ওমরা হজের গুরুত্ব

66

 

‘ওমরা’ অর্থ জিয়ারত করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষা বিশেষ পদ্ধতিতে (ইহরামসহ) খানায়ে খানায়ে কাবা ও সাফা-মারওয়া মধ্যে সাই (প্রদক্ষিণ) করাকে ‘ওমরা’ হজ বলা হয়। পাঁচ দিন অর্থাৎ জিলহজ মাসের ৯ তারিখ হতে ১৩ তারিখ ব্যতীত বছরের যে কোন দিন ওমরা আদায় করা যায়। ঈমাম আবু হানিফা (রহ.)’র মাজহাব অনুসারে শারীরিক ও আর্থিক সক্ষম ব্যক্তি জীবনে একবার ওমরা পালন করা সুন্নাত। আর্থিক ওমরা পুণ্যের ইবাদত। ওমরা হজকে ছোট হজও বলা হয়।
যে সকল শর্ত হজ ফরজ হয় ওমরার জন্যও সব প্রয়োজ্য। হজ ও ওমরার ইহরামের নিয়মাবলীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। হজের ইহরামের পর যেসব বিষয় হজ পালনকারীর জন্য হারাম, মাকরূহ, সুন্নাত এবং জায়েজ হয় তা ওমরার ক্ষেত্রেও একই। তবে কিছু ক্ষেত্রে হজ ও ওমরার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
(১) হজ ফরজ কিন্তু ওমরা সুন্নাতে মোয়াক্কদা।
(২) হজের মধ্যে আরাফাত ও মোজদালেফায় অবস্থান করা কর্তব্য কিন্তু ওমরার প্রয়োজন নেই।
(৩) হজের সময় নির্ধারিত কিন্তু উমরার সময় বছরে পাঁচ দিন ব্যতীত নির্ধারিত নয়।
(৪) হজের মধ্যে জোহর ও এশা এবং মাগরিব ও এশা নামাজ এক সাথে আদায় করার বিধান রয়েছে কিন্তু ওমরার এ বিধান বৈধ নয়।
(৫) হজের মধ্যে তাওয়াফে কুদুমের কোন কোন ক্ষেত্রে করার বিধান আছে কিন্তু তাওয়াফে কুদুমের বিধান ওমরায় নেই।
(৬) হজের মধ্যে খোৎবার বিধান আছে ওমরায় নেই।
(৭) হজের তাওয়াফে বিদায় কর্তব্য, কিন্তু ওমরায় নয়।
(৮) হজ ফরজ হওয়ার পর আদায় না করে থাকলে মৃত্যুর পূর্বে অসিয়ত করে যাওয়া কর্তব্য কিন্তু ওমরার ক্ষেত্রে হয়।
(৯) হেয়মের অধিবাসীগণ হেরম হতে ইহরাম পরিধান করবে। কিন্তু ওমরাকারী হিল্ল থেকে ইহবাস পরিধান করবে।
(১০) ওমরা হজে হাওয়াফ শুরুর পূর্ব মুহুর্তে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করতে হয়, কিন্তু হজের ক্ষেত্রে ১০ জিলহজ জামরায়ে আকাবায়ে রামি আরম্ভ করার পূর্বে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করতে হয়।
ওমরার জন্য দুটি ফরজ। নিয়ত করে তা ললিয়া পাঠ এবং তাওয়াফ করা। ওয়াজিব দুটি, সাফা-মারওয়া সাঈ করা এবং মাথার চুল মুন্ডানো বা ছোট করা। (শামী, ২য় খন্ড)
ওমরার সুন্নাত : হজের ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ এবং মাথা মুন্ডানো বা চুল কাটার জন্য যেসব কাজ সুন্নত ও মুস্তাহাব ওমরার ক্ষেত্রেও একই ভাবে প্রয়োজ্য। (আলমগীরী, ১ম খন্ড)।
মনে রাখতে হবে যদি কোন ব্যক্তি একটি ওমরা আদায় করে কয়েক ব্যক্তির প্রতি সওয়াব রেসানীর নিয়ম করে তা জায়েজ হবে। কিন্তু অধিক ব্যক্তির পক্ষ হতে এক ওমরা আদায় বৈধ হবে না। ওমরা হজ প্রত্যেকের পক্ষে পৃথক আদায় করতে হয়।
পবিত্র রমজান মাসে ওমরা আদায় অত্যন্ত পুণ্যের ব্যাপার। ফফিহগণ হজের সময় সওয়াব বলে উল্লেখ করেছে। মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে ওমরা করলো, সে যেন আমার সাথে হজ করলো। যদি কেউ শাবান মাসে ওমরার ইহরাম পরিধান করে এবং রমজান মাসে শেষ করে তবে যদি সে অধিকাংশ তাওয়াফ (চারচক্কর) রমজানে শেষ করে তাঁর ওমরা রমজানে পালিত হয়েছে বরে গণ্য হবে। আর যদি কেউ রমজান মাসে ওমরা শুরু করে শাওয়াল মাসে শেষ করে , সে যদি তাওয়াফের অধিকাংশ চক্ষর রমজানে শেষ করে তা রমজানের মর্যাদা অর্জন করার অন্যতায় নয়। একাধিক ওমরা আদায় করা নাজায়েজ নয় কিন্তু অধিক ওমরা আদায়ের চেয়ে অধিক তাওয়াফ ফজিলতপূর্ণ।
যে নিয়মে হজের ইহরাম বাঁধতে হয়, সে নিয়মে ওমরার ইহরাম বাঁধতে হবে। কিন্তু ইহরামের দুই রাকাত নামাজ আদায় করার পর ওমরার জন্য নিয়ম করতে হবে।
ইহরাম বাঁধার পর নিষিদ্ধ কাজগুলো হতে দূরে থাকতে হবে। বেশী বেশী তালবিয়া পাঠ অতিপুণ্যের কাজ। উঁচুস্থানে উঠতে, নিচে নামতে, কারো সাথে সাক্ষাতে, শেষ রাতে এবং প্রতি নামাজের পর তালবিয়া পাঠ করবে। যখন তালবিয়া পাঠ করবে তখন তিনবার পাঠ করবে কম পক্ষে। (শামী, ২য খন্ড)
তালবিয়া উচ্চস্বরে পাঠ করা পুরুষের জন্য পুণ্যের কাজ বেশি দরুদ পাঠ, জানাত অর্জন ও জাহান্নাম হতে মুক্তির প্রার্থনা, খানায়ে কাবার আদার রক্ষা করতে হবে। বাবুস সালামের পথে মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে। কেউ কেউ ওমরার জন্য বাবুল ওমরা দিয়ে প্রবেশ করার কথা বলেছেন। মনে রাখতে হবে বাইতুল্লাহ দেখার সাথে সাথে দোয়া করতে হবে। এ সময় যে দোয়া পাঠ করবে তা আল্লাহ পাক ফিরিয়ে দেয় না। তাওয়াফ হজের আসওয়াদ হতে আরম্ভ করার। রমল করবে। রমলের পদ্ধতি হলো প্রথম তিন চক্কর (তাওয়াফের) বীরের মত বুক ফুলিয়ে বাঁধ দুলিয়ে, ঘন ঘন কদম ফেরে, কিছুটা দ্রæত গতিতে চলা। ইজতিবা করা সওয়াবের কাজ। ইজতিবা হলো, তাওয়াফের সময় চাদরের ডান অংশকে ডাক বগলের নীচ দিয়ে বাম কাঁধের উপর রাখা। সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদে চুমু দিতে। যদি সম্ভব না হয় তবে দূর হতে ইশারায় দেওয়া যথেষ্ট। মনে রাখতে হবে মানুষকে কষ্ট দেয়া হারাম আর হাজরে আমওয়াদ চুম দেওয়া সুন্নাত। হারাম কাজের মাধ্যমে যে সুন্নাত আদায় না করে।
হাজরে আসওয়াদ চুমু খাওয়ার সাথে সাথে তালবিয়া বন্ধ রাখতে হবে। তাওয়াফের শেষে তাওয়াফের দুই রাখাত নামাজ আদায় করবে। তারপর বাবুস সাফার পথে বের হয়ে প্রথমে সাফা তারপর মারওয়া সাঈ করবে। সাঈর সময় সবুজ চিহ্নদ্বয়ের মাঝখানে কিছুই দৌড়ে চলবে। মহিলারা স্বাভাবিক গতিতে চলবে। সাফা পাহাড়ে এতটুকু উপরে উঠবে যাতে কাবা ঘর দেখা যায়। কাবা ঘর দৃষ্টিতে পড়লে সে দিকে ফিরে হাত উঠিয়ে ‘আল্লাহ আকবর’ বলবে। মারওয়া পাহাড়ে সাঈ শেষ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। অতঃপর ক্ষৌরকার্য সম্পন্ন করে হালাল করার মাধ্যমে ওমরা সম্পন্ন করবে।

লেখক : কলাম লেখক, রাজনীতিক