জাতীয় শোকদিবস

26

নুসরাত সুলতানা

১৫ আগস্ট আমাদের জাতীয় জীবনে একটি কলঙ্কময় দিন। আমরা বাঙালি জাতি এ দিবসটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করি। ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। আজকের এই দিনে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সাথে নিহত হওয়া পরিবারের সকল সদস্যদের। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে, অনেক ত্যাগ ও কষ্টের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি বহু আকাঙ্খিত স্বাধীনতা, পেয়েছি আমাদের নিজস্ব পতাকা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশে যখন বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠনকাজে, বিধ্বস্ত অর্থব্যবস্থার পুনর্গঠনে, প্রশাসনিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃনির্মাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করে জলে-স্থলে-আকাশে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চেয়ে ছিলেন ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর নিজ বাসভবনে সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্চাভিলাষী সদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। সেদিনই ঘাতকদল একই সাথে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা, বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, পুত্র শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তাঁর কন্যা বেবী সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, সুকান্ত আব্দুল­াহ বাবু, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত¡া স্ত্রী আরজু মনি, বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ সহ ১৬ জনকে হত্যার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার সেই স্বপ্ন পূরণে বাধাগ্রস্ত করে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দেয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হবার পর দেশে সামরিক শাসন জারি হয়। গণতন্ত্রকে হত্যা করে জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। শুরু হয় হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। কেড়ে নেয়া হয় জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার। যে মানুষটি নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে; দেশের জন্য, দুঃখী মানুষের জন্য জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন কারাগারে, পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন রং এঁকে সৃষ্টি করে গেছেন বাংলাদেশের অস্তিত্ব, ঘাতক দল সে মহামানুষটিকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করে নিশ্চিহ্ন করে দিলো দুনিয়ার বুক থেকে। কিন্তু আমরা জানি তিনি চির অমর হয়ে থাকবেন বাঙালির হৃদয়ে। তাইতো বারে বারে আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়;

শোনো একটি মুজিবের কন্ঠ থেকে,
লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি- প্রতিধ্বনি
আকাশে বাতাসে উঠে রণি
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ…..