জটিল নিরাপত্তা জালে চসিক

43

ওয়াসিম আহমেদ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কার্যালয়ে প্রকৌশলীকে মারধরের ঘটনার পর চসিক কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জানা গেছে, প্রবেশমুখে ১০ জন সশস্ত্র আনসার সদস্য নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। একইসাথে চট্টগ্রাম বন্দরের আদলে ‘স্মার্ট কন্ট্রোলিং সিস্টেম’ প্রয়োগ করার চিন্তাভাবনাও করছেন কর্মকর্তারা। এ নিয়ে মেয়র সম্মতি দিলে সহজ প্রবেশাধিকার চর্চা করা নগরভবন বেষ্টিত হবে জটিল নিরাপত্তার জালে। তবে এমন হলে কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদার হলেও নগরপিতার সাথে নগরবাসীর দূরত্ব বাড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।
হামলার ঘটনার পর থেকে চসিক কার্যালয়ে ঠিকাদার ও লোকজনের আনাগোনা কমেছে। আগে প্রধান ফটক দিয়ে যে কেউ সহজে প্রবেশ করতে পারলেও এখন প্রবেশ করতে চাইলে নিজের পরিচয়, কোন কর্মকর্তার কাছে বা কোন দপ্তরে যাবেন, তা লিপিবদ্ধ করে যেতে হচ্ছে। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘বন্দর আর সিটি করপোরেশনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এখানে আমি জনপ্রতিনিধি, মানুষ বিভিন্ন কারণে আসবে। কর্মকর্তারা বন্দরের মত কঠোর প্রবেশাধিকার করার দাবি করেছে, এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। তবে নিরাপত্তা আর নাগরিকের সুষ্ঠু প্রবেশাধিকার দুটোই নিশ্চিত করা হবে।’
জানা গেছে, ঠিকাদারদের মারধরের শিকার চসিকের আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানী ছুটিতে রয়েছেন। তবে তার ফের দায়িত্ব পালনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এখনও চসিককে অফিসিয়ালি কিছু জানাননি ওই প্রকৌশলী। তিনি বর্তমানে তার ঢাকার বাসায় অবস্থান করছেন। সাধারণত বুধ ও বৃহস্পতিবার চসিকে অফিস করেন তিনি। বাকি তিন কর্মদিবস ঢাকায় এলজিইডিতে অফিস করেন। তবে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার তিনি চসিকে তার দপ্তরে আসেননি।
গত রবিবার নিজের কার্যালয়ে হামলার শিকার হন মো. গোলাম ইয়াজদানী। সেদিন রাতেই এ ঘটনায় খুলশী থানায় মামলা হয়। চসিকের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় আসামি হিসেবে ১০ জন ঠিকাদারের নাম উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া ৫ থেকে ১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। ৩ ঠিকাদারসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা এখন কারাগারে।
গতকাল চসিকের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্প পরিচালকের কক্ষটি বন্ধ। নামফলকটি ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। নিচে পড়ে আছে নামফলকের ভাঙা টুকরা। কক্ষের সামনে কোনো লোকজনকে দেখা যায়নি।
চসিক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্প পরিচালক বর্তমানে চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকার বাসায় বিশ্রামে আছেন। মেয়রের অনুমতি নিয়ে আপাতত তিনি অফিস করছেন না। তবে চসিকে অফিস করার ইচ্ছা নেই, এরকম কিছু তিনি বলেননি। তার সঙ্গে মঙ্গলবার কথা হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, ‘আমরা টার্গেট অনুযায়ী টেন্ডার করতে পারেনি। এখন হামলার ঘটনায় কাজের গতি আরও কমে যেতে পারে।’
শ্লথ হয়ে আসছে প্রকল্পের গতি : চলতি শুষ্ক মৌসুমে কাজ এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে গত ডিসেম্বরেই আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা টেন্ডার শেষ করার প্রয়াস ছিল মেয়রের। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সাধারণ সভায় প্রকৌশলীদের তাগাদাও দিয়েছিলেন। সর্বশেষ নতুন জানুয়ারি পার হলেও টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পথে মাত্র ৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প পরিচালককে মারধরের ঘটনায় প্রকল্পের কাজের গতি আরও শ্লথ হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে শুষ্ক মৌসুমে কাজ ধরতে না পারলে বর্ষায় ভাঙা সড়কের ভোগান্তি পোহাতে হবে নগরবাসীকে। অন্যদিকে হামলার ঘটনায় করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি করেছে চসিক। সংস্থাটির রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজকে প্রধান করে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবীর সোহাগ ও আইন কর্মকর্তা মনীষা মহাজনকে সদস্য করা হয়েছে। কমিটি এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।