চন্দনাইশে বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

63

স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে চন্দনাইশের সবজি ভান্ডার নামে খ্যাত শঙ্খচরের বিস্তীর্ণ সবজি ক্ষেত। এতে চন্দনাইশ এলাকার সবজি চাষীরা লোকসানের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এক সপ্তাহের অধিক অবিরাম বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের প্রভাবে বন্যায় তছনছ করে দিয়েছে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার সেতু বন্ধন শঙ্খ নদীর চরের হাজার হাজার একর জমির মৌসুমী সবজি ক্ষেত, আউশ ধান ও আমনের বীজতলা। বন্যায় কৃষকদের প্রায় ২৫ কোটি টাকার অধিক ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে ধারণা করছেন অভিজ্ঞ মহল। বন্যার পানিতে শঙ্খ তীরবর্তী সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে এলাকার কৃষকেরা হতাশার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। অনেকে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে সবজি চাষ করায় ঋণ পরিশোধের চিন্তায় আত্মহারা। সপ্তাহব্যাপী টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শঙ্খ নদীর পানি বিপদ সীমানার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শঙ্খ তীরবর্তী ১০ হাজার একর সবজি ক্ষেত, আউশ ধান, আমনের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। বিশেষ করে আগামী মৌসুমী সবজি বেগুন, মুলা, চিচিংগা, মিষ্টি কুমড়া, শশা, বরবটি, ঢেড়শ ও বিভিন্ন প্রজাতির সবজি রোপন করেছিলেন অনেক কৃষক। কিন্তু ভয়াবহ বন্যায় এ সকল সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে শঙ্খচরের কৃষকদের ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। এছাড়া বন্যায় পলি মাটি ও শঙ্খের বালি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে কয়েক হাজার একর আমন ধানের বীজতলা ও আউশ ধান। ভেসে গেছে শত শত মৎস্য প্রজেক্ট। এ মৌসুমে সময়মত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় যথাযথভাবে আউশ ধানের চাষাবাদ হয়নি। সময় মত বৃষ্টিপাত না হলেও হঠাৎ বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার সাথে সাথে নতুন করে কৃষকেরা আমন ধানের বীজতলা তৈরী করতে শুরু করে। এর মধ্যে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আমন ধানের বীজতলা বন্যার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। কৃষকেরা জানিয়েছেন পুনারায় আমন ধানের বীজতলা তৈরি করে আমন ধান চাষাবাদে সময়ক্ষেপন হবে। এতে করে আমন ধানের চাষাবাদে ভালো ফলনের ব্যার্তয় ঘটবে। কৃষক আবদুল শুক্কুর বলেছেন, শঙ্খচরের সবজির ব্যাপক চাহিদার কারণে ধারদেনা করে ৫ কানি জমিতে আগাম বর্ষাকালীন সবজি মিষ্টি লাউ, মুলা, বরবটি ঢেড়শ চাষ করেছিলেন। এতে জমি তৈরী, শ্রমিকের মজুরী, বিভিন্ন কীটনাশক ও প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগে তার খরচ হয়েছে দেড় লক্ষাধিক টাকা। ইতিমধ্যে ক্ষেত থেকে তিনি কয়েকবার ফসল তুলে বিক্রি করেছেন। কিন্তু সবজি ফলন যথাযথভাবে তোলার পূর্ব মূহুর্তে বন্যায় সবজি ক্ষেত ভেসে যাওয়ায় তিনি ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে জানান। একই এলাকার কৃষক লেয়াকত আলী জানান, তার ২ খানি জমির ঢেড়শ, বরবটি, মুলা, মিষ্টি কুমড়া ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও শঙ্খচরের প্রবীণ কৃষক জহুর আহমদ, আবুল মনসুর, নুরুল ইসলাম নুরু, মো. হাসান, আহমদ শফিসহ কয়েক’শ কৃষক পড়েছে চরম লোকসানে। কৃষকরা জমির মালিকের কাছ থেকে খাজনায় জমি নিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিভিন্ন ধরনের আগাম সবজির চাষ করেছিলেন। কিন্তু ভয়াবহ বন্যা তাদের স্বপ্নকে গুড়িয়ে দিয়ে এখন পথে বসিয়েছে। কিভাবে ধার ও ঋণের টাকা পরিশোধ করবে এ চিন্তা ভর করেছে কৃষকদের মাথায়। প্রতিবছর ভারী বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের প্রভাবে বন্যায় লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হলেও কেউ তাদের খবর রাখে না। এমনকি সরকারি-বেসরকারিভাবে কোনদিন সহযোগিতাও পাননি বলে তিনি অভিযোগ করেন কৃষক আবুল মনসুর। বন্যায় শঙ্খচরের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়ে কৃষকেরা বলেছেন, যে সমস্ত কৃষক বিভিন্ন এনজিও সংস্থা, অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছেন তারা নিঃস্ব হয়ে যাবেন। অনেক কৃষককেই ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে। চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার বলেছেন, চলতি মৌসুমে তাদের হিসেব মতে সারা চন্দনাইশে ৩’শ ৫২ হেক্টর জমিতে বর্ষাকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। আউশ ধানের চাষ ৬০ হেক্টর, আমন ধানের বীজতলা ৭ হেক্টর, সবজি ক্ষেত ১’শ হেক্টরের ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। সবজি ক্ষেতের ব্যাপারে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কিছু সবজির ফলন কৃষকেরা তুলে বিক্রি করেছে। বিদায় এদেরকে কর্তনকৃত সবজির মধ্যে ঢেড়স, বেগুন, বরবটি রয়েছে এ সকল সবজি ক্ষেতেরও ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান। সরকারিভাবে কৃষকদের প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনাম‚ল্যে সার, বীজ ও কীটনাশক দেয়া হবে। তবে সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহজশর্তে ঋণ দানের ব্যবস্থা নেই বলেও জানান তিনি। পানি কমে আসলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকাও তৈরী করা হবে বলে জানিয়েছেন।