করুণাময়ী মা দুর্গা

38

 

দুর্জেয় তত্ত্বস্বরূপা দুর্গার প্রকৃষ্ট পরিচয়-তিনি জগদ্ধাত্রী বিশ্বপালিকা মা। বেদ-তন্ত্র ও পুরাণে, সাধকের চেতনায় শতনামে বহুরূপে উদ্ভাসিতা হয়েছেন মহাশক্তি। দেবীমাহাত্ম্য শ্রীশ্রী চÐী মার্কÐেয় পুরাণের অন্তর্গত। যাঁর অপরিমেয় মহিমা, তাঁর অচিন্ত্য রূপচরিত বর্ণনা করার সাধ্য ও শক্তি এ সৃষ্টির মাঝে কারো নেই। দেবী কবচের সূচনায় শুভঙ্করী মায়ের নয়টি রূপের পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁরা হলেন-শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মান্ডা, ষ্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রী, মহাগৌরী ও সিদ্ধিদাত্রী। প্রথম চারটির লীলাভূমি হিমগিরি। কাত্যায়নী বিন্ধ্যাচলবাসিনী। অপর চারটির লীলাভূমি শিবের আনন্দধাম কৈলাস। কাত্য গোত্রাবলম্বী মহর্ষি ‘কত’ এর পুত্র ঋষি কাত্যায়ন। তিনি জগজ্জননী আদ্যাশক্তি মহামায়াকে কন্যারূপে লাভ করবার ইচ্ছা নিয়ে বহুযুগ তপস্যা করেছেন। একসময় মহিষাসুরের প্রবল পরাক্রমে দেবলোক যখন পর্যুদস্ত হলো, দেবতারা স্বর্গচ্যুত হলেন। অতঃপর সকল দেবতার তেজে জ্বলন্ত পর্বতের মতো দিগন্তব্যাপী সৃষ্টি হয় এক সংহত তেজের। হিমালয়বাসী কাত্যায়ন ঋষি সেই তেজকে উপাকৃত করে এক নারী মূর্তির রূপ দেন। ঋষির তপস্যায় তুষ্ট হয়ে জগদম্বা তাঁর গৃহে কন্যারূপে আবির্ভূত হন, যিনি আমাদের মা দুর্গা। ভগবানের সাথে যুক্ত হবার পন্থায় মা ও সন্তানের সম্পর্ক অধিকতর নিবিড়। মাতৃভাব অতি শুদ্ধভাব। ভগবানকে মাতৃরূপে লাভ সনাতনীদের একান্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। তাই দুর্গাপূজা হয়ে উঠেছে বাঙালির জীবনের অন্যতম আরাধনার বিষয়। তিনিই হিমালয়ের উমা নন্দিনী।’ বস্তুতঃ শক্তি একদিকে রুদ্রী, অপর বিভাবে সৌম্যা। যিনি দানবদলনী, তিনিই শান্তিরূপিনী। দেবী উপনিষদের তাই কীর্তিত হয়েছে দেবী মহিমা। যা থেকে শ্রেষ্ঠতর কিছুই নেই, দুর্গা নামে তিনিই পরিকীর্তিতা। দুর্গতি হতে রক্ষা করেন যিনি, তিনিই দুর্গা নামে অভিহিতা। দুস্তর সংসার সমুদ্রের তরণী, অদ্বিতীয়া ব্রহ্মময়ী মা জগতের দুঃখহারিণী। মা কল্যাণী দারিদ্রহারিণী, দুঃখ-ভয় বিনাশিনী। তাঁর মতো করুণাময়ী আর কেউ নেই।