একসঙ্গে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি

3

পূর্বদেশ ডেস্ক

ভোট বর্জনের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ৭৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এদে মধ্যে ২৮ জন চেয়ারম্যান পদে, ২৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ২১ জন।
গতকাল শুক্রবার দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়। রিজভী বলেন, ‘দলে থাকবেন আর অশুভ শক্তির সঙ্গে আঁতাত করবেন, এটা হয় না। যারা দলকে বাদ দিয়ে সংগঠনকে অগ্রাহ্য করে এই পথে হাঁটছেন তারা সরকারি দলের ফাঁদে পা দিয়েছেন’।
আগামি ৮ মে ১৫০টি উপজেলায় ভোট হচ্ছে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় জাতীয় নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি স্থানীয় সরকারের এই ভোট থেকেও দূরে দাঁড়িয়ে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না দিয়ে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তবে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের প্রার্থী হওয়া নিষেধ করা হয়েছে, যদিও সেই নির্দেশ অমান্য করে বেশ কয়েকজন প্রার্থী রয়ে গেছেন।
গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনেও বিএনপির নির্দেশ অমান্য করে বেশ কয়েকজন নেতা প্রার্থী হয়ে দলের পদ খুইয়েছেন। সেই নির্বাচনের তুলনায় স্থানীয় সরকারের ভোটে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের সংখ্যাটি বেশি।
রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপির যেসব নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন তাদেরকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃতদের মধ্যে আছেন বেশ কয়েকটি থানা ও উপজেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহসভাপতি, আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও যুগ্ম আহ্বায়ক সদস্য পর্যায়ে পদধারী।
গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
বিএনপির নেতারা জানান, যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবু তারা নিবৃৃত্ত হননি। পরে তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়। এরপর নেওয়া হল বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক যা করার প্রয়োজন সেটাই করেছি। দলের সিদ্ধান্ত যারা মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে দল অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে’।

চেয়ারম্যান পদে ২৮ জন
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ভোটে নেমে রংপুর বিভাগে দলের পদ হারিয়েছেন দুই জন। এরা হলেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা বিএনপি সিনিয়র সহসভাপতি সরোয়ার হোসেন এবং কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সহ-সভাপতি ইমান আলী।
রাজশাহী বিভাগে পদ হারিয়েছেন মোট চার জন। তাদের মধ্যে দুই জন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার। তারা হলেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহা. আনোয়ারুল ইসলাম ও দলের জেলা শাখার সদস্য বাবর আলী বিশ্বাস।
অন্যরা হলেন নাটোর সদর উপজেলার ইমতিয়াজ আহমেদ হীরা ও নলডাঙ্গা উপজেলা কমিটির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আফজাল হোসেন।
ময়মনসিংহ বিভাগে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে পদ হারিয়েছেন ছয় জন। এদের মধ্যে ময়মনসিংহে বহিষ্কৃত হয়েছেন চার জন। তারা হলেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলার হালুয়াঘাটের এবিএম কাজল সরকার ও হাসনাত তারেক; ধোবাউড়া উপজেলা শাখার সাবেক সহ-সভাপতি শামসুর রশিদ মজনু এবং ফুলপুর পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান পল্লব।
একই বিভাগের শেরপুরে বিএনপির পদ হারিয়েছেন দুই জন। এদের মধ্যে হলেন শ্রীবর্দী শহর বিএনপির ১নং ওয়ার্ড শাখার সাধারণ সম্পাদকের পদ হারিয়েছেন আব্দুর রহিম বাদশা, ঝিনাইগাতী উপজেলা বিএনপির সদস্য পদ হারিয়েছেন আমিনুল ইসলাম বাদশা।
ঢাকা বিভাগে বিএনপির পদ গেছে আট জনের। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোটে দাঁড়িয়ে বিএনপির জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রাথমিক সদস্যপদ হারিয়েছেন নাজমুল আলম। একই বিভাগের মানিকগঞ্জে পদ হারিয়েছেন তিন জন। এদের মধ্যে হরিরামপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়কের পদ হারিয়েছেন জাহিদুর রহমান তুষার, সিঙ্গাইর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ হারালেন তোফাজ্জল হোসেন তোফাজ এবং হরিরামপুর উপজেলার সদস্য মোশারফ হোসেন মুসা।
বিএনপির গাজীপুর জেলা শাখার সহসভাপতির পদ হারিয়েছেন এজাদুর রহমান মিলন। ফরিদপুর জেলাতেও পদ গেছে তিন জনের। তারা হলেন চরভদ্রাসন উপজেলা বিএনপির সদস্য ফারুক মৃধা, সদর উপজেলা শাখার সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য একেএম নাজমুল হাসান এবং সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রউফ উন-নবী।
সিলেট বিভাগে বহিষ্কৃত হয়েছেন চার জন। এদের মধ্যে সিলেট জেলার আছেন দুই জন। এদের মধ্যে যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন সেবুল মিয়া, যিনি বিশ্বনাথ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোটে নেমেছেন। একই উপজেলার আরেক প্রার্থী গোউছ খানকেও বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তিনি দলের উপজেলা কমিটির সাবেক আহ্বায়ক। খবর বিডিনিউজের
একই বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলায় পদ হারিয়েছেন দুই জন। এরা হলেন দিরাই উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাপ মিয়া ও শাল্লা উপজেলা শাখার সভাপতি গণেন্দ্র চন্দ্র দাস।
বরিশাল বিভাগে চেয়ারম্যান পদে ভোটে দাঁড়িয়ে পদ হারিয়েছেন বিএনপির একজন নেতা। তিনি হলেন ফায়জুল কবির তালুকদার। তিনি পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর উপজেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
চট্টগ্রাম বিভাগে পদ হারিয়েছেন তিন জন। এদের মধ্যে আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার সাবেক সহ-সভাপতি ওমরাহ খান, কুমিল্লা উত্তর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক রমিজ উদ্দীন লন্ডনী, যিনি মেঘনা উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সদস্য মাজহারুল ইসলাম, যিনি লাঙ্গলকোটে প্রার্থী হয়েছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা
ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে যারা পদ হারিয়েছেন তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে আছেন বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মো. রিটন, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা যুবদলের সভাপতি জাহাদুল হুদা।
একই বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির পদ হারিয়েছেন তিন জন। তারা হলেন নাসিরনগর উপজেলায় প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ- প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক সাজ্জাদ মোর্শেদ, জেলা জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামীম ইস্কান্দার এবং সরাইল উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হানিফ আহমেদ সবুজ।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে রাজশাহী বিভাগে বিএনপির সদস্যপদ খুইয়েছেন চার জন। এদের মধ্যে আছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি, কায়সার আহমেদ, ভোলাহাট উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. কামাল উদ্দীন। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আতাউর রহমান খসরুকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আফজাল হোসেনও আর বিএনপির সদস্য নন।
ময়মনসিংহ বিভাগে বিএনপির পদ হারিয়েছেন ছয় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। এদের মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার দুই জন। তারা হলেন যুবদলের উত্তর জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম খান এবং উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য ফরিদ আল রাজি।
শেরপুর জেলা থেকে বহিষ্কার হয়েছেন চার জন। তারা হলেন শ্রীবর্দীর কাকিলাকুড়া ইউনিয়ন শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবিএম সাইফুল মালেক, একই উপজেলার গোসাইপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সাদমান সৌমিক মুন, শ্রীবর্দী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জোবায়দুল ইসলাম রাজন এবং ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান মামুন।
ঢাকা বিভাগে কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নাজমুল আলমকে উপজেলা বিএনপির সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই বিভাগে ফরিদপুরে চরভদ্রাসন উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সদস্য সচিব জানে আলম এবং জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়কের পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছে শাহিদ আল ফারুকের কাছ থেকে।
সিলেট বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন বিএনপির দুই জন। তারা হলেন বিশ্বনাথ উপজেলার খাজানজি ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল রব সরকার এবং একই উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক কাউছার খান।
খুলনা বিভাগে এক ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তিনি হলেন রামপাল শাখার আহ্বায়ক মেহেদী হাসান মিন্টু।
রংপুর বিভাগে চার জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এদের মধ্যে আছেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার যুবদলের যুব বিষয়ক সম্পাদক মো. সেলিম, বিরামপুর পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাই।
বাকিরা হলেন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা বিএনপির সদস্য সেকেন্দার আলী চাঙ্গা এবং রংপুরের পীরগাছা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ মো. ফরহাদ হোসেন অনু।
রংপুর বিভাগে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পারুল নাহার, বিরামপুর উপজেলার উম্মে কুলসুম বানু, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার লতিফা আক্তার, হাতিবান্ধা উপজেলার মাকতুফা ওয়াসিম বেলী, কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার তাজমিন নাহার (শাপলা) কে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
রাজশাহী বিভাগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার রেশমাতুল আরস রেখা, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার শামীমা আক্তার (বেদেনা), নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মহুয়া পারভিনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
ময়মনসিংহ বিভাগে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা মহিলাদলের নেত্রী সুমি বেগম ও মনোয়ারা বেগম খুইয়েছেন বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদ। খুলনা বিভাগে মেহেরপুর সদরের রোমানা আহমেদ এবং কুষ্টিয়ার খোকসার প্রার্থী ইশরাত জাহান পুনমকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ঢাকা বিভাগে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার আফরোজা রহমান লিপি, রাজবাড়ী সদরের শারমিন আক্তার টুকটুকিও বিএনপির পদ খুইয়েছেন।
সিলেট বিভাগে ময়মনসিংহের দিরাই উপজেলার ছবি চৌধুরী মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার রাহেলা বেগম হাসনা, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার স্বপ্না শাহীন বেগমও পেয়েছেন বহিষ্কারাদেশ।
চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবান সদর উপজেলার সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শিরীন আক্তার, কক্সবাজারের মহেশখালীর জাহানারা জাহাঙ্গীর, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার হালিমা আক্তার শিমু ও দিলারা শিরীনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।