গণতন্ত্র ও সুশাসনের চর্চা হোক এখান থেকেই

42

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক একমাসের মাথায় সংসদ অধিবেশন শুরু হয়েছে। সূত্র জানায় ঐক্যফ্রন্টের আটজন ছাড়া বাকি ২৯১জন নির্বাচিত সংসদ এ অধিবেশনে যোগদান করেছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যু হওয়ায় আসনটি শূন্য রয়েছে। প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসেছেন জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভাষণের মাধ্যমে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনেই সরকার প্রধান ও বিরোধী দলের উপনেতা সংসদকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপতি তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধিকে স্থায়ী রূপ দিতে সব বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেয়ার আহŸান জানিয়েছেন, তাঁর ভাষায় ‘জাতীয় ঐকমত্য ব্যতীত শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্ত-সামাজিক উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে সকলের ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আমি উদাত্ত আহব্বান জানাই।’
বিধি ও রীতি অনুযায়ী কোনো সংসদের প্রথম এবং নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেয়ার বিধান রয়েছে। অধিবেশনের পুরোটাজুড়েই এই ভাষণের ওপর আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হবে।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নিবার্চনের মধ্য দিয়ে গঠিত এই সংসদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রয়েছে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ভোটে আটটি আসনে বিজয়ী বিএনপি ও গণফোরামের নেতারা এখনো শপথ নেননি। তাদের বাদ রেখেই যাত্রা শুরু করেছে একাদশ সংসদ।
আমরা নতুন সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের সংসদ অধিবেশনের মাধ্যমে শুরু হওয়া যাত্রার শুভ কামনা করি। একটি দেশের গণতান্ত্রিক রীতি, আইনের শাসন ও জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করণে সংসদই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সংসদ সদস্যরা দেশ ও জাতীর প্রয়োজনে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি স্ব স্ব লাকার উন্নয়নেও কার্যকর ভূমিকা রাখেন। যদিও উন্নয়ন কর্মকান্ড একটি সরকারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। স্থানীয় সরকার পরিষদের প্রতিনিধিরা যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সংসদ সদস্যরা সরাসরি উন্নয়ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হয়ে যান। ফলে নির্বাচনে আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতির চেয়ে এলাকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বেশি থাকে সংসদ সদস্য প্রার্থীদের। এতে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের ক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পেলেও বলতে দ্বিধা নেই; এতে বরং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। আমরা আশা করি, এবার যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তাদেও সামনে জনপ্রত্যাশা পূরণে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা পূরণে শতভাগ আন্তরিক হবেন। পাশাপাশি সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা বাস্তবায়নে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করবেন। আমরা জানি, সরকার বিগত দুই মেয়াদে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে যে সফলতা প্রদর্শন করেছে-এবার সেইসব অর্জনকে আরো অর্থবহ এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে দুর্নীতিকে না বলা, গণতন্ত্রকে সুসংহত করা এবং সুশাসন নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এতিনটি বিষয়ে তার সরকারের ঘোষণা জনগণের কাছে উপস্থাপন করেছেন।
ইতোমধ্যে দুর্নীতির ব্যাপারে দুর্নীতি কমিশনের ব্যাপক তৎপরতাও আমাদের নজরে এসেছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণেও একই কথার প্রতিধ্বনী করেছেন। ‘নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আশা করি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ আরও সুসংহত ও গতিশীল হবে। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হেঁটেছি, সে পথেই বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’ আমরা প্রত্যাশা করছি, নতুন সরকার নতুন বিরোধী দল গঠনমূলক সমালোচনা, পরস্পর শ্রদ্ধা ও সহনশীল পরিবেশে সংসদকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনা করবেন। দেশকে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে নিয়ে যাবেন।