দক্ষিণ চট্টগ্রামে পাল্টে গেছে নির্বাচনী হিসেব

49

দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও লোহাগাড়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেতে জোরালো দাবিদার ছিলেন মো. আবদুল জব্বার চৌধুরী ও জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল। এলডিপির সাবেক এই দুই নেতা দল পাল্টে আওয়ামী লীগ ঘরানার হয়েই কৌশলে মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। এই দুই নেতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল জেলা আওয়ামী লীগ। দল পাল্টানো এই দুই নেতাকে একহাত নেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। যে কারণে প্রার্থী বিবেচনায় দুইজনের কারো ভাগ্যেই জুটেনি নৌকা। ‘হাইব্রিড’ এই দুই নেতা মনোনয়ন না পাওয়ায় তৃণমূলে স্বস্তি ফিরেছে। পাঁচটি উপজেলায় মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়ার কারণে নেতাদের মধ্যে বিভক্তি বেড়ে যাওয়ায় পাল্টে যাচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের নির্বাচনী হিসেব। অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জানা গেছে, পৌরসভা নির্বাচনে নিজদলের প্রার্থীর বিরোধিতা করায় চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল জব্বার চৌধুরীকে এলডিপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন জব্বার। সেদিন উপজেলার গাছবাড়িয়া নিত্যনন্দ গৌরিচন্দ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে উপস্থিত হন। লোহাগাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও এলডিপি সভাপতি জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল চলতি মাসের ১৫ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এর আগে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী না দেয়ায় দলীয় নেতা-কর্মীরা বাবুলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল জামায়াত প্রার্থী ফরিদ উদ্দিন খান।
ধারণা করা হয়েছিল, এবারো উপজেলা নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাবেন। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও তার নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই দুই নেতাকে মনোনয়ন না দিয়ে দুইটি উপজেলাতেই ত্যাগী ও যোগ্য দুই নেতাকে মনোনয়ন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লোহাগাড়ায় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী ও চন্দনাইশে মনোনয়ন পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি একেএম নাজিম উদ্দিন। এ দুইজনের মনোনয়ন লাভের সাথে সাথে পাল্টে গেছে এই দুই উপজেলার নির্বাচনী হিসেব।
চন্দনাইশের উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল জব্বার চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, আমি এখনো নির্বাচন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে আমি যেহেতু আওয়ামী লীগ করি নির্বাচন না করলেও দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবো।
লোহাগাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল পূর্বদেশকে বলেন, ‘নির্বাচন করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমি অনেকদিন আগে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে আমাকে সংবর্ধনা দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। তখনই আমি আওয়ামী লীগ যোগ দিয়েছি। আমি যদি নির্বাচন না করি তাহলে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবো। নির্বাচন করার সম্ভাবনাও আছে এখনো’।
অন্যদিকে বাঁশখালীতে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত সুলতান উল কবির চৌধুরীর বড় ছেলে চৌধুরী মো. গালিব সাদলী। সেখানে মনোনয়ন বঞ্চিত দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম চৌধুরী ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী নুর হোসেন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। যে কারণে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও সাধারণ ভোটাররা বিভক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বোয়ালখালীতে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম। সেখানে আরো কয়েকজন নেতা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। পটিয়ায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছেন। এ নেতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন মনোনয়ন বঞ্চিত নেতারা।