গৃহকর পুনর্মূল্যায়নে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

12

নিজস্ব প্রতিবেদক

চার বছর পর সিটি করপোরেশন করবিধি অনুযায়ী পঞ্চবার্ষিকীয় পুনর্মূল্যায়ন হারে গৃহকর আদায় করতে পারবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। শর্ত পূরণ সাপেক্ষে সংস্থাটির আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছে স্থানীয় সরকারর মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত একটি পত্র চসিকে এসেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, গণহারে গৃহকর বাড়ানো হবে না। শুধুমাত্র করের আওতা বাড়ানো হবে। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের সই করা এক চিঠিতে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, নগরীতে গত ১০ বছর পূর্বের নির্ধারিত হারে জনসাধারণ কর দিচ্ছেন। এতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। জনগণের নাগরিক সেবা ও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড গতিশীল রাখাসহ সিটি করপোরেশনের আয়বৃদ্ধির স্বার্থে ব্যক্তিমালিকানাধীন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হোল্ডিংয়ের ওপর থাকা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হলো। এখন থেকে পঞ্চবার্ষিকী গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন অনুযায়ী গৃহকর আদায়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হলো।
চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি এসেছে। আমি এখনও সেটি দেখতে পারিনি। বুধবার দেখব। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, কোনোভাবেই কর বাড়ানো হবে না। শুধুমাত্র করের আওতা বাড়ানো হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সর্বশেষ গৃহকর পুনর্মূল্যায়নে অসঙ্গতি নিয়ে যদি কেউ আপিল করেন, তাদের জন্য অবশ্যই সহনীয় পর্যায়ে কর নির্ধারণ করা হবে।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর পুনর্মূল্যায়নের ভিত্তিতে গৃহকর আদায়ের ওপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে দুই দফা চিঠি দেয় চসিক। সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবকে দেওয়া সিটি করপোরেশনের চিঠিতে বলা হয়, সিটি করপোরেশনের করবিধি ১৯৮৬ এর ২১ বিধি অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পর পর গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের এখতিয়ার সিটি করপোরেশনগুলোকে দেওয়া হয়েছে।
সিটি করপোরেশন করবিধি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ২১ মার্চ কর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। প্রচলিত পদ্ধতি (স্থাপনার বর্গফুটের ভিত্তিতে) বাদ দিয়ে ভাড়ার ভিত্তিতে কর পুনর্মূল্যায়ন করে। এতে গৃহকর ‘অসহনীয়ভাবে’ বৃদ্ধি পাওয়ায় তা বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আন্দোলন-সমালোচনার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দেশের সব (১১টি) সিটি করপোরেশনের কর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম স্থগিত করে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর একটি চিঠি দেয়।
চসিক রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ২০২০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পঞ্চবার্ষিক গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে গৃহকর আদায়ে পত্র দেন সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। সে পত্রে বলা হয়, সিটি করপোরেশন সমূহের (কর) বিধি ১৯৮৬ এর ২১ বিধিমতে প্রতি পাঁচ বছর পর পর কায়িক অনুসন্ধানের মাধ্যমে গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের এখতিয়ার রয়েছে। সে মতে, ২০১৬-১৭ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করলেও বিভিন্ন মহল বিরোধিতা করে। তারই প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকারি বিভাগ ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর স্থগিতাদেশ দেওয়ায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে সিটি করপোরেশনের বছরপ্রতি ব্যয় বাড়লেও গৃহকর আদায় বাড়েনি। তাই ব্যক্তিগত হোল্ডিংগুলো বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি পুনর্মূল্যায়ন হারে গৃহকর প্রদান করে তাহলে বার্ষিক প্রায় ১৯১ কোটি টাকা বেশি গৃহকর আদায় করা সম্ভব। এমন আবেদনের ভিত্তিতে গত বছর সরকারি দপ্তর থেকে পঞ্চবার্ষিক মূল্যায়ন পদ্ধতিতে কর আদায়ে অনুমতি দেয় মন্ত্রণালয়। তারপর থেকে ওভাবেই সরকারি দপ্তর থেকে গৃহকর আদায় করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।