টিকা আসছে রাশিয়া ও চীন থেকে স্বদেশে উৎপাদনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়

19

টিকা নিয়ে আর কেউ টিপ্পনি কাটতে পারবেনা। পাছে লোকে যাই বলুক সেটি বড় কথা নয়, সরকার দেশ ও জাতির কল্যাণে যথাসময়ে সঠিক কাজটি করতে পারলা কিনা সেটাই বড় কথা। টিকা নিয়ে যখন বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশ অন্ধকারে ছিল, তখন বাংলাদেশ সরকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অগ্রিম টাকা দিয়ে ৩ কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করেছিল। বাংলাদেশ সরকারের এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছিলেন স্বয়ং বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। চুক্তি অনুযায়ী ৭০ লাখ ডোজ টিকা গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সেরাম থেকে পেয়েছে, যা দেশের জনগণকে প্রয়োগ করা হচ্ছে। বাকি ২ কোটি ৩০ লাখ ডোজ এখনও পাওয়ার আশা করা হলেও ভারতের করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ রূপ ধারণ করার কারণে সরকার কর্তৃক টিকা রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হয়, ফলে বাকি টিকা এখনই পাওয়া নিয়ে অনিশ্চিয়তায় পড়ে বাংলাদেশ। এ অনিশ্চয়তা কাটাতে সরকার ভারত, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে টিকা নিয়ে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে। অল্প সময়ে এই তৎপরতার সুফল বাংলাদেশ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গণমাধ্যম সূত্র জানায়, রাশিয়ার টিকা ‘স্পুটনিক ভি’ জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, এর একদিন পর মন্ত্রী পরিষদের অর্থনৈতিক বিষযক কমিটি টিকাটি কেনা ও দেশে উৎপাদনের অনুমোদন দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মে মাসের মধ্যেই ৪০ লাখ ডোজ বাংলাদেশে আসবে। এই টিকা আমদানি করা হচ্ছে সরাসরি সরকারিভাবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ‘স্পুটনিক ভি’ টিকার কার্যকারিতা ৯১ শতাংশ এবং এটি ২ থেকে ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে। বর্তমানে ৬০টি দেশের জনগণের ওপর এ টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে। এছাড়া রাশিয়া ছাড়াও চীন, যুক্তরাষ্ট ও যুক্তরাজ্য থেকেও টিকা আনার জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার, মডার্না, জনসন অ্যান্ড জনসন, চীনের সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক এই ছয়টি টিকা জরুরি অনুমোদন দিতে সরকারের প্রতি গত বৃহস্পতিবার সুপারিশ করেছে দেশে টিকা অনুমোদন সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক গ্রুপ ‘নাইট্যাগ’। এরই মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী অবস্থান থেকে টিকাগুলো জরুরি আমদানি ও ব্যবহারে নীতিগত সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। এখন এই টিকাগুলো আমদানি বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। অন্যদিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ‘কোভিশিল্ড’ দিতে না পেরে এ দেশেই যৌথ উদ্যোগে ভারতীয় বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেক উদ্ভাবিত করোনার টিকা ‘কোভ্যাক্সিন’ উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে। উপরোক্ত সব প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি রয়েছে বলে জানা যায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন চীন থেকে ৫ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসাবে পাওয়া যাবে, পাশাপাশি সেখান থেকে টিকা কেনাও হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেও উপহার ও বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই টিকা পাওয়া যাবে। ওদিকে ভারতে টিকার ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্তে¡ও ৩০ লাখ ডোজ টিকা জরুরি ভিত্তিতে পাওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে কূটনৈতিক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। টিকা নিয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, দেশেই টিকা উৎপাদন করার বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। দেশে ইনসেপটা, পপুলার ও হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল টিকা উৎপাদন করে থাকে। এসব কোম্পানির মাধ্যমে রাশিয়ার ‘স্পুটনিক ভি’ উৎপাদন করা যায় কি না, সেই সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ইনসেপটা রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলেছে। আশা করা হচ্ছে, দেশেই এই টিকা উৎপাদন সম্ভব হবে। সবটা মিলিয়ে বলা যেতে পারে, টিকা নিয়ে বর্তমানে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা কিছুদিনের মধ্যেই কেটে যাবে। বলা যেতে পারে, নতুন করে টিকাপ্রাপ্তির জন্য যেভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে এবং টিকা পাওয়ার কিছু সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাও হয়েছে, তাতে জনগণের হতাশা কেটে যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হলো বেশির ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা সরবরাহ না করায় টিকা কর্মসূচিতে যে ছন্দপতন ঘটেছে, তাতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। টিকা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকার ইতোপূর্বে যে সাফল্য দেখিয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় টিকার ঘাটতি পূরণে সরকার আবারও সফল হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।