গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নকআউটে আর্জেন্টিনা

20

ক্রীড়া ডেস্ক

এক সৌদি আরবের কাছে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হেরে নকআউটে যাওয়া নিয়ে ভাবতে হচ্ছিল কাতার বিশ্বকাপের হট ফেবারিট আর্জেন্টিনার মতো ফুটবল দলকে। সেই হারের পর নক-আউটে ওঠার সমীকরণটাই কঠিন হয়ে গেছে স্কালোনির দলের জন্য। দ্বিতীয় ম্যাচে মেক্সিকোকে ২-০ গোলে প্রথম জয় তুলে নিলেও গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ পোল্যান্ড বাধা পেরিয়ে শেষ ষোলতে যেতে পারে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা জেগেছিল। তবে বাংলাদেশের আর্জেন্টাইন ফুটবল সমর্থকরা বিশ্বাস করতেন গ্রুপের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডকে হারিয়ে ঠিকই শেষ ষোলতে চলে যাবে মেসির দল। হলোও তাই, সেই ম্যাচেই ৩৮ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন মেসি। তবে মেসির সেই পেনাল্টি মিসের দুঃখ ভুলিয়ে দেয় দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল করে।
গতকাল রাত ১টার বাঁচা-মরার ম্যাচে পোল্যান্ডকে ২-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে নকআউট নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। প্রথমে অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, এরপর জুলিয়ান আলভারেজ। ৪৭ মিনিটে দলকে এগিয়ে নেন ম্যাক অ্যালিস্টার, এরপর ম্যাচের ৬৮ মিনিটে আলবিসেলেস্তাদের ২-০ গোলের লিদ এনে দেন আলভারেজ।
হারলে বিদায় জিতলে দ্বিতীয় রাউন্ড এমন সমীকরণের ম্যাচের শুরুতেই আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচে দ্বিতীয় মিনিটেই কর্নার আদায় করে তারা। শট কর্নার থেকে নেওয়া ক্রস থাকে হেড করতে গিয়ে বার্তোজ বেরেশিনস্কিকে ফাউল করেন নিকোলাস ওতামেন্দি। ফলের গোলের সুযোগ হাত ছাড়া হয় আর্জেন্টিনার। ৪ মিনিটে আক্রমণে যায় পোল্যান্ড। তবে তা থেকে সুবিধা করতে পারেনি তারা। ৭ মিনিটে পোল্যান্ডের ডি বক্সের বাইরে বল পেয়ে গোলমুখে শট করেন মেসি। তবে তা সহজেই নিজের গøাভসে নেন পোল্যান্ডের গোলরক্ষক ওজিয়েক সিজিসনি। ম্যাচের ৯ মিনিটে আর্জেন্টিনা গোছানে আক্রমণে গেলেও তা আটকে যায় পোল্যান্ড ডিফেন্সে। এক মিনিট পর একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে শট করেন মেসি। তবে তা আবারও আটকে দেন ওজিয়েক সিজিসনি।ম্যাচের ১১ মিনিটে পর পর দুটি আক্রমণ করলেও তা থেকে গোল বের করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ১৪ মিনিটে ডিফেন্স চেরা পাস দেন হুলিয়ান আলভারেজ। তবে তা কেউ রিসিভ করতে না পারায় কোন বিপদ হয়নি। ১৬ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর থেকে শট করেন মার্কোস আকুনা। তবে তা চলে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে। ১৯ মিনিটে মেসির ক্রস থেকে হেড করেন আকুনা। তবে তা সহজেই নিজের গ্লোভসে নেন ওজিয়েক সিজিসনি। দুই মিনিট পর কর্নার পায় পোল্যান্ড। তবে সুবিধা করতে পারেনি তারা। ২২ মিনিটে কর্নার আদায় করে আর্জেন্টিনা। তবে তা থেকে কোন বিপদ ঘটাতে পারেনি তারা।
ম্যাচের ২৮ মিনিটে ম্যাচের সহজ সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। ডি পলের ক্রস থেকে শট করেন হুলিয়ান আলভারেজ। তবে তা ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে প্রতিহত হয়। এরপর শট করেন আকুনা। কিন্তু সেটিও চলে যায় পোস্টের বাইর দিয়ে। ৩২ মিনিটে কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। ডি মারিয়ার নেওয়া কর্নার গোলমুখ থেকে ফিরিয়ে দেন পোলিশ গোলরক্ষক ওজিয়েক সিজিসনি।
৩৫ মিনিটে ফের কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। শট কর্নার থেকে বল পান মেসি। ডি বক্সের বাইর থেকে শট করেন তিনি। তবে তা চলে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে। এক মিনিট পর বাম দিকে থেকে ক্রস করেন হুলিয়ান আলভারেজ। তার ক্রস থেকে হেড করেন মেসি। তবে তা চলে যায় বাইর দিয়ে। তবে মেসিকে ফাউল করার কারণে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৩৯ মিনিটে মেসির নেওয়া পেনাল্টি বাম দিকে ঝাপিয়ে সেভ করেন পোলিশ গোলরক্ষক ওজিয়েক সিজিসনি।
ফলে গোল বঞ্চিত থাকে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৪০ মিনিটে বাম দিক থেকে ক্রস করেন মেসি। তবে তাতে কেউ পা ছোঁয়াতে পারেনি। এরপর বেশ কিছু আক্রমণ করেও গোল করতে ব্যর্থ হয় আর্জেন্টিনা। শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে গোলশূন্য থেকে বিরতিতে যায় দু’দল।
বিরতি থেকে ফিরেই গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে ডান দিক থেকে ডি মারিয়ার ক্রস থেকে ডি বক্সের ভেতর থেকে প্লেসিং শটে বল জালে জড়ান এলেক্সিস ম্যাক এলিস্টার। তার গোলে ম্যাচে প্রথম লিড পায় আর্জেন্টিনা। এটাই এলেক্সিস ম্যাকএলিস্টারের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল। ম্যাচের ৪৯ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে হেড করেন কামিল গ্লিক। তবে তা চলে যায় পোস্টের বাইর দিয়ে।
ম্যাচের ৫২ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় ডি বক্সে ঢুকে পড়েন মেসি। তবে শট করতে ব্যর্থ হন তিনি। এরপর আবারও অ্যাটাকে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৫৬ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর থেকে হুলিয়ান আলভারেজের নেওয়া শট ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে প্রতিহত হয়। ম্যাচের ৫৯ মিনিটে ডি মারিয়াক ও আকুনাকে উঠিয়ে নেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি।
ম্যাচের ৬১ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের সুযোগ পান ম্যাকএলিস্টার। তবে তার নেওয়া শট রুখে দেন ওজিয়েক সিজিসনি। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল নিয়ে যান মেসি। ডি বক্সে ঢুকে শট করলেও তা প্রতিহত হয় ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে। ম্যাচের ৬৮ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। গোছানো আক্রমণে এনজো ফার্নান্দেজের পাস থেকে ডি বক্সের ভেতরে বল পেয়ে দুর্দান্ত শটে বল জালে জড়ান হুলিয়ান আলভারেজ। তার গোলে ম্যাচে দুই গোলের লিড পায় আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের ৭১ মিনিটে গোলের সুযোগ পায় মেসি। বাম দিক থেকে আসা ক্রসে শট করেন মেসি। তবে তা অসাধরণে সেভ করেন ওজিয়েক সিজিসনি। এরপর খেলার গতি কিছুটা কমিয়ে আনে আর্জেন্টিনা। নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া নেওয়া করতে থাকে। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে আক্রমণে উঠে আর্জেন্টিনা। তবে তা আটকে যায় পোলিশ ডিফেন্সে।
ম্যাচের ৮৬ মিনিটে গোলের সুযোগ পায় বদলি নামা লাউতেরো মার্তিনেজ। তবে বল জালে জড়াতে পারেননি তিনি। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে ট্যাগলিয়াফিকো শট গোল লাইন থেকে ক্লিয়ার করেন পোলিশ ডিফেন্ডার ফলে লিড বাড়ানো হয় না আর্জেন্টিনার। এরপর কিছু আক্রমণ করলেও তা থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় আর্জেন্টিনা। শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে দুই ২-০ গোলের ব্যবধানে জিতে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা। এই জয়ের ফলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোতে পা রাখলো আর্জেন্টিনা।