টেকনাফে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত

57

টেকনাফ উপজেলায় বিজিবির সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রোহিঙ্গাসহ দুই ইয়াবা পাচারকারী নিহত হয়েছেন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে এক লাখ পিস ইয়াবা, দেশীয় দুটি এলজি, তিন রাউন্ড তাজা কার্তুজ, দুটি লোহার কিরিচ ও একটি কাঠের নৌকা উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে টেকনাফের ২ বিজিবি ব্যাটলিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফয়সাল হাসান খান বলেন, ‘কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় চালান আসছে। এখনও অনেকজন শীর্ষ ইয়াবা কারবারী অধরা রয়ে গেছে। তারা বেশি লাভের আশায় ঈদকে সামনে রেখে ইয়াবার বড় চালান আনছে। ইয়াবা ব্যবসা এখনও বন্ধ হয়নি।
গতকাল বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে টেকনাফে ২ বিজিবি ব্যাটলিয়ান সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
ফয়সাল হাসান খান বলেন, সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচার বন্ধে বিজিবি তৎপর রয়েছে। এরই সূত্র ধরে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) গভীর রাতে খবর পাওয়া যায়, কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ী মিয়ানমার থেকে ইয়াবা বড় চালান নিয়ে টেকনাফের নাফনদী সংলগ্ন লেদা খাল এলাকায় আসছে। এই খবরে বিজিবির একটি বিশেষ টিম সেখানে অভিযানে যায়। এসময় বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে ইয়াবা পাচারকারীরা গুলি চালায়। বিজিবিও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে মাদক পাচারকারীরা গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়। পরে ওই এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ইয়াবা ও অস্ত্রসহ গুলিবিদ্ধ দুই জনকে উদ্ধার করে টেকনাফ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে তাদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।’
নিহত ইয়াবা পাচারকারীরা হলেন, টেকনাফের হোয়াইক্যং নয়াপাড়া মহেষখালীয়া পাড়া এলাকার আবুল শামার ছেলে মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান (২৩) ও উখিয়া উপজেলার বালুখালী ১২ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের ই-বøকের মোহাম্মদ ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ কামাল(২০)। এ ঘটনায় বিজিবির সিপাহী মফিজুর রহমান, উজ্জল হোসেন ও ইমরান হোসেন আহত হয়েছেন।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের মোহাম্মদ জাকারিয়া মাহামুদ বলেন, বিজিবির সদস্যরা গুলিবিদ্ধ দুই জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলির চিহ্ন ছিল। এছাড়া আহত বিজিবি সদস্যদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
লে. কর্নেল ফয়সাল হাসান খান আরও জানান, ইয়াবা পাচার রোধে স্থলপথে বিজিবি চেকপোস্টগুলোতে ডগস্কোয়াড নিয়ে অভিযান চলছে। ইয়াবা চালান ধরাও পড়ছে। কোনোভাবেই ইয়াবা পাচার করতে দেওয়া হবে না।
এদিকে বিজিবি, র‌্যাব-১৫, ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফরের হিসাবে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৪৮ লাখ ২১ হাজার ৫৫১ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় ৩১০ মাদক পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে শুধু টেকনাফেই ১১৫ জন মারা গেছেন।
র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র‌্যাব-১৫) টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট মির্জা শাহেদ মাহতাব বলেন, ইয়াবা নির্মূলে র‌্যাব সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে যাতে ইয়াবার বড় চালান ঢুকতে না সেবিষয়ে তৎপর রয়েছি।
গত বছরের ৪ মে থেকে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এরপর র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ ও এলাকায় মাদক ও মানব পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের ঘটনায় কক্সবাজার জেলায় ১৩৮ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুই নারীসহ ২৮ রোহিঙ্গাও রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ১০২ জন মাদককারবারী আত্মসমর্পণ করেছেন।