জেলা প্রশাসনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান এ উদ্যোগ অব্যাহত থাক

21

‘যেমন কথা তেমন কাজ’- নীতিবাক্যে থাকলেও কার্যে নেই; দীর্ঘদিনের এ সংস্কৃতিকে ভেঙ্গে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন এ সপ্তাহের শুরুতে উচ্ছেদ অভিযান চালান নগরীর কাজির দেউড়িস্থ আউটার স্টেডিয়ামে। শুধু তাই নয়, এ স্টেডিয়ামে গত একমাস ধরে বেশ কয়েকটি সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী সংগঠন প্রদর্শনী, মহাসমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য বুকিং দেয়ার পরও জেলা প্রশাসক সব বুকিং বাতিল কওে টাকা ফেরৎ দিয়েছেন। সেই সাথে আউটার স্টেডিয়ামকে শুধু খেলার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, স্টেডিয়ামের পূর্ব দিকে কাজির দেউড়ি মোড় থেকে নুর আহমদ সড়ক হয়ে, পশ্চিমে মূল স্টেডিয়ামের গ্যালারির পেছনজুড়ে এবং উত্তর পাশে শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ সড়ক এর পাশ ঘেঁষে যেসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে সবগুলোর উচ্ছেদ করে আউটার স্টেডিয়ামকে খেলার উপযোগী ও পরিবেশ বান্ধব করা হবে। জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান গত মাসে আউটার স্টেডিয়ামসহ সবকটি খেলার মাঠে মেলাসহ অন্যান্য কর্মসুচি বন্ধ করে তরুণদের জন্য শুধু খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হবে। ওইসময় অনেকেই এ বক্তব্যকে কথার কথা হিসেবে ধরে নিলেও সরকারের এ আমলা কথার মধ্যে তা সীমাবদ্ধ না রেখে বরং ঘোষণার পরপরই বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। এ জন্য নগরবাসীর পক্ষ থেকে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। উল্লেখ্য যে, পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতিও বটে। তিনি তার ক্ষমতাবলে এবং নগরবাসীর স্বার্থে এ মহৎ উদ্যোগটি নিয়েছেন নিঃসন্দেহে। কিন্তু অতীতে আউটার স্টেডিয়ামকে ঘিরে যেসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার নাকের ডগায়-এর দায় নেবে কে? কেন এসব নান্দনিক স্থাপনা গড়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিল-এমন সব প্রশ্নের খোলাসা হওয়াও প্রয়োজন। আমরা লক্ষ্য করে আসছি, শুধু স্টেডিয়াম এলাকা নয়, চীনের অর্থায়নে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫০ শয্যার বার্ন ইউনিট স্থাপনের প্রস্তাবিত জায়গায় আগে থেকে গড়ে ওঠা তিন শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত মেডিকেলের গোঁয়াছি বাগান এলাকায় এসব স্থাপনা উচ্ছেদে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট । এসময় অবৈধ দখলে থাকা প্রায় পাঁচ একর জায়গা উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন সহকারী কমিশনার মো. মাসুদ রানা। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখলকারীদের বারবার নোটিশ দেওয়ার পরও জায়গা ছাড়েনি। সর্বশেষ সোমবার পর্যন্ত সময়সীমা শেষ হওয়ার পর উচ্ছেদ অভিযানে নামে জেলা প্রশাসন। অভিযানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সহায়তা করে। এর আগে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনে গোঁয়াছি বাগানের এই জায়গাটি পরিদর্শন করে চীনা দল। পরিদর্শনের পর জায়গাটি উপযুক্ত এবং পছন্দ জানালেও এখানে থাকা বসতি ও স্থাপনা সরানোর বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি দেন তারা। চীনা প্রতিনিধি দলের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এখানে বৈধ কোনো স্থাপনা নেই এবং অবৈধ এসব স্থাপনা সরিয়ে ফেলার কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের এ সংক্রান্ত চিঠির পরই বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনে ওই জায়গাটি চীনের পক্ষ থেকে চ‚ড়ান্ত করা হয়। সর্বশেষ গত ২৮ ফেব্রæয়ারি পাঁচ সদস্যের একটি চীনা দল চট্টগ্রামে আসে। তারাও গোঁয়াছি বাগানের এ জায়গাটি কয়েক দফা পরিদর্শন করে বিদ্যমান স্থাপনা সরাতে তাগিদ দেন। চমেক হাসপাতালের পেছনে গোঁয়াছি বাগান এলাকায় প্রায় এক একর জায়গায় নির্মাণ হবে বার্ন ইউনিট। প্রকল্পটিতে ১৫০টি শয্যা থাকবে। তার মধ্যে ২০টি আইসিইউ, শিশুদের জন্য পাঁচটি আইসিইউ, ২৫টি এইচডিইউ ও দুটি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার থাকবে। প্রকল্পের বাজেট ধরা হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা। রোগী আনা-নেওয়ার সুবিধার জন্য তিনটি রাস্তা থাকবে। ছয়তলা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে প্রথমতলায় থাকবে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এবং ওপিডি, দ্বিতীয়তলায় তিনটি ওটি (অপারেশন থিয়েটার) এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), তৃতীয়তলায় পুরোটা হাই ডিপেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), চতুর্থ এবং পঞ্চমতলায় ওয়ার্ড, ষষ্ঠতলায় ওয়ার্ড ও অফিস। আমরা মনে করি জেলা প্রশাসনের এ ধারাবাহিক উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখা জরুরি। এ চট্টগ্রাম যে নদীর তীরে অবস্থিত সেই কর্ণফুলীর বিশাল তীর এমনকি নদী ভরাট কওে অবৈধ দখল ও স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি এ নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করার। সর্বশেষ সর্বোচ্চ আদালত থেকে নদীর তীরে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা দেযা হয়েছিল। ২০২১ সালে কিছুটা উচ্ছেদ অভিযান চললেও পরে অদৃশ্য কারণে তা থেমে যায়। সম্প্রতি কর্নফুলী নদী রক্ষা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংগঠন-সংস্থা আন্দোলনের অংশহিসেবে নদীতে ৩দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে সম্পূর্ণ ওযাকিবহাল। সম্প্রতি যেসব উচ্ছেদ অভিযান চলছে-এর ধারাবাহিকতায় কর্ণফুলী নদী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে দেশের অর্থনীতির প্রধান প্রবাহ কর্ণফুলীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবে। আমরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগের সফলতা কামনা করি।