চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল চট্টগ্রামে করোনা ও সাধারণ চিকিৎসার বেহাল দশার দ্রুত পরিবর্তন জরুরি

43

করোনাকালে চট্টগ্রামের চিকিৎসা সেক্টরের বেহাল দশায় ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ২১ জুন দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, হাসপাতালে রোগী ভর্তি এবং মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার বিস্তারিত বিবরণ। একদিকে চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। করোনা আক্রান্ত রোগীর কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা নিয়ে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ রিপোর্ট হাতে পাচ্ছে না রোগীরা। নমুনা পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা তো আছেই। তার উপর সাধারণ রোগীরা চট্টগ্রামের সরকারি, বেসরকারি, প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে ভর্তি জটিলতায় ভোগছে। ডাক্তার, নার্স, কর্মচারীদের করোনা ভীতি জনিত অনিহা; দায়িত্ব জ্ঞানহীনতা, চিকিৎসার পরিবেশ সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা মিলিয়ে এক বেহাল দশায়, বিড়ম্বনার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের করোনা আক্রান্তসহ সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনরা। সাধারণ ২০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় করোনা লক্ষণ আক্রান্ত রোগীর নমুনা ১৪ দিন পর্যন্ত নষ্ট হয় না বলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন জানালেও কার্যত দেখা যাচ্ছে অনেকে ১৪ দিন তো দূরের কথা একমাসেও রিপোর্ট পাচ্ছে না। নমুনা পরীক্ষাগার বাড়ানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। চট্টগ্রামে আরো করোনার নমুনা পরীক্ষাগার বাড়ানো প্রয়োজন।
চট্টগ্রামে বেসরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলো করোনাকালে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করছে কিংবা দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেনি এমন সংবাদ আমরা পত্রিকার প্রতিবেদন হতে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। পিপিই বা সুরক্ষা সরঞ্জামের অপ্রতুলতা এবং সেসব সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির কারণে অনেক ডাক্তার, নার্স এবং হাসপাতাল কর্মী করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। অনেকের মৃত্যুও ঘটছে। এমতাবস্থায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব পূর্ব থেকে আছেই, তার উপর করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়ায় সেই লোকবল আরো কমে গেছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে কোভিড-১৯ রোগী বাড়ায় সাধারণ রোগীসহ রোগীর চাপ হাসপাতালগুলো সইতে পারছে না। এর মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তার নার্স, কর্মচারী সাধারণ রোগীদের করোনা আক্রান্ত ভেবে ভর্তি করাচ্ছে না তাদের হাসপাতালে, এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছে। এমনিতে অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল ডাক্তার এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম সরকারি হাসপাতাল থেকে নিয়ে গিয়ে নাম মাত্র চিকিৎসা করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকে রোগীদের কাছ থেকে। করোনার কারণে সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ থাকায় সরকারি হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল বেসরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর দেউলিয়াত্ব এই ক্ষেত্রে ভালোভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
এমতাবস্থায় চট্টগ্রামের চিকিৎসা সেক্টরকে ভারসাম্য পূর্ণ করতে সরকার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। হাসপাতালগুলোর দুর্বলতা, অবহেলা, দুর্নীতি প্রতিরোধের পাশাপাশি লোকবল বাড়িয়ে সাধারণ জনগণসহ করোনা চিকিৎসার সংকট মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে। যেসব বেসরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতাল করোনা চিকিৎসায় অনিহা দেখাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে চট্টগ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসবে এমন ধারণা চট্টগ্রামবাসীর।