কক্সবাজারের সৌন্দর্য বাড়াতে নব আয়োজন

52

রাহুল দাশ নয়ন

কক্সবাজারের মহেশখালী-মাতারবাড়ি একসময় ছিল অবহেলিত উপক‚লীয় জনপদ। পাঁচ বছর আগেও এই জনপদে বাইরের মানুষের আনাগোনা ছিল কম। সরকারের উন্নয়নে পুরো এলাকাটি এখন অচেনা। পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। বড়বড় প্রকল্পে পুরো এলাকাটি শিল্পনগরীতে রূপ নিয়েছে। এতদিন বিশেষায়িত প্রকল্পগুলোর ভৌত উন্নয়ন হলেও এবার আশপাশের এলাকার উন্নয়নে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে চকরিয়া, মহেশখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষের জীবনমান উন্নয়নে রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণসহ নানা কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। তিন হাজার ৬৪৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘দক্ষিণ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক উন্নয়ন’ প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটিতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক উন্নয়নের কথা বলা হলেও মূলত কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া ও মহেশখালীর চলমান উন্নয়ন এবং রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর সহায়তায় এটি হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এলাকার পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে বলেই মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর সাত্তার পূর্বদেশকে বলেন, ‘মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও চকরিয়ার আশপাশের এলাকায় সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে। এসব প্রকল্পে যাতায়াত ও এলাকাবাসীর জীবনমান উন্নয়ন এবং রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্যই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পুরো এলাকার যুগপৎ উন্নয়ন সাধিত হবে। উন্নয়নে পাল্টে যাবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান। সুন্দর পরিকল্পনায় প্রকল্পটি সাজানো হয়েছে।’
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, প্রকল্পের উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। যার ৬৮ শতাংশ অর্থাৎ দুই হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা ব্যয় নির্বাহ করবে দাতাসংস্থা জাইকা। বাকি ৩২ শতাংশ অর্থাৎ এক হাজার ১৪৪ কোটি টাকা দিবে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের আওতায় ৯৬ কিলোমিটার রাস্তাঘাট নির্মাণে ৩৩০ কোটি টাকা, ১০৩৫ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণে ১২৮ কোটি টাকা, ১৪ কিলোমিটার খাল সংস্কার ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৪৩ কোটি টাকা, রাস্তার পাশে ১৯২ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণে ১০০ কোটি টাকা, চারটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণে ১০০ কোটি টাকা, টাউনশিপ উন্নয়ন হিসেবে তিন এলাকায় আবাসিক ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৬৭ কোটি টাকা, ৯টি মার্কেট নির্মাণে ৯৬ কোটি টাকা, তিন কোটি ৩৭ লক্ষ টাকায় ৯টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, দুই হাজার ৪০৯টি সড়কবাতি বসাতে ১৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং তিনটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণেই বড় ব্যয় ধরা হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, মহেশখালীর মাতারবাড়ি এলাকাসহ উপকূলে সরকারের নির্মিত প্রকল্পগুলোতে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেখানে যাতায়াত করবে প্রচুর গাড়ি। পাশাপাশি ভারী ইকুইপমেন্ট পরিবহন করা হবে। ফলে দ্রুত ও অনায়াসে যানবাহন যাতে চলাচল করতে পারে সেজন্য ৯৬ কিলোমিটার সড়কই হবে বড় ও প্রশস্ত। পাহাড়ি ঢলের পানিতে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকায় খালগুলো সংস্কার ও ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্পে রাখা হয়েছে। চকরিয়া ও মহেশখালী এলাকা ধীরে ধীরে শহরের মতো আকার ধারণ করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছে। চকরিয়া, মহেশখালী পৌরসভা, মহেশখালী উপজেলার পৃথক তিনটি জায়গায় আবাসন ব্যবস্থা করা হবে। আপাতত সেখানে বড় ভবন কিংবা বসতঘর নির্মিত না হলেও তিনটি এলাকাকে টাউনশিপ উন্নয়নের আওতায় প্রস্তুত রাখা হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর সাত্তার পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রকল্পের সুফল পাবে দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজারবাসী। প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামো নির্মাণে ধাপে ধাপে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পটি হবে অত্যন্ত যুগপোযোগী ও কার্যকর প্রকল্প। একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করায় বাস্তবায়নে আর বাধা রইলো না। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পিডি নিয়োগ হলেই প্রকল্প কাজ শুরু হবে।’