নিজস্ব প্রতিবেদক
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে নুর আহমদ সড়কে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং চট্টগ্রাম বিভাগের নেতৃবৃন্দ। এ সমাবেশে নেতারা যা বললেন-
নজরুল ইসলাম খান : সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে চাইলে আওয়ামী লীগ মানুষকে কষ্ট দিত না। তারা জনগণের ভোট চায় না। তারা চায় আবারও ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আসতে। ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আগামী ১১ ফেব্রæয়ারি দেশের সকল ইউনিয়নে বিএনপি পদযাত্রা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সারাদেশে চলছে। সেটা আরো বেগবান করতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এ অবৈধ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। আর সে পতনের অংশীদার আমরা হব। আগামী শনিবার বাংলাদেশের সকল ইউনিয়নে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। আমরা কর্মসূচি দিলেই এ সরকার বাধা দেয়। আমরা দেখতে চাই সারা বাংলাদেশের কয়টা ইউনিয়নে তারা বাধা দিতে পারে। সব ইউনিয়নের সকল নারী-পুরুষ পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করবে।
নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা একবার বাকশালের গোরস্থানের উপর জিয়াউর রহমানের হাত ধরে গণতন্ত্র পেয়েছিলাম। পরে স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে খালেদা জিয়ার হাত ধরে গণতন্ত্র পেয়েছি। এবার আমরা তারেক জিয়ার হাত ধরে এ সরকারের হাত থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব। বিএনপি বারবার বিজয়ী হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে। এবারও করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যারা হালাল উপার্জন করে সেই শ্রমিক, কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ তারা আজ চলতে পারছে না। প্রতিদিন জিনিসের দাম বাড়ছে। এ সরকারের তাতে কোনো পরোয়া নেই। তিন সপ্তাহের মধ্যে দুইবার জ্বালানির দাম বেড়েছে। যদি এ সরকার জনগণের পরোয়া করত তাহলে এটা তারা করতে পারত না।
আবদুল্লাহ আল নোমান : প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নিজেরা সংবিধানকে লঙ্ঘন করে আবার সেটা প্রয়োগের কথা বলছে। দেশের আজকের চলমান পরিস্থিতিতে এ সরকারের পতনের আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তাই এ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন আরো গতিশীল করতে হবে। আমরা একটা মহাযুদ্ধের মধ্যে আছি। এ যুদ্ধে আমাদের জিততে হবে। এ যুদ্ধ গণতন্ত্রের লড়াইয়ের যুদ্ধ, মানুষের ভোটের যুদ্ধ। আমাদের দেশের মানুষ আজ না খেয়ে আছে। দেশের মানুষের অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা নেই।
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, সরকার দেশে যে কতৃত্ববাদী, নৈরাজ্যবাদী প্রশাসনসহ যাদের সৃষ্টি করেছে, এ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আমরা শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য লড়াই করছি না। আমাদের লড়াই হচ্ছে জনগণের জন্য। জনগণের মাধ্যেমে রাষ্ট্র ক্ষমতা আবার হাতে নিতে হবে। জনগণের দ্বার গণতন্ত্র রক্ষা হবে।
মীর মো. নাছির উদ্দিন : বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেন তারা মিছিল করলে আমরা নাকি পালানোর জায়গা পাবো না। আজ এসে তিনি দেখে যাক এই জনসমুদ্র। আমরা যদি ঘোষণা দিই আজ থেকে বাংলাদেশ বন্ধ তাহলে আপনাদের সে ক্ষমতা নেই আবার চালু করার। তারা নাকি স্মার্ট বাংলাদেশ করবে! দুর্নীতিবাজদের মুখে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা মানায় না। বাংলাদেশের গণতন্ত্র আবার ফিরিয়ে আনতে আরেকটা গণ অভ্যুত্থান ঘটাতে হবে। সে ডাক আসবে। তখন সব অচল হয়ে যাবে।
জয়নাল আবেদিন ফারুক : বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, গাছের ফল যখন পচে যায় তখন সেটা ঝরে পড়ে। আওয়ামী লীগও আজ পচে গেছে। মানুষের হৃদয়ে তাদের আর জায়গা নেই। জনগণ আর তাদের চায় না। ক্ষমতায় আর আপনারা যেতে পারবেন না। ভোটারবিহীন সরকার দেশ পরিচালনা করতে পারে না। আমরা আন্দোলনে নেমেছি। সে আন্দোলন বানচাল করতে অনেক পাঁয়তারা আপনারা করছেন। সেটা আর আমরা করতে দিব না।
আবুল খায়ের ভূঁইয়া : চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল খায়ের ভ‚ঁইয়া বলেন, আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। বিএনপি’র ১০ দফা দাবির প্রতি ভ্রুক্ষেপ করছে না। তারা আবারো কালো টাকা দিয়ে আরেকটা নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
ভিপি জয়নাল : চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ভিপি বলেন, আমাদের আন্দোলন হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সরকার বলছে ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু তাদের সেই আশা পুরণ হবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
গোলাম আকবর খোন্দকার : উত্তর জেলা বিএনপির আহব্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, এই সমাবেশের আওয়াজ হচ্ছে আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতে হবে। বর্তমান সরকার জনগণকে ভয় পায়। ভয় পায় বলেই মামলা-হামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তারা শুধু জনগণকে নয়, হিরো আলমকেও ভয় পায়।
ফজলুল হক : চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক বলেন, ১৯৭১ সালে রক্ত দিয়েছি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এখন সে গণতন্ত্র আর নেই। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, দাবি আমাদের একটাই, তা হলো শেখ হাসিনার পদত্যাগ। কয়েকদিন আগে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, অনির্বাচিত সরকার আসলে অশুদ্ধ হবে। এখন তিনি নিজেইতো অনির্বাচিত। তাকে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ চায় না। অবিলম্বে ক্ষমতা না ছাড়লে তাদেরকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
মাহববুবের রহমান শামীম : বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আজকে চট্টগ্রাম মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এই সমাবেশের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতনের ঘন্টা বেজে গেছে। জনগণ রাস্তায় নেমেছে, ভালোয় ভালোয় বিদায় নেন, পালাবার পথ পাবেন না। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
ডা. শাহাদাত হোসেন : সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহŸায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আজকের এই বিশাল সমাবেশ প্রমাণ করেছে চট্টগ্রাম বিএনপির ঘাঁটি। এই সমাবেশ থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী সহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি করছি।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ানের পরিচালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের স্ত্রী হাসনা মওদুদ। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, মৎস্যজীবী সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল, উপজাতি সম্পাদক মা ম্যা চিং, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, হারুনুর রশীদ ভিপি, সহ কর্মসংস্থান সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, সহ গ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমদ, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, সহ সমাজ কল্যাণ সম্পাদক শাহাবুদ্দীন সাবু, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, উদয় কুসুম বড়ুয়া, কাজী মুফিজুর রহমান, মশিউর রহমান বিপ্লব, সাচিং গ্রæ জেরী, ফেনী জেলা বিএনপির আহŸায়ক শেখ ফরিদ বাহার, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দিপেন তালুকদার, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. আব্দুর রহমান, উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহŸায়ক এম এ হালিম, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. শামীম আরা স্বপ্না, ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, বান্দরবন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আফসার, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য এনামুল হক এনাম প্রমুখ।
