কর্ণফুলী রক্ষায় সংযোগস্থলে স্টিলের ট্র্যাপ স্থাপন সংসদীয় কমিটির সুপারিশ কার্যকর হোক

27

 

বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাল ও নদীর গতিপ্রবাহ সুরক্ষা ও পানির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য বড় পরিসরে ট্র্যাপ ব্যবহার করে আসছে বহু বছর আগে থেকে। আমাদের দেশে নগরীর বাসা-বাড়ি বা হোটেল-রেঁস্তোরায় সেনিটেশনে ছোট ছোট ট্র্যাপ ব্যবহার হয়ে আসলেও বড় পরিসরে এ জাতীয় ট্র্যাপ ব্যবহার এখনও দেখা যায় নি। কিন্তু খাল, নালা-নর্দমা ও নদী ব্যবহারে আমাদের যে অসচেতনতা, তা থেকে মুক্তি মিলেতে পারে নদী ও খালের সংযোগস্থলে ট্র্যাপ স্তুাপনের মাধ্যমে। এ বাস্তবতা দেরিতে হলেও উপলব্ধি করতে পেরেছে সরকার। সম্প্রতি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন শীর্ষক প্রকল্পে কর্ণফুলী নদী রক্ষায় খাল ও নদীর সংযোগস্থলে স্টিলের ট্র্যাপ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে মর্মে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে এ অনুমান। আমরা সংসদীয় কমিটির এ সময়োপযোগী সুপারিশের কার্যকর দেখতে চাই। ট্র্যাপের মাধ্যমে কর্ণফুলীকে বাঁচানো গেলে দেশ বাঁচবে নিশ্চিত করে বলা যায়। এ বিষয়ে পূর্বের গৃহীত পরিকল্পনা গুরুত্বের সাথে নিয়ে মন্ত্রণালয়কে পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দেয়া হয়। এ সংবাদের ভিত্তিতে দৈনিক পূর্বদেশ ট্র্যাপের সুফল নিয়ে পৃথক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গতকাল। এতে বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়, খালের সংযোগ স্থলে ট্র্যাপ বসানোর মাধ্যমে খালের ময়লা নদীতে যাওয়া রোধ হবে। ট্র্যাপের মধ্যে আটকে যাবে সকল ধরনের ময়লা। প্লাস্টিক, বিভিন্ন বোতল, পলিথিন থেকে শুরু করে অন্যান্য ময়লাও আটকে যাবে ট্র্যাপে। খালের পানি শুধু নদীতে যাবে। এতে পলিথিন ও অন্যান্য ময়লা খালের মাধ্যমে নদীতে পড়া থেকে রক্ষা পাবে। ময়লাগুলো এক জায়গাতে আনা সম্ভব হবে। পরবর্তিতে এসব ময়লা ধ্বংস বা অন্য কোনো কাজেও ব্যবহার উপযোগী করা যেতে পারে। ট্র্যাপ হবে এমন একটি বিশেষ ব্যবস্থা, যার মধ্যে দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও পলি বা নর্দমা বিশেষ ব্যবস্থায় আটকে যাবে। বিশেষ ডিজাইনে এই ট্র্যাপ তৈরি করা হয়। বিশেষ মডেলের এই ট্র্যাপ বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে তৈরি করা যায়। স্টিল ট্র্যাপের বিশেষত্ব হলো, এটি মরিচারোধী, সহজে মেনটেইনেন্স যোগ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী।
প্রতিবেদনটিতে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলীর প্রদত্ত বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য, তাতে বলা হয়, খালের মুখের ট্র্যাপ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এটি পুরোটা নির্ভর করছে যারা প্রকল্প নিচ্ছে তারা কোন ধরনের ট্র্যাপ নিচ্ছেন সেটার উপর। যতটুকু মনে হচ্ছে, খালের বিভিন্ন ময়লা আটকানোর জন্য এটি করা হচ্ছে। এমন অনেক মেশিন বিদেশে পাওয়া যায়। ম্যানুয়ালি মেশিন অপারেট করে ময়লাগুলো তুলে আনা হয়। সার্বক্ষণিক মেশিনগুলো পরিচালনার জন্য লোক নিয়োজিত রাখতে হয়। তিনি বলেন, ময়লা, পলিথিন এসব খালের মাধ্যমে নদীতে যাচ্ছে। নদীতে গিয়ে সেগুলো স্তরে স্তরে জমাট হয়ে ভরাট হচ্ছে। ট্র্যাপ বসিয়ে পলিথিন বা ময়লা নদীতে যাওয়া রোধ করা ভাল উদ্যোগ। তবে ট্র্যাপগুলো কি ধরনের হচ্ছে সেটা যে সংস্থার কাজ তারাই ভাল বলতে পারবেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, খালের মুখে ট্র্যাপ করা হলো সোজা কথায় একটা ফাঁদ তৈরি করা। যেটাতে পলিথিন-বোতল বা ময়লা আটকে যাবে। পানি আর ময়লা একসাথে গেলেও খালের মুখে গিয়ে ময়লা আটকে যাবে কিন্তু পানি চলে যাবে। ট্র্যাপ আমাদের এখানে তেমন ব্যবহার না হলেও ইন্টারসেক্টর হিসাবে কিছু জায়গায় ময়লা আটকানোর ব্যবস্থা আছে। ট্র্যাপ স্টিলের হওয়া ভালো। স্টিলের হলে মরিচারোধী ও টেকসই হবে। তাছাড়া স্টিলের জিনিস ম্যানটেনেন্স করাও সহজ। কোনো সময় ম্যানটেনেন্সের প্রয়োজন হলে আলাদা আলাদা অংশ খুলে ম্যানটেনেন্স করা যাবে। আমরা মনে করি, কর্ণফুলী দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান শক্তি। একে রক্ষা করা এখন একান্তই জরুরি। চট্টগ্রাম নগরীর ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানের খাল, নালা নর্দমাগুলো পাহাড়ের পলিমাটিসহ ময়লা আবর্জনায় ভরপুর তাকে। ফলে জলাবদ্ধতার দুঃখও চট্টগ্রামবাসীকে ছাড়ছেনা। এ অবস্থায় জলাবদ্ধতা নিরসনে চরলমান প্রকল্পে স্টিলের ট্র্যাপ স্থাপনের উদ্যোগ সুফল বয়ে আনবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।