চমেকে সংঘাতের জের বহিষ্কারে শান্তি ফিরবে তো!

12

 

মহামারি করোনার তান্ডবে দীর্ঘ দেড় বছর প্রায় বন্ধ থাকার পর সেপ্টেম্বরে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে খোলা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ। কিন্তু খোলার পর থেকে চমেক ক্যাম্পাস ও হোস্টেল অশান্তির আগুনে পুড়ছিল। সরকারি দলের দুই প্রভাবশালী নেতার অনুসারি শিক্ষার্থীরা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ অশান্তি। সর্বশেষ গত মাসের ২৯ ও ৩০ অক্টোবর প্রথমে হোস্টেলে, পরে চমেক ক্যাম্পাসে উভয়পক্ষ এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে তাতে রাকিব নামক এক মেধাবী শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। এ সংঘাতকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে দেন কর্তৃপক্ষ, একই সাথে হোস্টেলেও লাগানো হয় তালা। ঘটনার পরপর সংঘর্ষে জড়িত বেশ কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেন, চমেক কর্তৃপক্ষ গঠন করেন তদন্ত কমিটি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে গত সোমবার তদন্ত কমিটি অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তারের হাতে প্রতিবেদন জমা দেন। পরের দিন মঙ্গলবার একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে ৩১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা ক্যাম্পাস আগামী শনিবার (২৭ নভেম্বর) খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেলে বিভিন্ন সময় প্রতিদ্ব›দ্বী গ্রুপ বা দলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, তবে এত দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা এবং ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষার্থীর বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত-এটিই প্রথম। সূত্র জানায়, গত দুই বছরে কলেজে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বহিষ্কৃত ৩১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রলীগের বিবাদমান দু’পক্ষের নেতা-কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে ২৩ জন এমবিবিএস বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ৮ জন বিডিএস বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ সংবাদপত্রে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন, ২৯ ও ৩০ অক্টোবরের সর্বশেষ সংঘর্ষ এবং এর আগের বিভিন্ন সময় সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩১ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আগের সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। তবে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ এ সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদে উল্লেখ করা হয়, তদন্ত প্রতিবেদনে জড়িতদের চিহ্নিত করে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়নি। তবে ঘটনার জন্য ছাত্রলীগের বিবাদমান দুটি পক্ষকেই দায়ী করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের তদন্ত প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের চলমান সংকট নিরসন করা সম্ভব হবে না। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কলেজের চলমান সংকট নিরসনে রাজনৈতিক নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে।
আমরাও তাই মনে করি। অতীতেও এ ধরনের ঘটনায় তদন্ত হয়েছে, বহিষ্কারও করা হয়েছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ শেষপর্যন্ত তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে নি। এমন নজিরও আছে। তদুপরি, একসাথে ৩১জন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশের ফলে এসব মেধাবীদের পরবর্তী জীবন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তাও বিবেচনার বিষয় রয়ে গেছে। এছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের অনেকের প্রশ্ন তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয় নি। সবমিলিয়ে অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ করা জরুরি। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ কলেজ হলেও দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের মধ্যে অন্তঃদলীয় কোন্দলের কারণে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে, কিন্তু ছাত্ররাজনীতির নেতিবাচক প্রভাবে অনেক মেধাবীর জীবন অকালেই ঝড়ে যাচ্ছে-এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা মনে করি, বিচার অবশ্যই হতে হবে, তবে তা যেন সবার কাছে গ্রহণীয় হয় এবং ভবিষ্যৎ সংশোধনের সুযোগের মধ্যেই থাকে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে এমন সব কর্মকান্ড অবিলম্বে বন্ধ করা আবশ্যক। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলাই এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। দেশের ভবিষ্যত যারা, সেই শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয় এমন সংঘাতমুখর পরিবেশ-পরিস্থিতি সব সময় পরিত্যাজ্য হওয়া জরুরি।