চন্দনাইশ বিটিসিএল’র নাজুক অবস্থা

94

দক্ষিণ চট্টগ্রামের ব্যস্ততম, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ভরপুর চন্দনাইশ উপজেলা। জনসংখ্যা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদার প্রেক্ষিতে ১৯৬৮ সালে ১০টি টেলিফোন লাইন নিয়ে দোহাজারীতে টিএন্ডটি’র কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে চন্দনাইশ সদর এলাকায় টিএন্ডটি’র কার্যক্রম সম্প্রাসারিত করা হয়। ১৯৯২ সালে টিএন্ডটি থেকে সিবিএ তে রূপান্তরিত হয়। ২০০০ সালে দোহাজারীতে ২শ লাইন নিয়ে এক্সেঞ্জ অফিসের কার্যক্রম শুরু হয় একটি ভাড়া ঘরে। ২০০৫ সালে দোহাজারী ও চন্দনাইশ টিএন্ডটিকে ডিজিটাল টেলিফোনে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা বলে দোহাজারী এক্সেঞ্জ বন্ধ করে দেয়া হয়। যা অদ্যবধি চালু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে দোহাজারীতে থাকা ২’শ গ্রাহকের ভোগান্তির শেষ ছিলো না। দোহাজারী টিএন্ডটি’র গ্রাহকদেরকে ডিপি বসানোর কাজ দেখিয়ে ধমিয়ে রাখা হয়েছিল গ্রাহকদের আন্দোলন। বর্তমানেও দোহাজারীর অলিতে-গলিতে ডিপি পোস্ট লাইন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। ২০০৮ সালে টিএন্ডটি হস্তান্তরিত হওয়ার পর বিটিসিএল নামকরণ করা হলেও দোহাজারী ও চন্দনাইশের গ্রাহকদের সেবার মান বাড়েনি। বর্তমানে মোবাইল কোম্পানির ছড়াছড়িতে টিএন্ডটির সেবা না পাওয়ায় দিন দিন বিটিসিএলর গ্রাহক কমে ৬১ তে এসে দাড়িয়েছে। অথচ দোহাজারী ব্যণিজ্যিক উপ-শহর হিসেবে খ্যাত। এখানে রয়েছে দোহাজারী রেল জংশন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বন বিভাগ, দক্ষিণ চট্টগ্রামের সড়ক ও জনপদ বিভাগের অফিস, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, আবহাওয়া অফিস, হাইওয়ে পুলিশ, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ অসংখ্য ব্যাংক বীমা অফিস রয়েছে। একইভাবে চন্দনাইশ সদর এলাকায় উপজেলার বিভিন্ন অফিস, থানা, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, স্টেশন, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানগুলি এক সময় ল্যান্ডফোন ব্যবহার করতো। ১৯৯৮ সালে মোবাইল ফোন বের হওয়ার পর থেকে বিটিসিএল’র সেবা থেকে গ্রাহকেরা বঞ্চিত হওয়ার কারণে দিন দিন গ্রাহক কমে যেতে থাকে। চন্দনাইশ সদর এলাকায় প্রায় ৮৭ শতক জমির উপর ১৯৯৪ সালে চন্দনাইশ টেলিফোন এক্সেঞ্জ দ্বিতল বিশিষ্ট কার্যালয়টি নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে অদ্যবধি কোন ধরনের মেরামত করা হয়নি বলে জানা যায়। বর্তমানে ৫শ গ্রাহকের মধ্যে ৬১টি জন গ্রাহক বিটিসিএলের ফোন ব্যবহার করছে মাত্র। গত দেড় বৎসর ধরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সংস্কার কাজ, সাব-মেরিন ক্যাবল লাইনে কাজ করার কারণে বিটিসিএল’র ল্যান্ড ফোনের ক্যাবল নষ্ট হয়ে যায়। সে থেকে অদ্যবধি বিজিসি ট্রাস্টের মত প্রতিষ্ঠানে ৯টি লাইন বন্ধ রয়েছে। এ ব্যাপারে বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আকতারুজ্জামান জানান, তিনি একাধিকবার লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করার পরেও তাদের লাইনগুলো সংস্কার করা হয়নি এবং লাইন চালু করা হয়নি। ফলে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। কমে যাচ্ছে বিটিসিএল’র গ্রাহক। চন্দনাইশ টেলিফোন এক্সেঞ্জ এ বর্তমানে একজন কনিষ্ট সহকারী ব্যবস্থাপক, টেলিফোন টেকনেশিয়ান, একজন অস্থায়ী নাইট গার্ড দায়িত্ব পালন করছেন। একাধিকবার চন্দনাইশ বিটিসিএল কার্যালয়ে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। একইভাবে বিভিন্ন গ্রাহকেরাও অফিসে কাউকে না পেয়ে তাদের কোন অভিযোগ উপস্থাপন করতে পারছেন না বলে জানান। অথচ এক সময় এ এক্সেঞ্জ অফিসে ৫ জন, দোহাজারীতে ৫ জনসহ ১০ জনের কর্মক্ষেত্র ছিল। এখন বিটিসিএল’র সে জৌলুস নেই। হারিয়েছে বিটিসিএল তার কর্মময় গৌরব। গ্রাহকদের দাবী কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজ, অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে বিটিসিএল বর্তমান অবস্থায় পড়েছে। যে সকল গ্রাহকেরা বিটিসিএল’র ল্যান্ড ফোন ব্যবহার করছে না, তাদের অনেকের বিপুল অংকের বকেয়া বিল পরিশোধ হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এ ব্যাপারে কনিষ্ট সহকারী ব্যবস্থাপক নাছির উদ্দীন জানান, তিনি ২০১৬ সালে চন্দনাইশে যোগদান করার পর থেকে পটিয়া বিটিসিএল’র দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। দু’টি অফিসে জনবল সংকট রয়েছে। দু’জন করে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। গত ১ বছর ধরে বিজিসি ট্রাস্ট ও ইসলামী ব্যাংকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সাব-মেরিন ক্যাবল ও মহাসড়ক সংস্কার করার সময় বিটিসিএল’র লাইন নষ্ট হয়ে যায়। তা আর সংস্কার করা হয়নি। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। বর্তমানে চন্দনাইশে মাত্র ৭৪ জন গ্রাহক রয়েছে। তিনি দুই অফিসে দায়িত্ব পালন করার কারনে অনেক সময় চন্দনাইশে তাকে পাওয়া যায় না বলে স্বীকার করেন।