চন্দনাইশ সুচিয়ায় নির্মিত স্বাধীনতা স্তম্ভ যেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বহন করছে

121

চন্দনাইশ উপজেলার শহীদ মুরিদুল আলম সড়কের পার্শ্বে সুচিয়া আর কে উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় নির্মিত স্বাধীনতা স্তম্ভ যেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বহন করে চলেছে। শহীদ মুরিদুল আলম (গাছবাড়ীয়া-বরকল) সড়কের পাশে সুচিয়া আর কে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে নির্মিত হয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ২য় এবং চন্দনাইশের একমাত্র স্বাধীনতা স্তম্ভ। বরকল ইউপি চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম স্মারক এ স্তম্ভটি তৈরি করেছেন।
নির্মিত স্তম্ভের মাধ্যমে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহাসিক স্মৃতি আগামী প্রজম্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। দৃষ্টিনন্দন এ ম্যুরালের বুকে সাঁটানো হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, চন্দনাইশের বরমা-বরকল এলাকার সাহসী সন্তান ১৪ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম।
মুক্তিযোদ্ধা বন্ধুর সাথে চন্দনাইশে এসে বাঁশখালীতে শহীদ হওয়া বরিশালের সার্জেন্ট মহি আলমের নামও রয়েছে এ স্তম্ভে। এছাড়া ম্যুরালের এক পাশে লেখা হয়েছে স্বাধীনতা স্তম্ভ এবং অন্য পাশে লেখা হয়েছে যাদের রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ নজরুল ইসলাম চৌধুরী স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম স্মারক এ স্তম্ভ স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি আনুষ্ঠানিক ভাবে উম্মোচিত করেন। স্তম্ভটি পুরো চন্দনাইশকে মর্যাদার আসনে বসানোর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আজকের প্রজন্মের কাছে উম্মোচিত করেছেন। সেসাথে আজকের প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ পেয়েছে। বিজ্ঞ মহলের মতে, প্রতিটি উপজেলায় এবং প্রতিটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি বিজড়িত এলাকায় এ ধরণের স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের মাধ্যমে শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য আলহাজ নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, চন্দনাইশের বরকল ইউনিয়নের সুচিয়ায় নির্মিত স্বাধীনতা স্তম্ভটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের মধ্যে অন্যতম স্বাধীনতার স্মৃতিস্তম্ভ। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম স্মারক এ স্তম্ভটি নির্মাণ করায় চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানান। এ স্তম্ভ স্বাধীনতা সংগ্রামের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে। ম্যুরালের মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে আগ্রহী হয়ে উঠবে। পুরো দেশে এ ধরনের স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তিনি। এ স্তম্ভের মূল উদ্যোক্তা বরকল ইউপি চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেছেন, বরমা-বরকলসহ সারা দেশের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ, আগামী প্রজন্মের নিকট স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পৌঁছে দেয়ার লক্ষে এ স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।
এ স্তম্ভ নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জানতে কৌত‚হলী করে তুলবে। এলাকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কথা অনেকে জানতো না। নির্মিত এ স্তম্ভে এলাকার সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এককথায় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে ধরে রাখার জন্য শহীদদের সম্মানে স্বাধীনতা স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়েছে। সূচিয়া আর কে উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, এলাকার প্রবীণ আইনজীবী পূর্ণেন্দু বিকাশ চৌধুরী বলেছেন, স্বাধীনতা স্তম্ভটি এলাকাকে গৌরবান্বিত করেছে। এলাকার অনেক শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে আমরাসহ আজকের প্রজন্ম জানতে পেরেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জানতে আরো অধিক আগ্রহী হয়ে উঠবে আজকের প্রজন্ম। আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহীদ মিনারের পাশাপাশি স্বাধীনতা স্তম্ভেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। সুচিয়া আর কে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শ্রাবণ চৌধুরী বলে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমরা বয়স্কদের মুখে অনেক শুনেছি। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, মা-বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি।
মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কথা বইয়ে অনেক পড়েছি। কিন্তু এলাকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে অনেক তথ্যই আমাদের অজানা ছিল। স্কুলের পাশে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ ও স্তম্ভের বুকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লিখে দেয়ার কারণে এলাকার বীর সন্তানদের বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনের ইতিহাস জানার জন্য আমাদের মধ্যে কৌত‚হল সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষক, এলাকার প্রবীণদের মুখে তাদের ইতিহাস ও আত্মত্যাগের বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে জানতে পেরেছি।
এলাকার এসব বীর সন্তানদের জীবনের ইতিহাস নিয়ে একটি প্রকাশনা বের করলে শিক্ষার্থীরা ছাড়াও নতুন প্রজন্মের জন্য সুবিধা হতো। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের ইতিহাস আমরা অন্তরে ধারণ করে নিতে পারতাম। সে সাথে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানার আগ্রহ দিন দিন বেড়ে যেত।