ডিসিদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

14

 

গত মঙ্গলবার বহুল প্রতীক্ষিত দেশের জেলা প্রশাসকদের সম্মেলন শুরু হয় রাজধানী ঢাকায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়াল কনফারেন্স-এ যুক্ত হয়ে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। একদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের নতুন উল্লম্ফন মোকাবেলার সরকারের নানা পরিকল্পনা অপরদিকে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন এবং সরকারের সেবা তৃণমূলে পৌঁছিয়ে দেয়ার নির্ভরতা যেসব তৃণমূল প্রশাসনের উপর তাদের প্রধান চালক জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, কৌশল ও আন্তরিকতার উপর সরকারের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা জেলা পর্যায়ে সঠিক বাস্তবায়নে কার্যকর ভুমিকা রাখে। এছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে সম্পর্ক ও সমন্বয় করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাÐ, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্বও তাদের উপর অনেকাংশ বর্তায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার জনকল্যাণে যেসব কর্মসূচি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে তা সঠিক বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকদের উৎসাহ এবং তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের ভাবমুর্তি বৃদ্ধিতে জেলা প্রশাসকদের করণীয় ঠিক করতে এ জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে। নানা কারণে এবারের সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য থেকে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনের গুরুত সম্যক অনুধাবন করা যায়। সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে যাওয়ায় দায়িত্বও বেড়ে গেছে। এজন্য সেবার মনোভাব নিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থেকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। তিনি বলেন, সরকারি সেবা নিতে সাধারণ মানুষ যেন কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ডিসিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, সব ধরনের ভয়-ভীতি ও প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে মানুষের কল্যাণে আইনানুগ দায়িত্ব পালন করতে হবে। জাতির পিতার চিঠি যার হাতে তিনি ভিক্ষা করে খাবেন- এটা যেন না হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারগুলোর যতœ নেওয়ার পাশাপাশি তাদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে সবাই খেয়াল রাখবেন- কারণ আমি আর দেখতে চাই না কোনো শহিদ পরিবার ভিক্ষা করুক। আমরা যত কাজই করি- এ কাজটা সব থেকে আগে করতে হবে। একজন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ভিক্ষা করবে-এটা আমাদের জন্য মোটেই সম্মানজনক নয়।
স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যম করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প পরিহারের ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। সুশাসন সংহতকরণের উদ্দেশ্যে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে ডিসিদের আরও আন্তরিকভাবে কাজ করার আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন, অনগ্রসর শ্রেণির অনেককে পুনর্বাসিত করা হয়েছে কিন্তু একটি মানুষও যাতে গৃহহীন না থাকে সেটার অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের যেসব প্রকল্প চলমান আছে বা যেসব প্রকল্প বিভিন্ন মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেছে সেগুলো যথাযথ মানসম্পন্ন হচ্ছে কিনা এবং অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত এবং নজরদারির ব্যবস্থা আপনাদের অবশ্যই নিতে হবে। জনগণের কাছে জনপ্রতিনিধিদের যেসব প্রতিশ্রæতি রয়েছে সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে জনসেবা ও জনকল্যাণমূলক সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। এতে করে সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। বর্তমান সরকার দক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত ও সেবামুখী জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মাঠ পর্যায়ে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, সিটিজেনস চার্টার ইত্যাদির বাস্তবায়ন জোরদার করারও আহবান জানান। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকদের সক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সবার আন্তরিক প্রচেষ্টাতেই আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে সেই লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব। সম্মেলনে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং সরকারি সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে ডিসিদের প্রতি তিনি ২৪ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর ২৪ দফা নির্দেশনা ও বক্তব্য সময়োপযোগী এবং বাস্তবসম্মত। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে শহীদ পরিবারও মুক্তিযোদ্ধারা ভিক্ষা করে জীবন নির্বাহ করবে- তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। অনেক জায়গায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা চরমভাবে অবহেলিত। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে সনদ থেকেও বঞ্চিত। জেলা প্রশাসকদেও উচিৎ এ বিষয়ে মনোযোগ দেয়া। বিশেষ করে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকরা ব্যাপক ভ‚মিকা রাখতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে তাঁরা অনুপ্রাণিত হবেন এবং আন্তরিকতার সাথে প্রদত্ত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবেন-এমন প্রত্যাশা আমাদের।