭ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে ধসে পড়ে। ফলে তখন থেকেই পাঁচটি গ্রামের মানুষের চলাচলের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। বিশেষ করে সেতুটি চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ার কারণে দুর্ভোগে পড়া গ্রামগুলো হচ্ছে শান্তির বাজার, মংলার মুখ, মায়ানী, ত্রিপুরা পাড়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি। তখন থেকেই এলাকার লোকজনকে খালের পানি ডিঙ্গিয়েই বর্ষাকালে চলাচল করতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি নির্মাণত্রæটির কারণে ধসে পড়ার ঘটনায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব অবহেলার কারনে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধোপাছড়ির বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে খালের উপর ত্রাণ বিভাগের অর্থায়নে ৫৬ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয় ২০১৭ সালের মার্চ মাসে। বছরের প্রথম সপ্তাহে সেতুটির কাজ শুরু হওয়ার পর চারমাসের মধ্যে কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদার ২’শ ফুট লম্বা খালের দুই পাশে নিরাপত্তা দেয়াল দিয়ে মাঝখানের মাত্র ৬০ ফুট দীর্ঘ জায়গায় সেতু করাটা কোনভাবেই যুক্তিসঙ্গত হয়নি বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বর্ষার ঢলে নেমে আসা গাছের গুড়ি সেতুর পিলার ও নিরাপত্তা দেয়ালের সাথে ধাক্কা লাগার কারণেই নিরাপত্তা দেয়াল ও পিলার ভেঙে সেতুটি ধসে পড়ে। জানা যায়, ধসে পড়া সেতুটি বাস্তবায়ন করেছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার আওতায় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। গুরুত্বপুর্ণ এ সেতুটি করার জন্য প্রথমদিকে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ১শ ২০ ফুট ব্রিজের প্রাক্কলন অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা, স্থান নির্বাচন, সয়েল টেস্টসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শুরুর মুহুর্তে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের প্রস্তাবনাকে গোপনে পাশ কাটিয়ে অনেকটা তড়িঘড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে রহস্যজনকভাবে ১শ ২০ ফুট সেতুর স্থলে মাত্র ৬০ ফুট কালভার্ট সেতুর অনুমোদন করিয়ে তা নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ শেষ করে উদ্বোধনের পূর্ব মুহুর্তে পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে সেতুটি ধসে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ধোপাছড়ির জনগণের। সেতুটি ধ্বসে পড়ার সংবাদ বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামকে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ধোপাছড়ি বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে চামাছড়ি খালের উপর এ ব্রিজটি নির্মাণ হলেই সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে বান্দরবানের সাথে। পিচঢালা, সড়কসহ সমস্ত অবকাঠামো থাকার পরেও শুধুমাত্র এ ব্রিজের অভাবে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। এমনিতেই ধোপাছড়ির সাথে চন্দনাইশ সদর ৩০ কিলোমিটার পথ যেতে ৪ বার যানবাহন পরিবর্তন ও দু’বার শঙ্খ নদী পাড়ি দিতে হয়। ফলে এ এলাকার কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী ও রোগীদের পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। বর্ষাকাল হলে তো আর কথাই নেই। এ সেতুটি নির্মাণ হলে ভাড়াই চালিত মোটর সাইকেল বা টেম্পুযোগে অতিরিক্ত ভাড়ায় বান্দরবান যেতে হবেনা এ এলাকার মানুষকে। বান্দরবানের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ হওয়ার পাশাপাশি লাগব হবে এ এলাকার কয়েক হাজার লোকের।