‘চাকতাই খালের উপর সড়ক নির্মাণ নগরীকে ধ্বংসের শামিল’

134

চট্টগ্রাম নগরীর চাকতাইখালের বহদ্দারহাট অংশে এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ভরাট করে রাস্তা নির্মাণে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দাজ্ঞাপন করে বাংলাদেশ পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি (বাপউস)’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এ. কে. এম. আবু ইউসুফ এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত সংবাদ পত্রে প্রকাশের জন্য এক বিবৃতি প্রদান করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় খাল চাকতাই খাল। নগরীর প্রাণকেন্দ্র বহদ্দারহাট থেকে ৭ মাইল এলাকা ঘুরে কয়েকটি ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে এ খাল প্রবাহিত হয়েছে কর্ণফুলী নদীতে। খালটি দিয়ে একসময় কর্ণফুলী নদী থেকে নগরীর বহদ্দারহাট পর্যন্ত বাণিজ্যিক পণ্যবাহী নৌ চলাচল করতো। বর্তমানে দখলসহ নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে এ খাল দিয়ে এখন নৌ চলাচলতো দূরের কথা, জোয়ার-ভাটার পানিও প্রবাহিত হতে পারে না। নগরীর মাস্টারপুল, সিঅ্যান্ডবি ব্রিজ, মিয়ার বাপের মসজিদ, মিয়া খান নগর ব্রিজ, ধোনিরপুল, চন্দনপুরা, মিয়ারবাপের পুল, দেওয়ানবাজার, চাকতাই ব্রিজ, চামড়া গুদাম পর্যন্ত চাকতাই খালের ওপর রয়েছে ১০টি সেতু। এছাড়াও চাকতাই খালের সঙ্গে নগরীর পুরো এলাকার ১৩টি উপখালের সংযোগ রয়েছে এবং ড্রেন আছে চারশ’ কিলোমিটার। প্রতি বছরই সিটি কর্পোরেশন নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে চাকতাই খালসহ শাখা খাল এবং বড় বড় ড্রেন খনন করে। বর্তমানে এ খালের বিভিন্ন অংশে ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমে রীতিমতো চরে পরিণত হয়েছে এর উপর বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সের পাশের চাকতাই খালের অংশে রাস্তা নির্মাণ করে খালকে সরু করে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু এই খালের আবর্জনা পরিস্কারে ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ব্যয় হয় কোটি কোটি টাকা। এছাড়া খালের উভয়পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করা, ভবন নির্মাণের কাদামাটি জমে খাল ভরাট হয়ে যাওয়া, খালের পাড় ঘেঁষে ভবন নির্মাণ করা, নিয়মিত খালের মাটি ও আবর্জনা উত্তোলন না করায় প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী। কিন্তু কার সার্থে বহদ্দারহাটের চাকতাই খালের অংশ এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এটাই এখন নগরবাসীর প্রশ্ন। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে এমন উৎকন্ঠায় নগরবাসী। বলা বাহুল্য যে, বর্তমানে নদী-নালা ও খালগুলোর যে হ-য-ব-র-ল অবস্থা, তাতে বর্ষা মৌসুমতো দূরের কথা সামান্য বৃষ্টিপাতেই বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। আমরা মনে করি সময় থাকতে এবং নগরবাসীর স্বার্থে পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবনের মাধ্যমে অনতি বিলম্বে চাকতাই খালের বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সের পার্শ্বের অংশে খালের উপর রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধ করুন এবং নির্মাণকৃত অংশ অপসারণ করে খালকে মুক্ত করে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করুন।
কর্ণফুলী নদীর ও নদী-সংলগ্ন খালের গতিপথ স্বাভাবিক রাখতে ২০১০ সালের জুলাই মাসে কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে যে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু দুঃখের বিষয় স্বার্থন্বেষী মহলের স্বার্থে হাইকোর্টের এ নির্দেশকে বৃদ্ধাগুলি প্রদর্শন করা হচ্ছে। তাই নগরীর সকল নালা-খাল দখল করে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা সমূহ উচ্ছেদের পাশাপাশি রুখতে হবে কর্ণফুলী নদী-চাকতাই খালসহ অন্যান্য উপখাল ও নালা-নর্দমা দখলের এই মহোৎসব। আশাকরি নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে কর্তৃপক্ষ নির্মাণকৃত রাস্তা অপসারণ করে খালের স্বাভাবিক গতিপথ ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। বিজ্ঞপ্তি