চট্টগ্রামে ৪ শতাধিক অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক

79

নিজস্ব প্রতিবেদক

আনাচে-কানাচে গজিয়ে উঠা অননুমোদিত বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তরফে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণার পর নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্টরা। এসব অবৈধ ক্লিনিকে ভুয়া চিকিৎসক, অনভিজ্ঞ নার্স, অদক্ষ আয়া দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। ফলে অনেক হাসপাতালে ঘটছে নানা অঘটন। ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে রোগীদের মৃত্যু হওয়ার সংবাদও কম নয়। অনেক প্রতিষ্ঠানের তথ্যও নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরে। তবে তারা জানিয়েছে, দেশজুড়ে তিন হাজারের বেশি অবৈধ-নিবন্ধনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগেরই নাম ও অবস্থান জানে না অধিদফতর। অভিযোগ রয়েছে অনলাইনে আবেদনের পর স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টোকেন, সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন ক্লিনিক মালিকরা।
এদিকে অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রোগী জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল রিপোর্ট দেওয়াসহ নানা অভিযোগ দীর্ঘদিনের। করোনার সময় এ অভিযোগ ছিল আরও বেশি। তবু ওই সময় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। এখন হঠাৎ এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানে নামার ঘোষণা দেয়ার পর তদারকির ধারাবাহিকতা কতটুকু বজায় থাকে সেটা নিয়ে প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।
তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বিভাগে ২ হাজার ২৩২টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অন্তত ৪ শতাধিক। চট্টগ্রাম জেলায় ৫৮০টি প্রতিষ্ঠান থাকলেও সর্বশেষ তথ্যমতে, নবায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে ২০০টি প্রতিষ্ঠান। আর চট্টগ্রাম বিভাগে লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছে ১ হাজার ৪০২টি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া ২০২০ সালের আগস্টে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ লাইসেন্স না থাকায় চট্টগ্রামের ৩৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিবেশগত ছাড়পত্র বাতিল করে পরিবেশ অধিদপ্তর। শুধু লাইসেন্স কিংবা পরিবেশগত ছাড়পত্র নয়, অনুমোদন থাকা অনেক হাসপাতালের চিকিৎসক নার্সদের নিয়োগপত্রও নেই। এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তালিকা না থাকা, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের লাইসেন্স, প্যাথলজিস্ট, রিপোর্ট প্রদানকারী চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টেরও তালিকা নেই অনেক হাসপাতালে। করোনার সময় প্রতিদিন এমন অভিযোগ এলেও চট্টগ্রামের চিকিৎসাসেবা তদারকি কমিটি কোনো অভিযান চালায়নি। এই সুযোগে ওই সময় বেশ কিছু অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অবৈধ, অনুমোদনহীন ক্লিনিকগুলো বন্ধের জন্য নির্দেশনা দেয়ার পর এখনও কোন অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ হয়েছে এমন কোন তথ্য নেই চট্টগ্রামে। এ সময়ের মধ্যে ক্লিনিক বন্ধ করা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামে বেসরকারী হাসপাতালগুলোতেও অনিয়মের কথা উঠে আসে বিভিন্ন সময়। তবে এসব অভিযোগের কোন প্রতিকার নেই। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলেও এর প্রতিকার পাওয়ার দৃষ্টান্ত বিরল।অনেক ক্ষেত্রে লাইসেন্স নবায়ন না করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, নিয়মবহির্ভূতভাবে শয্যা রাখা, কিছু প্রতিষ্ঠানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সের নিয়োগপত্র না থাকা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তালিকা ও ক্লিনার নিয়োগের তথ্য না থাকা, রোগ নির্ণয়ের মূল্য তালিকা দৃশ্যমান করে না রাখা, রিপোর্ট প্রদানকারী চিকিৎসক-প্যাথলজিস্ট, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের তথ্য না থাকা, হাসপাতালে কোন বøাড ব্যাংক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য না থাকাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে।
এদিকে এসব অনুমোদনহীন হাসপাতাল আর কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। তার নির্দেশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিজ্ঞপ্তিতে মোট চারটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের অনিবন্ধিত বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করতে হবে অবশ্যই। অনিবন্ধিত বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। এই কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। এ ছাড়াও যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ করলেও নবায়ন করেননি, তাদের নিবন্ধন নবায়নের জন্য সময়সীমা প্রদান করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নবায়ন গ্রহণ না করলে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে অপারেশনের সময় এনেস্থেসিয়া প্রদান ও ওটি এ্যাসিস্ট করার ক্ষেত্রে নিবন্ধিত চিকিৎসক ছাড়া অন্যদের রাখা হলে সেসব প্রতিষ্ঠান ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন নিবন্ধনের আবেদন করেছে তাদের লাইসেন্স প্রদানের কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্তির আগে এসব প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাতে পারবে না বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই বিষয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার নির্দেশনা এসেছে। আমরা এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যেকোনো সময় অভিযান পরিচালনা করব।’
ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, শুধু অনুমোদনহীন নয়, অনুমোদন আছে এমন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করা হবে। সব নিয়ম মেনে চলছে কিনা, তা তদারকি করা হবে।