এখনও জমে উঠেনি পশুরহাট দাম যাচাই করছেন বেশিরভাগ ক্রেতা

36

কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র ৫ দিন। দেশের বিভিন্ন্ জেলা থেকে ট্রাকে ট্রাকে গরু আসা অব্যাহত রয়েছে। ভারত থেকে কম আসলেও মিয়ানমার থেকে অবাধে আসছে গরু। ইতিমধ্যে নগরীর হাটগুলো গরুতে ভর্তি হয়ে গেছে। কেনাবেচা পুরোদমে শুরু না হলেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দরদাম চলছে। যাচাই-বাছাই করছেন ক্রেতারা। কিনছেন কেউ কেউ। তবে দাম চড়া। শেষের দিকের জন্য অপেক্ষা করছেন বেশিরভাগ ক্রেতা। তাদের ধারণা সেসময় দাম কমতে পারে।
চট্টগ্রাম প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার চট্টগ্রামে মোট কোরবানির পশুর চাহিদা ৭ লাখ ২০ হাজার ৯৫৭। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৪১৫। গত বছরের তুলনায় চাহিদা বেড়েছে ৬৫ হাজার। চাহিদার বিপরীতে এ বছর চট্টগ্রাম জেলায় মোট কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে চার লাখ ১৪ হাজার ৩৮৭। চট্টগ্রামের বাইরে থেকে আরও ২ লাখ ৫০ হাজার পশু আসবে।
জানা যায়, যতই দিন ঘনিয়ে আসছে, ততই নগরীতে পশুবাহী ট্রাকের সংখ্যা বাড়ছে। দৈনিক অন্তত ১৫০টি ট্রাক পশু নিয়ে নগরে প্রবেশ করছে। একের পর এক ট্রাক আসছে। কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, বেনাপোলের পুটখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া থেকে গরুবাহী ট্রাক প্রবেশ করছে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানান, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো চট্টগ্রামে খামারি ও পারিবারিকভাবে গরু উৎপাদন বেড়েছে। নগর ছাড়াও জেলার পটিয়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, মিরসরাই, সীতাকুন্ড, সন্দ্বীপ, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি এবং বোয়ালখালীতে খামারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে পশু পালন বেড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম পশুপালনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। নগরীর বৃহত্তর পশুরহাট সাগরিকা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গরুবাহী ট্রাক আসছে আর বাজারে প্রবেশ করছে। বড়, মাঝারি, ছোট সবধরনের গরুই আসছে বাজারে। গরু-মহিষের পাশাপাশি ছাগলও আসছে নানা জায়গা থেকে। এবার নগরীর বাজারগুলোতে দেশি গরু বেশি চোখে পড়ছে। বরাবরের মত ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসা গরু মিললেও সংখ্যায় কম। গরুর পাশাপাশি প্রচুর মহিষও দেখা গেছে। ভারতীয় গরু কম দেখা গেলেও মিয়ারমারের গরু রয়েছে প্রচুর।
বিক্রেতারা জানান, টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ঢুকছে কোরবানির পশু। উত্তরবঙ্গ ও পার্বত্য জেলাগুলো থেকে দেশি গরু সংগ্রহ করে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জড়ো করছেন। উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে খামারিরা কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য পর্যাপ্ত পশুর মজুদ গড়ে তুলেছেন। পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট তাঁবু খাটিয়ে পশু জড়ো করা হচ্ছে।
নগরীতে সিটি করপোরেশন পরিচালিত আটটি বাজার আছে। এর মধ্যে দুটি স্থায়ী ও ছয়টি অস্থায়ী। বিবিরহাট ও সাগরিকা গরুর বাজার স্থায়ী হাট। কর্ণফুলী পশু বাজার, সল্টগোলা রেলক্রসিং বাজার, স্টিল মিল বাজার, পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, পোস্তারপাড় স্কুল মাঠে ছাগল বাজার ও কমল মহাজন হাট, এছয়টি অস্থায়ী বাজার। এসব বাজারেই মূলত কোরবানির পশু বেশি কেনাবেচা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর বেশিরভাগ বাজার এখনো পুরোপুরি জমে উঠেনি। তবে প্রতিটি বাজারেই অসংখ্য ক্রেতা দেখা গেছে। তারা গরুর দরদাম করছেন। বিকিকিনি হচ্ছে কম। দু’একজন ক্রেতা গরু কিনছেন। এখনো পর্যন্ত বিক্রেতারা দাম হাঁকছেন বেশি। ৩০ হাজার টাকার গরু ৫০ হাজার, ৬০/৭০ হাজার টাকার গরু এক লাখ টাকা দাম হাঁকছেন।
চট্টগ্রাম গবাদি পশু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি হাজি মো. শফিকুর রহমান জানান, পশুর বাজার এখনো পুরোদমে জমেনি। দু’একদিনের মধ্যে জমে যাবে। ক্রেতারা বাজারে আসছেন, তবে কিনছেন কম। তিনি বলেন, বাজারে প্রচুর গরু আছে, আরও আসছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে পশুরহাটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে সিএমপি। প্রতিটি বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কেউ যাতে কোনোধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সিএমপি।
সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবুর ররহমান বলেন, নগরীর প্রতিটি হাটেই পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। সব দিকে নজর রাখবে।
সাগরিকা ও বিবিরহাট বাজারে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানিয়েছেন, তারা দর দেখতে এসেছেন। কিনবেন আরো দু’-একদিন পর। যাচাইবাছাই করছেন বেশিরভাগ ক্রেতা। ঈদ ঘনিয়ে আসলে দাম কমতে পারে বলে তাদের ধারণা।
সাগরিকা বাজারে আসা ক্রেতা আবদুর রহমান বলেন, আমি কিনতে আসিনি। দাম দেখতেএসেছি। কিনব ঈদের এক বা দু’দিন আগে।