চট্টগ্রামে সাংগঠনিক পুনর্গঠনে পদে পদে বাধার মুখে বিএনপি

31

এম এ হোসাইন

জোরালো আন্দোলনের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে দল পুনর্গঠনে হাত দেয় বিএনপি। আগামী জুনের মধ্যে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে সারাদেশে এ কার্যক্রম চলছে। এ লক্ষ্যে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলাতেও দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু দল পুনর্গঠন করতে গিয়ে পদে পদে সমালোচনার জন্ম দিচ্ছেন দায়িত্বশীলরা।
বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত নন, এমন ব্যক্তিকে কমিটিতে স্থান দেয়া হচ্ছে, আবার বিতর্কিত ব্যক্তিকেও স্থান দেয়া হচ্ছে। এমনকি মৃত ব্যক্তির নামও আসছে কমিটিতে। সব মিলিয়ে পুনর্গঠনের মূল উদ্দেশ্য থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ছে বিএনপি।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। পরে করোনা মহামারি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার দল পুনর্গঠনে হাত দেয় দলটি। বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং দাবি আদায়ে তারা মাঠে নামবে। ইতিমধ্যে আন্দোলনের বিষয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে নানা দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে এও বার্তা দেওয়া হয়েছে, জুনের মধ্যে সারাদেশে দল পুনর্গঠন কাজ শেষ করা হবে। এরপর যে কোন সময় আন্দোলনের ডাক আসবে।
তবে দলের সর্বোচ্চ ব্যক্তির নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দল পুনর্গঠন করতে গিয়ে দলের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। মানা হচ্ছে না সাংগঠনিক নিয়ম। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নিজের ইচ্ছে মতো কমিটি গঠন করতে গিয়ে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলার কয়েকটি ইউনিট কমিটি ঘোষণার পর তৃণমূল থেকে জোরালো প্রতিবাদ এসেছে। তারেক রহমানের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দলের রাজনীতিতে যুক্ত নন, এমন ব্যক্তিদেরকে পদ দেয়া হয়েছে কয়েকটি ইউনিটে। আবার একটি ইউনিটের সদস্য সচিব করা হয়েছে স্বয়ং দলীয় নেতা হত্যা মামলার আসামিকে। তাছাড়া মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীকে পদ দেয়া নিয়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান তৃণমূল থেকে গণতান্ত্রিকভাবে নেতৃত্ব নির্বাচন করার প্রক্রিয়াটি তত্ত¡াবধায়ন করছেন। সারাদেশের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা শাখা, থানা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কাউন্সিল করে সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের কাজ চলছে। আমরা রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। আমরা যদি দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা না করি, তাহলে তো এটা সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। সুতরাং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য তৃণমূল থেকে নিজের দলের গণতান্ত্রিক চর্চার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, তা পুরোদমে চলছে।
সর্বশেষ ঘোষিত কমিটির মধ্যে আছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার তিন ইউনিট কমিটি। সাতকানিয়া ও আনোয়ারা উপজেলার এই তিন ইউনিট কমিটি নিয়ে এখন চলছে তুমুল সমালোচনা। কমিটিগুলোতে স্থান পেয়েছে বিএনপি নেতা হত্যা মামলার আসামি, প্রতারণা মামলার আসামি, মাদক মামলার আসামি, আওয়ামী রাজনীতির লোক, জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত লোক, প্রবাসী ও মৃত ব্যক্তি। বিএনপি অধ্যুষিত এলাকায় এমন কমিটি ঘোষণার পর সাতকানিয়া ও আনোয়ারায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ। কমিটি ঘোষণার পর পরই জেলা বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে ‘ঝাড়–মিছিল’ অব্যাহত রেখেছেন তৃণমূলের কর্মীরা।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুনির্দিষ্টভাবে ওয়ার্ড থেকে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে বলেছেন। যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা এখন ঘরে বসে কমিটি করছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব জানেন না, তৃনমূলের পক্ষেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে তথ্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। না হলে, এভাবে হাতে পারত না। মারা গেছে এমন লোকও কমিটিতে স্থান পেয়েছে। আমরা যারা তৃণমূল থেকে রাজনীতিতে জড়িত, আমরা মনে করি বিষয়গুলো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দৃষ্টিগোচর হবে। তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন। বগুড়া, সিলেটে ভোটের মাধ্যমে কমিটি হয়েছে। কমিটি গঠনের নামে যেটা হচ্ছে সেটা দলের মূল লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া। যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা আওয়ামী লীগের হয়ে এসব কাজ করছে।
শুধু উত্তর ও দক্ষিণ জেলার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা আছে তা নয়, বিতর্ক আছে নগর বিএনপির পুনর্গঠন নিয়েও। গত ২১ মার্চ ভার্চুয়াল সভায় তারেক রহমান তিন মাসের সময় বেঁধে দিয়ে নগর বিএনপিকে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন। এই সময়ের মধ্যে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম শেষ করে সম্মেলন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ জন্য পাঁচটি সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের অর্ধেক সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। পাঁচটি সাংগঠনিক কমিটি এখন পর্যন্ত এলাকাভিত্তিক সদস্য সংগ্রহ অভিযানের মধ্যে আছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন করতে সাংগঠনিক কমিটিও ব্যর্থ হতে পারে। সব মিলিয়ে মূল লক্ষ্য থেকে অনেক পিছিয়ে আছে চট্টগ্রামের বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি।