দখলদাররাই সরিয়ে নিচ্ছেন অবৈধ স্থাপনা

35

অনেক সময় সরকারি জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় প্রশাসনকে। অভিযানে গিয়ে অনেক সময় দখলদারদের বাধার মুখে ফিরেও আসতে হয়। তবে এবার ব্যতিক্রম ঘটেছে নগরীর খাল দখলমুক্ত কার্যক্রমে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) খাল দখলমুক্ত করার অভিযান শুরুর পর থেকে দখলদাররা নিজ উদ্যোগেই সরিয়ে নিচ্ছেন স্থাপনা।
গত মঙ্গলবার থেকে খাল উদ্ধারে নামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সিডিএ। কল্পলোক আবাসিকের পাশে রাজাখালী খালে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের মাধ্যমে শুরু হয় অভিযান। প্রথমদিনেই ২৬টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করা হয় রাজাখালী খাল। পরের দিন বুধবার অভিযান পরিচালনা করা হয় নোয়াখালে। ৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নোয়াখালে অবৈধ স্থাপনা আছে ৮৬টি এবং খালের তীর বরাবর প্রস্তাবিত রাস্তায় অবৈধ স্থাপনা আছে ৮৯টি। এসব অবৈধ স্থাপনার মধ্যে বহুতল ভবনসহ একাধিক সেমিপাকা ঘর রয়েছে। নোয়াখালে তিনদিন অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। একপাশ থেকে শুরু হওয়া অভিযানের প্রভাব পড়েছে অপর পাশেও। দখলদাররা নিজেদের জিনিসপত্র বাঁচাতে নিজেরাই এখন স্থপনা সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। শুধু নোয়াখাল নয়, বামনশাহী খালসহ অন্যান্য খালের দখলদাররাও স্থাপনার জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল মো. নাসির উদ্দিন বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের আগে আমরা একটা মার্কিং (চিহ্নিত) করি। তখন বুঝা যায় যে, কোন কোন স্থাপনা এরমধ্যে পড়েছে। মার্কিং করা এসব স্থাপনা এখন দখলদাররা নিজেরাই সরিয়ে নিচ্ছেন। নোয়াখালে এমন অনেকেই তাদের স্থাপনা খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। এটা আমাদের কাজের গতি আনবে।
কি কারণে সরিয়ে নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা ভাঙার সময় মেশিনের মাধ্যমে সবকিছু গুড়িয়ে দিই। এতে স্থাপনার জিনিসপত্রগুলো আর ব্যবহার উপযোগী থাকে না। নিজেরা সেগুলো খুলে নিলে পরবর্তীতে ব্যবহার করতে পারবে। তারা জানেন যে তাদের স্থাপনা রক্ষা পাবে না। তবে যদি সেটা নিজেরা খুলে নেয়, তাহলে পুনরায় ব্যবহার করতে পারবে। এ কারণে নিজ থেকেই স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিচ্ছেন সবাই। বামনশাহী খালেও মার্কিং করা হয়েছে। স্থাপনাগুলো নিজেরা সরিয়ে না নিলে আমরা অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করবো।
জানা যায়, নগরীর ৫৭টি খালের মধ্যে ১৩টি খালের ওপর ১৫৭৬টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে উচ্ছেদে নেমেছে সিডিএ। অবৈধ দখলে থাকা এসব স্থাপনার মধ্যে সেমিপাকা ঘর থেকে শুরু করে বহুতল ভবনও রয়েছে। প্রধান ১৩টি খালের মধ্যে খন্দকিয়া খালে অবৈধ স্থাপনা আছে ৪৫টি, চাক্তাই খালে ১৮০টি, মরিয়মবিবি খালে ২৬টি, নোয়াখালে ৮৬টি, রাজখালী-২ খালে ১১টি, টেকপাড়া খালে ৩৯টি, বির্জা খালে ৬১টি, গয়নাছড়া খালে ২১০টি, ত্রিপুরা খালে ৫৭টি, মহেশখালী খালে ২৬টি, বামনশাহী খালে ২৮টি, ডেমখালী খালে ৭২টি ও মহেশখালে ২৫টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে।
সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আহমেদ মাঈনুদ্দিন বলেন, উচ্ছেদ অভিযান শুরুর আগে আমরা সতর্ক করে দিচ্ছি। দখলদাররা যাতে তাদের জিনিসপত্র নিতে পারে। এরপর আমরা অভিযানে সব কিছু ভেঙে দিই।
তিনি বলেন, সতর্ক করার পর অনেকে নিজ উদ্যোগে স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছে। আজ (রবিবার) নোয়াখালের ৫০/৬০টি স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। আমরা উচ্ছেদ করলে তারা (দখলদাররা) কোনো জিনিসপত্র বের করার সুযোগ পায় না। ফলে এখন নিজ থেকেই সব কিছু সরিয়ে নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএ’র সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরপর সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর খালের উভয় পাশে রিটেইনিং ওয়াল, রাস্তা নির্মাণ ও নিচু ব্রিজগুলো ভেঙে উঁচু করার কাজ শুরু করে। পাশাপাশি খাল থেকে ময়লা পরিষ্কার কার্যক্রমও শুরু হয়। ডিপিপি অনুযায়ী গৃহীত এ মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০১৮ সালে ৩৬ খালের মাটি অপসারণসহ ৩০০ কিলোমিটার নতুন ড্রেন নির্মাণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।