চট্টগ্রামের বইমেলা নিয়ে কিছু কথা

21

আজহার মাহমুদ

বইমেলা। শব্দটাকে আলাদা করলে দুটি শব্দ পাওয়া যাবে। একটা বই, অন্যটা মেলা। বই মানেই একটা ভিন্ন জগৎ, ভিন্ন পরিধি। যেখানে প্রবেশ করলে খুব সহজেই ভুলে যাওয়া যায় বাস্তব পৃথিবীকেও। বই শুধু বই-ই নয়, বই একজন ভালো বন্ধুও বটে। যাইহোক বই সম্পর্কে ভালো ভালো সংজ্ঞা আমরা শুনে আসছি। বই নিয়ে তাই আর বিশেষণ দিতে চাই না। এই যেমন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, বই পড়াকে যথার্থ হিসেবে যে সঙ্গী করে নিতে পারে, তার জীবনের দুঃখ কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়। আবার ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, মানুষের জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন- বই, বই এবং বই। এই যে এতো সুন্দর সুন্দর উক্তি। এরপরও বই সম্পর্কে আমি আর কি বলবো!
এবার আসাযাক বইমেলা নিয়ে। আমি সহজভাবে বলি, যে মেলায় শুধুই বই থাকে তাকে বইমেলা বলা হয়। বইমেলা একটা অন্য আমেজের মেলা। আর আট-দশটা মেলার মতো নয় এই মেলা। তবে এই মেলায়ও বিভিন্ন আইটেম রয়েছে। তবে তা খাওয়ার নয়, পড়ার। আমরা মেলায় গেলে বিভিন্ন খাবার আর প্রয়োজনীয় জিনিস পাই যা ব্যবহার করা এবং খাওয়া যায়। কিন্তু বই হচ্ছে এমন একটি জিনিস যার অস্তিত্ব কখনও ফুরায় না। আপনার কেনা বইটি পড়তে পারবে আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন কিংবা আপনার প্রিয়জন। বই সাজিয়ে রাখাও যায়। যা যুগযুগ ধরেই যতœ করে রাখতে পারলে থাকবে। আর এই বইয়ের সমাহারে সৃষ্টি হয় বইমেলা।
তবে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, মানুষের বইয়ের প্রতি আগ্রহ এবং ভালোবাসা আছে বলেই এ বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। নয়তো বইও বের হতো না, বইমেলাও সৃষ্টি হতো না। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকায় বাংলা একাডেমির আয়োজিত বইমেলার পরেই বড় বইমেলা হয়েছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশন কর্তৃক আয়োজিত এই বইমেলায় সারাদেশের প্রকাশনীর উপস্থিতি ছিলো। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় দুদিন, তিনদিন এবং সর্বোচ্চ সাতদিন পর্যন্ত খÐ খÐ বইমেলার আয়োজন হয়েছে।
তবে আমার বিষয়-বস্তু চট্টগ্রাম বইমেলা। ২১ দিনের এই বইমেলায় আমি প্রায় ১৫ দিনের বেশি উপস্থিত ছিলাম। প্রতিবারের ন্যায় এবারও প্রথমদিন বইমেলার সৌন্দর্য ছিলো না। আমার চোখে এবারের বইমেলায় শুরু হয়নি নির্দিষ্ট দিনে। প্রথমদিন অর্থাৎ আট তারিখ মেলায় প্রবেশ করে দেখা যায় অনেক অনেকগুলো প্রকাশনীর স্টল খোলা হয়নি, স্টল সাজানো হয়নি, গোছানো হয়নি। মেলার তৃতীয় দিনে এসে মেলার মতো মনে হয়েছে। এবারের চট্টগ্রাম বইমেলায় যে বিষয়টি লক্ষ কলাম তা হলো পাঠকের সমাগমের স্বল্পতা। বিশেষ বিশেষ কয়েকদিন ছাড়া পাঠকদের দেখা যায় না মেলায়। যা আসে তা হচ্ছে গুটি কয়েক। মেলায় এমনও কয়েকটি স্টল আছে যাদের এমনও কিছু দিন গিয়েছে দুটি বইয়ের বেশি বিক্রি হয়নি।
এবারের বইমেলায় ঢাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫২ টি প্রকাশনী এসেছে। তবে দুঃখের বিষয় তাদের একদম শেষ সারিতে ফেলে দেওয়া হয়। যা পরিকল্পনা মাফিক করা হয়েছে। কিন্তু এতো দূর থেকে আসা প্রকাশনীগুলোকে এমন আতিথেয়তা না দিলেও পারতো বলে জানান কিছু প্রকাশনার মালিক।
যে বিষযটি সাধারণ মানুষের মুখে বেশি শোনা যায় সেটা হচ্ছে নিরাপত্তার বিষয়। মেলার আশে পাশে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইনশৃংখলা বাহিনী কিন্তু নেই। একটি স্টলে কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্য রয়েছে। এছাড়েও মেলায় প্রবেশ পথে চেকপোস্ট থাকাটা অতীব জরুরি মনে করেন অনেকেই। যা ঢাকায় খুব সুন্দরভাবে করা হয়। এতে করে নিরাপত্তার বিষয়টি আরও সহজ হয়ে আসবে। এছাড়াও বইমেলায় বই চুরির অভিযোগও রয়েছে। রাতে স্টল পাহারা দেওয়ার জন্য যাদের নিয়োগ দেওয়া হয় সেটা বইমেলা অনুযায়ি কম মনে করেন প্রকাশকগণ। সেইসাথে রাতে বাচ্চারা বইমেলায় প্রবেশ করে বই চুরি করেন বলেও জানান। তবে এবারের চট্টগ্রাম বইমেলা নিয়ে দুটি আলোচনা হচ্ছে জোরেসোরে। প্রথমটা হচ্ছে মেলার হাঁটার রাস্তায় এবার ইট দেওয়া হয়নি। সেখানে বেছানো হয়েছে তেরপরল জাতীয় কাপড়। এতে করে ধূলো উড়েছে এবং মানুষ মাটিতে বেছানো কাপড়ের সাথে হোঁচট খেয়েছে। এই ইট না দেওয়াটা উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করে লেখক, সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী।
এছাড়াও লেখক ও প্রকাশকদের বড় একটি অংশ মনে করেন প্রচারণাটা এবার হয়নি বললেই চলে। সেটা নিয়ে অনেক প্রকাশকের ক্ষোভও রয়েছে। সত্যি বলতে পুরো বইমেলায় এটা পরিলক্ষিত হয়েছে। চট্টগ্রামের মানুষজন এখনও অনেকে জানেন না যে চট্টগ্রামে ২১ দিনব্যাপী একটা বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আমার বিশ্বাস আগামীবার এধরনের বিষয়গুলোতে মেলা কর্তৃপক্ষ সুনজর দিবেন। তবে এতোকিছুর পরও সাধুবাদ জানাই এতো সুন্দর একটি বইমেলা চট্টগ্রামবাসীকে উপহার দেওয়ার জন্য। বিশেষ করে চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশনকে ধন্যবাদ দিতেই বইমেলার মতো একটা মেলা আয়োজন করার জন্য। জয়হোক বইয়ের, জয়হোক বইমেলার।
লেখক: প্রাবন্ধিক