ঘরের আগুনে পুড়ছে আ. লীগ সুযোগ খুঁজছে বিএনপি-জামায়াত

119

রাহুল দাশ নয়ন

বাঁশখালীর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঘরের আগুনে পুড়ছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন হতে যাওয়া ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৩টিতেই বিরোধ প্রকাশ্যে। অন্যদিকে বিএনপি সব ইউনিয়নে শক্তিশালী ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী দিয়ে সুষ্ঠু ভোট প্রত্যাশা করছেন। আবার দক্ষিণ বাঁশখালীর পাঁচ ইউনিয়নে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াতও। সব মিলিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে কোথাও ত্রিমুখী, কোথাও চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি থাকায় সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সুফল পেতে চাইছে বিএনপি-জামায়াত।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, বিদ্রোহীরা আগামীতে সংগঠনে জায়গা পাবে না। আমরা আপাতত প্রত্যাহার পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। এরপরেও যদি কেউ সরে না দাঁড়ায় তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব।
জানা যায়, শেখেরখীল ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ১৩ ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। শেখেরখীলে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. ইয়াছিন তালুকদার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। জামায়াতের ঘাঁটি এই ইউনিয়নে বিএনপির শেখ মোহাম্মদ ফজলুল কবির চৌধুরী ও জামায়াতের মোরশেদুল ইসলাম ফারুকীর সাথে ইয়াছিনের ত্রিমুখী লড়াই হবে।
গন্ডামারা ইউনিয়নটি বিএনপি-জামায়াতের দুর্গ। সেখানে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিহাবুল হক সিকদার। বিদ্রোহী হিসেবে আছেন যুবলীগের সাবেক সদস্য সেলিম উল্লাহ। বিএনপি সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী সেখানে শক্তিশালী প্রার্থী। গত নির্বাচনে গন্ডামারায় আওয়ামী লীগ তৃতীয় হয়েছিল। লেয়াকত আলীর সাথে জামায়াত নেতা আরিফ উল্লাহর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। এবার আরিফ উল্লাহর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
কালীপুরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান এড. শাহদাত আলম। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য মো. নোমান। শাহদাত ও নোমান একসময় ‘গুরুশিষ্য’ থাকলেও দুজনের বিরোধ এখন প্রকাশ্যে। গত বুধবার রাতে দুইজনের সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান চৌধুরী বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বাহারছড়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সভাপতি তাজুল ইসলাম। বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী। সেখানে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার মো. লোকমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কাথরিয়ায় এবারো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন গেলবার পরাজিত প্রার্থী ইবনে আমিন। সেখানে এবারো বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করছেন জয়নাল আবেদীন চৌধুরী। বিএনপি নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শাহ জাহান চৌধুরী কাথরিয়ায় আবারও প্রার্থী হয়েছেন।
শীলক‚পে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কায়েশ সরোয়ার সুমন। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন মিজানুর রহমান। বিএনপি প্রার্থী হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান এবারও প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থী হয়েছেন জামায়াত সমর্থিত জাফর আলম।
পুুকুরিয়ায় বিএনপি চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন এবারও প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বোরহান উদ্দিন নেওয়াজ। বিদ্রোহী হয়ে আছেন দক্ষিণ জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান আকতার হোসেন।
সাধনপুরে আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক আহছান উল্লাহ চৌধুরী ও কেএম সালাউদ্দিন কামাল প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে ত্রিমুখী ভোটযুদ্ধ হবে। বিএনপি সমর্থিত চৌধুরী মো. আশেক এলাহী সোহেলও সাধনপুরে প্রার্থী হয়েছেন।
খানখানাবাদে জসীম উদ্দিন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী। অনেকটা নতুন এই নেতাকে এবার ভোগাবে নিজ দলের প্রার্থীরাই। সেখানে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান বদরুদ্দিন চৌধুরী মনোনয়ন পায়নি। তিনি নির্বাচন না করলেও বিদ্রোহী হিসেবে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক জিয়াউল হক চৌধুরী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি এনামুল হক চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপির জাহেদুল হক, নজরুল ইসলাম চৌধুরী নামে দুইজন প্রার্থী হয়েছেন। তবে দুজনের মধ্যে শেষতক একজনই প্রার্থী থাকবেন বলে জানা যায়।
বৈলছড়িতে বর্তমান চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী। বিদ্রোহী হিসেবে শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি রাশেদ আলী, ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন ও তাঁতী লীগ সভাপতি মো. মনছুর আলম প্রার্থী হয়েছেন। উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহীম স্বতন্ত্র পরিচয়ে প্রার্থী হয়েছেন। কফিল ও ইব্রাহিমের মধ্যে সেখানে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হলেও বিদ্রোহী যন্ত্রনায় ভুগতে হবে কফিলকে।
সরলে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী রশিদ আহমদ চৌধুরী। ইমরানুল হক নামে একজন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও সেখানে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন রশিদ আহমদ। যদিও বিএনপি সমর্থিত হিসেবে জাফর আহমদ ও লিয়াকত আলী তালুকদার নামে দুই প্রার্থী মাঠে আছেন।
জামায়াতে ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চাম্বলে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী। বিদ্রোহী হিসেবে আছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফজলুল কাদের। জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতা এম আলী নেওয়াজ চৌধুরী সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী। একদিকে জামায়াত আরেকদিকে বিদ্রোহীর বিরুদ্ধেই লড়তে হবে মুজিবকে।
ছনুয়ায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। গেল বারের মতো এবারও বর্তমান চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। উপকূলীয় এই ইউনিয়নে ত্রিমুখী লড়াই হবে।
পুঁইছড়িতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী জাকের হোসেন চৌধুরী। সেখানে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান তারেকুর রহমান ও নুর মো. ফরহাদুল আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল আজিম চৌধুরীও প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর চেয়ে দুই ঐতিহ্যবাহী পরিবারের প্রার্থীদের ঘিরেই আগ্রহ বেশি ভোটারের। যদিও জামায়াত নেতা মো. সোলায়মানও প্রার্থী হওয়ায় ভোটের সমীকরন কিছুটা পাল্টে গেছে।
বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহীম বলেন, আমি চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় এলাকায় কেমন উন্নয়ন করেছি ভোটারের মতামত নিলেই জবাব পাবেন। সুষ্ঠু ভোট হলে ভোটের মাধ্যমেও জবাব দিবে ভোটাররা। সরকার যেভাবে ভোটের নামে প্রহসন করছে সেটি না করলে আমিই জিতবো।
পুকুরিয়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আকতার হোসেন বলেন, আমি যেহেতু দলীয় মনোনয়ন চাইনি আমাকে বিদ্রোহী বলা যাবে না। এখন যারা দলীয় প্রার্থী হয়েছে অতীতে আওয়ামী লীগের সকল নির্বাচনে তাদের ভ‚মিকা কেমন ছিল যাচাই করুন। বিএনপি প্রার্থীকে জেতাতেও আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
শীলকূপে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী কায়েশ সরোয়ার সুমন বলেন, আমি সবাইকে নিয়েই রাজনীতি করতে চাই। শীলকূপে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যে প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে আছেন তিনি আমার পক্ষেই শেষপর্যন্ত মাঠে নামবেন বলে আশা করছি। কারন, অতীতে আওয়ামী লীগে সাংগঠনিকভাবে যত সমস্যা হয়েছে সবগুলো ভালোভাবে সমাধানও হয়েছে। শীলক‚পেও তাই হবে।
ছনুয়ার আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুজিবুর রহমান বলেন, আমাকে দল মনোনয়ন দিয়েছে। দল ও ভোটাররা আমার পক্ষেই আছে।
ছনুয়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. হারুনুর রশিদ বলেন, আমি দলের প্রয়োজনে সবসময় পাশে ছিলাম। ছনুয়া আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেছি। এখন হয়তো আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি কিন্তু জনগণ অতীতের মতো আমার সাথেই আছে। ভোটের দিন তার প্রমাণ মিলবে।