জসনে জুলুছ আল্লামা তৈয়ব শাহ থেকে সাবির শাহ

232

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। এটি সমগ্র মুসলিম বিশ্বে স্বীকৃত, হাজার বছরের ঐতিহ্যমÐিত একটি অনন্য দিন। আরব লীগের অন্তর্ভুক্ত বাইশটি দেশের অন্তত একুশটি দেশে এ দিবসটি সরকারিভাবে উদ্যাপন করা হয়। মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশেও এটি বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদ্যাপর করা হয়।
এ দিবসে ইয়েমেন ও মরক্কোতে নানা আয়োজন ছাড়াও, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারাবন্দীকে মুক্তি দানের রেওয়াজ আছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাক, সিরিয়া, তুরস্ক ও মিশর, এশিয়ার মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ভারতে এদিন উপলক্ষে জসনে জুলুছসহ (বর্ণাঢ্য মিছিল) বড় পরিসরে মিলাদুন্নবী (সা.) মাহফিল হয়। এছাড়া কোন কোন দেশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনসহ শ্রমিক কর্মচারীদের বোনাস প্রদান করে। ইউরোপ, আফ্রিকায়ও উদ্যাপন হয় এ দিবস।
বাংলাদেশ সরকার এ বছরের ১৫ ফেব্রæয়ারি এক গেজেট প্রকাশ করে। তাতে পাঁচটি জাতীয় দিবসে জাতীয় পতাকা উড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এর মধ্যে সর্বপ্রথমে ঈদে মীলাদুন্নবী (দ.) দিবসটি প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে এ যাবৎ সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠান জসনে জুলুছ আয়োজন করে আসছে আনজুমান-এ রাহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট। জসনে জুলুছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নামে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটি ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম নগরীর কোরবানীগঞ্জ বলুয়ারদীঘি খানকায়ে কাদেরিয়া তৈয়বিয়া থেকে শুরু হয়।
এ বিষয়ে আঞ্জুমান-এ রাহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’র সিনিয়র সহ সভাপতি মোহাম্মদ মহসিন জানান, বাংলাদেশে জসনে জুলুছের প্রবর্তক মহানবী (দ.)-এর ৩৯তম অধস্তন বংশধর আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (র)। ১৯৭৪ সালে তাঁর নির্দেশনা অনুসারে চট্টগ্রামের বলুয়ারদীঘি পাড়স্থ খানকাহ এ কাদেরিয়া থেকে আনজুমানের তৎকালীন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নূর মোহাম্মদ আল কাদেরী (র.) নেতৃত্বে দেশের প্রথম জসনে জুলুছ অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৭৬ সালে আল্লামা তৈয়ব শাহ (র.) বাংলাদেশে আসেন এবং জুলুছের নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ বছর তাঁর নেতৃত্বেই জুলুছ চলে। ১৯৮৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩২ বছর আল্লামা তৈয়ব শাহ’র (র.) বড় সাহেবজাদা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ’র নেতৃত্বে জুলুছ চলমান থাকে। এ জুলুছে নেতৃত্ব দেবেন আল্লামা তাহের শাহ’র ছোটভাই আল্লামা সাবির শাহ (ম.জি.আ)। তিনি গত শনিবার আরব আমিরাত হয়ে সিরিকোট দরবার থেকে বাংলাদেশে আসেন। গত রবিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত জসনে জুলুছে নেতৃত্ব দেন।
গাউসিয়া কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এড. মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার জানান, সুদীর্ঘ সময়ে জুলুছের ব্যাপ্তি বেড়েছে। লোক সমাগমও বেড়েছে। ১৯৭৪ সালে মাত্র হাজারখানেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান নিয়ে শুরু হওয়া জুলুছ ৪৯ বছরের ইতিহাসে এখন চট্টগ্রামেই শুধু ৪০ লাখের অধিক মানুষের সমাবেশ ঘটে।
তিনি এ জুলুছকে বিশ্বের সবৃবৃহত্তম ধর্মীয় র‌্যালি তথা জসনে জুলুস হিসেবে বিবেচনা করে, একে জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক ‘বিশ্ব ঐতিহ্য (ড়িৎষফ যবৎরঃধমব)’ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি করেন।
বর্ণাঢ্য এ জুলুছে অংশগ্রহণকারীরা দরুদ-সালাম, না’ত-হামদ, ক্বেরাত, জিকির ইত্যাদি সহকারে শহর প্রদক্ষিণ করে এবং পরিশেষে ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে সমবেত হয়। এখানে ওয়াজ-নসীহত, মিলাদ ও মুনাজাতের মাধ্যমে জুলুছের সমাপ্তি হয়। আল্লামা সাবির শাহর নেতৃত্বে এবার জুলুছ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া থেকে যথানিয়মে শুরু হবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের পাশাপাশী রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর ও মফস্বলে বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা, দরবার, খানকাহ্, মাদ্রাসা কর্তৃক মিলাদুন্নবী (সা.) মাহফিল, আলোচনা সভা ছাড়াও জসনে জুলুছের কর্মসূচি থাকবে।