জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের বাঁধেই জলাবদ্ধতা

22

নিজস্ব প্রতিবেদক

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজে চাক্তাইখালের বিভিন্ন অংশ বাঁধ দেওয়া হয়েছে। সেই বাঁধের কারণে বাদুরতলা-কাপাসগোলা এলাকায় নালার পানি ফুলে বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছে। বাদুরতলা মাজার লেনের জঙ্গিশাহ বাড়ি এলাকায় গত পনের দিন ধরেই বাড়িঘরের উঠানে এবং নিচতলায় পানি জমে আছে। এতে স্থানীয়দের দুর্ভোগের সীমা নেই।
এদিকে গভীর নি¤œচাপ ‘জাওয়াদ’ এর প্রভাবে রবিবার ভোর থেকে বৃষ্টি হয়। হালকা বৃষ্টিপাতেও নগরের নিম্ন এলাকায় পানি জমে গেছে। জলাবদ্ধতা মেগা প্রকল্পের বাঁধের কারণে পানি আটকে পড়ে। বৃষ্টির পানির সাথে নালা ও রাস্তার ময়লা যুক্ত হয়ে সেই পানি প্রবেশ করেছে অনেক বাসাবাড়িতে। বাদুরতলা-কাপাসগোলা এলাকার অনেক ভবনের নিচতলায় প্রবেশ করেছে কাদাযুক্ত পানি।
বাদুরতলা এলাকার বাসিন্দা ও শুলকবহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ফুলতলা, বারইপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় খালের মধ্যে বাঁধ আছে। বাঁধের কারণে বৃষ্টির পানি নামতে না পেরে বাদুরতলা, জঙ্গিশাহ বাড়ি এলাকা, কাপাসগোলা, জঙ্গিশাহ মাজার গলিসহ পুরো এলাকায় ময়লা পানি বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়েছে। গত ১৫ দিন ধরে এখানকার বসবাসরত মানুষজন চরম দুর্ভোগে আছেন। স্থানীয়দের মতে, ফুলতলা, বারইয়ার পাড়াসহ এলাকাধিক এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের জন্য খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এসব বাঁধের কারণে পানি নিচের দিকে প্রবাহিত হতে না পারায় সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
কাপাসগোলা এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান বলেন, বৃষ্টির পানির সাথে পুরো এলাকায় ময়লা- আবর্জনা ছড়িয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বাসাবাড়ির নিচতলায় কাদাপানি প্রবেশ করেছে। খালে বাঁধ থাকার কারণে বৃষ্টির সময় ছাড়াও অন্যান্য সময়ে স্বাভাবিক পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। পুরো এলাকার সড়ক, বাসাবাড়ির নিচতলায় জমে থাকে কাদাপানি। এ অবস্থায় রবিবার ছোট করে খালের বাঁধ কেটে দেয়া হয়েছে। এতে পানি নামলেও রাস্তাঘাট ও প্রায় বাসাবাড়ির নিচতলা কাদায় ভরে আছে।
এ বিষয়ে জানতে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলীর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
গত বর্ষার শুরুতে খালের মধ্যে দেয়া বাঁধের কারণে অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বাঁধ সরিয়ে নিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানালে কিছু বাঁধ কেটে দেওয়া হলেও পুরোপুরি সরিয়ে নেয়া হয়নি। বর্ষা শেষে বাঁধ দিয়ে আবার কাজ শুরু করা হয়। তবে অসময়ের বৃষ্টিতে আবার সেই বাঁধের কারণে ঐ এলাকার নিম্নাঞ্চলে জলজটের দেখা মিলে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গৃহীত ৫ হাজার ৬শ ১৬ কোটি ৪৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকায় ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক চলমান মেগা প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএ’র সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। একই বছরের ২৮ এপ্রিল নালা পরিষ্কার কাজের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী। প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খাল খনন, খালের প্রশস্ততা ও গভীরতা বাড়ানো, মাটি উত্তোলন, প্রতিরোধ দেওয়াল দেয়া, ড্রেন সংস্কার ও নতুন ড্রেন তৈরি সহ বিভিন্ন কাজ করা হয়।