করোনা মহামারির ভয়াল রূপ সংক্রমণ থামাতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে

5

 

মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ১৬ মাস কেটে গেল। কিন্তু করোনা কোনভাবেই মানব সংশ্রব ছাড়ছেনা। তার মানব বিধ্বংসি পরোওয়ানাকে কোনভাবেই যেন রোখা যাচ্ছেনা। দফায় দফায় ধরন পরিবর্তন করে এ ভাইরাস ব্যাপক সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে গত সোমবার। আর আক্রান্তের হার বেড়েছে গত মঙ্গলবার। সেদিন সকাল ৮টার আগের ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৬৪ জনের এবং মঙ্গলবার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ১৬৩ জন আর আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৫শত ২৫জন মানুষ। এ হিসাবে শনাক্তের হার উঠে গেছে ৩০ শতাংশের বেশি। সংক্রমণের সর্বশেষ ধারায় আরো কিছু পরিবর্তন এসেছে। আগে গ্রামাঞ্চলে সংক্রমণ খুবই কম ছিল, এবার সেখানেও সংক্রমণ বেড়েছে। এরই মধ্যে গ্রামাঞ্চলে সংক্রমণের হার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশে উঠেছে। এবার নারীরাও অধিক হারে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে রোগী নিয়ে আসতে আসতে পথেই অনেক রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ভারতীয় ধরন বা ডেল্টা ভেরিয়েন্ট বাংলাদেশেও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভারতীয় ধরনের হার ৭৯ ভাগ প্রায়। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনার এই ভয়ংকর রূপ আরও বাড়বে। তারা বলছেন, রোগতাত্তি¡ক নিয়ম অনুযায়ী ১ জুলাইয়ের সর্বাত্মক লকডাউনের আগের অবস্থার কারণে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত করোনার এই ভয়ংকর রূপ দেখতে হবে। তারপর অবস্থার কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে আবার নাও হতে পারে। সম্প্রতি একটি অনলাইন নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎ-এ স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বলেন, আমরা কীসের লকডাউন, কীসের শাটডাউন দেখছি? রাস্তাঘাটে সেনাবাহিনী ঘুরছে, পুলিশ ঘুরছে, বিজিবি ঘুরছে কিন্তু তাতে কী লাভ হচ্ছে? করোনার এই ভয়ংকর রূপ এটাই শেষ না, আরও দেখাবে, আরও দেখাবে, অবশ্যই দেখাবে, অবশ্যই দেখাবে। আসল কাজ কিছু হচ্ছে না। মানুষকে মাস্ক পরাতে, প্রতিটি মানুষকে, একশ শতাংশ মানুষকে মাস্ক পরাতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ছাড়া আর কোনও কিছুতেই পরিত্রাণ হবে না। আবু জামিল ফয়সাল বলেন, সরকারকে বলবো সব খুলে দেওয়া হোক। কেবল শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করুক। মাস্ক না পরলেই জেলখানায় যেতে হবে। আর কোনও উপায় নেই দেশকে রক্ষা করার। আবু জামিল ফয়সালের কথায় আমাদের দ্বিমত করার কোন সুযোগ নেই। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি থামাতে সরকার কঠোর লকডাউন আরোপ করেছে, ক্রমান্বয়ে তা বাড়ছে। কিন্তু দেশের সব মানুষ তা মানতে চাইছে না। নানা অজুহাতে ঘরের বাইরে চলে আসছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও রয়েছে চরম উদাসীনতা, অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরছেনা। এরই মধ্যে এগিয়ে আসছে কোরবানির ঈদ। বসতে শুরু করেছে পশুর হাট। ঈদ যত কাছে আসবে, মানুষের চলাচল তত বেড়ে যাবে। লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। ঈদের পরপরই আবার তারা নানা ধরনের যানবাহনে গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরবে। এ সময় সংক্রমণের গতি অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেওয়া হবে তার পরিকল্পনা এখনই করতে হবে। টিকার যে সাময়িক সংকট দেখা গিয়েছিল, তা এখন আর নেই। ৪৫ লাখ ডোজ টিকা ইতোমধ্যে দেশে চলে এসেছে। এ মাসের মধ্যে সব মিলিয়ে এক কোটি ডোজ টিকা আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও শিগগিরই চলে আসবে। আর ডিসেম্বরের মধ্যে আসবে ১০ কোটি ডোজ। এখন প্রয়োজন দ্রæত এসব টিকা প্রদান। সরকার সে চেষ্টাও করছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে আবার টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হচ্ছে। নিবন্ধনের বয়স ৪০ থেকে কমিয়ে ৩৫ করা হয়েছে। তবে এসময় দেশের সকল জনগোষ্ঠীকে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনার উদ্যোগ নিতে হবে। রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় অনেক হাসপাতালেই রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না। স্বল্পতার কারণে আইসিইউ সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। ভেন্টিলেটর, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ অনেক চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। তাই দ্রæত হাসপাতালগুলোতে ধারণক্ষমতা ও জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে বাড়াতে হবে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানের সংখ্যা। প্রয়োজন মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া। আমরা আশা করি, অন্ধকারের পর আলো আসবেই। অচিরেই বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসী এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।