খাশোগির মৃত্যুর চেয়ে অস্ত্র বিক্রিকেই প্রাধান্য দিয়েছে যুক্তরাজ্য?

37

অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার ঘটনায় সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে নিরপেক্ষ কূটনৈতিক অবস্থান নেয়নি সে দেশের সরকার। খাশোগি হত্যার পর তাই দেশের দেশের সবচেয়ে বড় অস্ত্র নির্মাতা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘বিএই সিস্টেমস’-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্ভাব্য করণীয় নিয়ে আলোচনা করেছিল তারা। যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দফতর-ডিআইটি নিজেই এ তথ্য প্রকাশ করেছে। তবে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এ ব্যাপারে অতিরিক্ত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। বিএই সিস্টেমস-এর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনেও ব্যর্থ হয়েছে ওই সংবাদমাধ্যম। সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি নিয়ে যুক্তরাজ্য যখন নতুন আইনি চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে, তখনই এ স্পর্শকাতর তথ্য প্রকাশ করা হলো।গত বছরের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তানবুলের সৌদি দূতাবাসে হত্যাকান্ডের শিকার হন রাজপরিবারের সমালোচক অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগি। হত্যাকান্ডে সৌদি আরবের শীর্ষ নেতৃত্বের সম্পৃক্ততার স্পষ্ট আলামত মেলে। গোটা পশ্চিমা দুনিয়ায় এই হত্যাকান্ড নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। সৌদি আরবের কাছে যারা অস্ত্র বিক্রি করে সেইসব দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় প্রবল দাবি ওঠে রিয়াদের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের। ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও একই ধরনের দাবি উঠেছিল। তবে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দফতর নিজেই জানিয়েছে, সৌদি আরবের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য পদক্ষেপের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে যুক্তরাজ্যের সবথেকে বড় এবং বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ অস্ত্র বিক্রেতা বহুজাতিক কোম্পানি বিএই সিস্টেমস-এর সঙ্গে আলোচনা করেছিল ব্রিটিশ সরকার।
সৌদি আরবের সামরিক বিমান, বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রের প্রধান সরবরাহকারীদের অন্যতম যুক্তরাজ্য। সৌদি সেনাদের প্রশিক্ষণ ও প্রাযুক্তিক সমর্থন দেওয়া হয়ে থাকে দেশটির পক্ষ থেকে। গত ফেব্রুয়ারিতে সৌদি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ১৭ জন ব্রিটিশ সেনা যুক্ত ছিল। এর মধ্যে তিনজন নিয়োজিত ছিল সৌদি বিমান অভিযান কেন্দ্রে। ২০১৫ সালের মার্চে সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনে হুথিবিরোধী অভিযান শুরুর পর সৌদি বাহিনীকে ৪ হাজার ৭শ কোটি পাউন্ড মূল্যের অস্ত্র সরবরাহের চুক্তি করে যুক্তরাজ্য। ২০১৮ সালেও বিএই সিস্টেমস এর মোট অস্ত্র বিক্রির প্রায় ১৪ শতাংশই হয়েছে সৌদি আরবে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দফতর জানিয়েছে, গত বছরের ২ অক্টোবর খাশোগি হত্যাকান্ডের পর ব্রিটিশ বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়াম ফক্স বিএই সিস্টেমস এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। খাশোগি হত্যার প্রতিক্রিয়া জানালে সৌদি আরবের সঙ্গে করপোরেশনের সম্পর্কের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা। একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, খাশোগি হত্যা নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতিক্রিয়া ও বিএই-সৌদি স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করতে ২৯ অক্টোবর ওই বৈঠক হয়। মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, রিয়াদে ’দাভোস ইন দ্য ডেজার্ট’ নামক বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজনের কয়েক দিন পরই অনুষ্ঠিত হয় বৈঠকটি। ব্রিটিশ বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়াম ফক্সসহ অনেক রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়িক নেতা ওই বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
এমন এক সময়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বাণিজ্য দফতরের স্বীকারোক্তির তথ্য পাওয়া গেল, যখন সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির প্রশ্নে আদালতে এক গুরুত্বপূর্ণ আপিলের নিষ্পত্তি হবে। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) লন্ডনের আপিল আদালতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এনজিও ক্যাম্পেইন এগেইন্সট আর্মস ট্রেড (সিএএটি) এর করা একটি আপিল আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৭ সালে নিম্ন আদালতের দেওয়া একটি রুলের বিরুদ্ধে এ শুনানি হবে। ওই রুলে ইয়েমেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রাখতে যুক্তরাজ্যকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।