ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক যেন মরণফাঁদ

32

মো. নুরুল করিম আরমান, লামা

ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বান্দরবান জেলার ফাঁসিয়াখালী-লামা-আলীকদম সড়ক। আরাকান সড়কের চকরিয়া উপজেলাস্থ হাঁসের দিঘী থেকে পূর্ব দিকে ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির অবস্থান। বহি:উপজেলার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে লামা, আলীকদম ও চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের জনসাধারণ সড়কটি ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে। পাহাড়ের কোল জুড়ে সর্পিল গতিতে এঁকে-বেঁকে তৈরি সড়কটি ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এ সড়কটির বাঁকে বাঁকে নতুন চালকদের জন্য যেন মৃত্যু ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুহুর্তের অসর্তকতায় কয়েকশত ফুট গভীর পাহাড়ি খাদে পড়ে জান-মাল বিপন্ন হচ্ছে বলে জানান এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ। প্রতিবছরই সড়কটি কম বেশি মেরামত হলেও অভিযোগ রয়েছে বাস্তবমুখি পরিকল্পনা ও প্রাক্কলন তৈরির অভাবে এসকল মেরামত টেকসই হচ্ছে না। তাই বাস্তবমুখি পরিকল্পনায় প্রাক্কলন তৈরির মাধ্যমে সড়কসহ বাঁকগুলো প্রশস্ত করণের দাবি তুলেছেন যানবাহন চালক ও স্থানীয় সচেতন মহল। সরেজমিন পরিদর্শনকালে সড়কের হাঁসের দিঘী থেকে লামা পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার এলাকায় ২০টির অধিক ভাঙন কবলিত এলাকা দেখা যায়। এছাড়া অসংখ্য স্থানে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। ইতোমধ্যে এসকল ভাঙন কবলিত স্থানে আলীকদম সেনা জোনের পক্ষ থেকে সতর্কতামুলক সাইবোর্ড লাগানো হয়েছে। আবার দু’পাশ থেকে মাটি ধসে পড়ে বেশ কয়েকটি স্থান সরো হয়ে গেছে। জানা যায়, গত তিন বছরে সড়কের ভাঙন কবলিত এলাকা ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে ছোট-বড় দেড় শতাধিক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। এসকল দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৬০ জন নিহত এবং কয়েকশত যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছে। গত এক মাস আগে সড়কের পশ্চিম লাইনঝিরি এলাকায় পাহাড়ি ঢালু পথে বালু বোঝাই ট্রাক একটি মোটরসাইকেল ও মাহেন্দ্রকে চাপা দিলে একই পরিবারের দুই নারীসহ তিন জন নিহত এবং এক শিশুসহ ৪ জন আহত হয়। সব শেষ গত ৬ অক্টোবর সড়কের মাদানী নগর বাঁকে একটি কাভার্ডভ্যান ও যাত্রীবাহি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাস চালক নিহত ও ৩৪ যাত্রী গুরুতর আহত হন। এছাড়া গত কয়েক বছর আগে নেটওয়ার্ক কোম্পানী গ্রামীণ টাওয়ার নির্মানের জন্য ট্রাক বোঝাই করে মালামাল নিয়ে লামা উপজেলায় যাওয়ার পথে ইয়াংছা মোডে উল্টে যায়। এতে ৯ শ্রমিক নিহত হয়। তবে এ বিষয়ে সড়কে চলাচলকারী বাস চালক নুর মোহাম্মদ বলেন, লামা পাহাড়ি এলাকা ও রাস্তা উঁচু-নিচু। যার কারণে বাহিরের ড্রাইভাররা এ সড়কে গাড়ি চালাতে দক্ষ না। বাহিরের গাড়ি উপজেলায় ঢুকলে চকরিয়া থেকে স্থানীয় ড্রাইভার দিয়ে গাড়ি চালানো নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ইদানিং এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। যার কারণে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। আরও জানা যায়, ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের মধ্যে হাঁসের দিঘী থেকে লামা অংশের ২৩ কিলোমিটারের মধ্যেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সড়কের এ অংশের পশ্চিম লাইনঝিরি, মাদানী নগর, মিরিঞ্জা, নয় মাইল, বদুঝরি, ইয়াছা মোড়, ছয় মাইলের মাথা এসকল এলাকায় রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। বাঁক শেষে কতটুকু পাহাড়ি ঢালু রাস্তা হঠাৎ করে সে বিষয়ে আন্দাজ করতে পারেনা চালকরা। যার ফলে পাহাড়ি ঢালুতে সড়কের বাঁকগুলো সড়কের নতুন চালকদের জন্য এক রকম মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়। সড়কে চলাচলকারী মো. ইব্রাহিম, মো. জসিম উদ্দিন, রাশেদা বেগম, উম্মে হাবিবা, জাহেদুল ইসলামসহ অনেকে জানান, সড়কটির বিভিন্ন স্থানের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক গুলোতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েই এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। তাই বাস্তবমুখি পরিকল্পনায় প্রাক্কলন তৈরির মাধ্যমে সড়কসহ বাঁকগুলো প্রশস্ত করণের দাবি জানান তারা। লামা-চকরিয়া সড়কের পরিবহন (জীপ) মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন বলেন,বেশির ভাগ সময় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের পরে পাহাড়ি ঢালুর বিষয়টি নতুন চালকরা আন্দাজ করতে না পেরে দুর্ঘটনায় পড়েন। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো কেটে সড়ক প্রশস্ত করে দেয়ার দাবি জানান। এ বিষয়ে বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী পুনেন্দু বিকাশ চাকমা জানান, সড়ক প্রশস্ত করণের বিষয়ের একটি প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে যে সকল ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটে, সেসব স্থানে সড়কের পাশে মাটি দিয়ে উঁচু করে দেয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।