কন্টেইনার ডিপোতে ভয়বহ আগুন মানবতার পাশে দাঁড়ান

33

 

সীতাকুন্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকায় অবস্থিত বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও আগুনে মানবতার চরম বিপর্যয় ঘটেছে। মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় চল্লিশের অধিক মানুষ। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। পাশাপশি বিএম কন্টেইনার ডিপোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাজার কোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য মালামালসহ কয়েকশ কন্টেইনার পুরে ছাই হয়ে গেছে। ডিপোতে কর্মরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারিও হতাহত হয়েছেন। বিশেষ করে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের প্রথম টিম যখন আগুন নেভাতে আসে, তখন তারাও চরম বিপর্যয়ে পড়েছিলেন, তাদের কয়েকজন কর্মী হতাহত হয়েছেন। সীতাকুÐের এ ট্র্যাজেডি চট্টগ্রামবাসীকে বাকরূদ্ধ করেছে, শোক আর বেদনায় ভারি করে তুলেছে সকলের মন। আমরাও শোকাহত, মর্মাহত। এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করছি, শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনাসহ যারা আহত তাদের প্রতি সহমর্মিতা ও আশু আরোগ্য কামনা করছি। আমরা জানি, বিএম কনটেইনার কর্তৃপক্ষ স্মার্ট গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। দেশের অর্থনেতিক উন্নয়নে এ গ্রুপের ব্যাপক অবদান রয়েছে। রপ্তানি খাতে এ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যস্থাপনা পরিচালক বেশ কয়েকবছর ধরে জাতীয় স্বীকৃতি পেয়ে আসছেন। ইতোমধ্যে আমরা জানতে পারি, দেশ ও আন্তর্জাতিক বিধিবিধানকে যথাযথভাবে অনুসরণ করে বিএম কনটেইনার ডিপো সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। অগ্নি দুর্ঘটনার পর বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট মহল এ কথা স্বীকার করেছেন। এরপরও অজ্ঞাতকারণে ডিপোতে অগ্নিকান্ড ও ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটেছে, আগুনের উৎস কী ? সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক ঘটিত তদন্তে শিগগিরই বেরিয়ে আসবে, আশা করা যায়। এ দুর্ঘটনা শুধু মানবতার বিপর্যয় ঘটেনি, বিপর্যয় ঘটেছে দেশের অর্থনীতির একটি বড় যোগানদাতার; দেশের একটি বড় রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের। এ অবস্থায় দোষারোপের কিংবা প্রতিহিংসার বশবতি না হয়ে আমাদের চরম ধৈর্য ও মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে সকলকে। মানবিক ও আর্থিক বিপর্যয় ঠেকাতে সহায়তার হাত প্রসারিত করতে হবে। যারা হতাহত হয়েছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা এ চরম বিপর্যয় ও হতাশার মধ্যেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। গত শনিবার রাতে যখন বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন জ্বলে উঠে একেএকে কন্টেইনারগুলো বিস্ফোরণ হতে চলছিল, তখন চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের সকল ইউনিট, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, স্থানীয় প্রশাসন, রেডক্রিসেন্ট, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ, আওয়ামীলীগ ও তার সকল সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, কর্মীবাহিনীসহ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, স্বেচ্ছ্বাসেবী সংগঠন, রক্তাদাতা, ডোনার সংগঠন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এমনকি ব্যক্তিগতভাবে সীতাকুন্ড ডিপোতে, স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে হতাহতদের উদ্ধার, অ্যাম্বুলেন্স সহযোগিতা, ব্যক্তিগত গাড়ি দিয়ে, ওষুধপত্র, বিছানা, খাবার, পানিয় ইত্যাদি দিয়ে যেভাবে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে। চট্টগ্রামবাসীর এ ধরণের সহযোগিতার অতীত ইতিহাস থাকলেও এ প্রজন্ম এবং বিশ্ববাসী আরো একবার দেখতে পেয়েছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসীর এমন আবেগ ও উদারমন নিয়ে সহযোগিতার কথা লিখতে গিয়ে নিজেদর চট্টগ্রামের মাটিতে জন্ম নেয়াকে গর্বের সাথে স্মরণ করেছেন। আমরা মনে করি, দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নেয়ায় সমুচিৎ। তবে এ ধরণের দুর্ঘটনার কর্তৃপক্ষের কোন ত্রুটি বা অব্যবস্থাপনার কারণে হয়েছে কিনা, কোন নাশকতা বা ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা তদন্ত না করা পর্যন্ত মন্তব্য করা মোটেই উচিৎ নয়। এক্ষেত্রে সংযম এবং পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য ধৈর্যধারণ করতে পারাটাই মহত্বের কাজ। আমরা কর্তৃপক্ষের সর্বাত্মক সহযোগিতার বিষয়টি লক্ষ্য করেছি। তারা হতাহতদের পরিবারকে সর্বোচ্চ আর্থিক ও চিকিৎসা সহযোগিতাসহ বেতন-ভাতা নিয়মিতভাবে অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা আশা করি, বিএম কন্টেইনার কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে আন্তরিক হবেন।