উপজেলায় মৃত্যু বেশি চিকিৎসা সুবিধা কম

30

আসহাব আরমান

নগরের পাশাপাশি চট্টগ্রামে উপজেলা পর্যায়েও বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ। তবে উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে নেই করোনা চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ফলে উপজেলার রোগীরা চিকিৎসা নিতে ভীড় করছে নগরীর হাসপাতালগুলোতে। ফলে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে এখানকার হাসপাতালগুলো। আইসিইউ ও জেনারেল বেড কোথাও খালি নেই। চিকিৎসায় চলছে রীতিমত ত্রাহি অবস্থা। চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার মধ্যে ৫টিতে নেই সেন্ট্রালি অক্সিজেনের ব্যবস্থা।
৯ উপজেলায় সেন্ট্রালি অক্সিজেন থাকলেও সিলিন্ডার সঙ্কটসহ নানা সমস্যায় রোগিদের সেবায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। করোনার এই সঙ্কটকালীন মুহূর্তে উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যবস্থার অতীব জরুরি বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলার মধ্যে বাঁশখালী, মিরসরাই, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখনও স্থাপন করা হয়নি সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা। ১৪ উপজেলার কোনো হাসপাতালেই নেই আইসিইউ সুবিধা। এসব উপজেলার মধ্যে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা নেই ৯টি উপজেলায়। বাকি ৫টিতে আছে মাত্র ৭টি। তবে নগর ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতাল ইউনিট-২ (হলি ক্রিসেন্ট), সরকারি রেলওয়ে হাসপাতাল ও ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবা নেই।
কোভিড রোগীদের জন্য হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের প্রয়োজন খুব বেশি। নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজেন সুবিধা না থাকায় কোনো রোগীই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর ভরসা করেন না। তাই কোভিড রোগীরা নগরমুখী হচ্ছেন।
আর যে সকল হাসপাতালে অক্সিজেন লাইন আছে, সেখানে কারিগরি ত্রæটি, অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি, সিলিন্ডার রিফিলিং ও আনা-নেয়াজনিত সমস্যা আছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা থাকলেও ৯ উপজেলার মধ্যে বেশ কয়েকটিতে অনেক সময় অকার্যকর থাকে সেগুলো। তাই প্রতিদিনই নগরীর হাসপাতালে উপজেলার কোভিড আক্রান্ত রোগীরা নগরে ভীর করছেন। উপজেলায় যদি যথাযথ সেবা পাওয়া যেত তাহলে নগরীর হাসপাতালে ভিড় করতে হতো না রোগীদের- এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগী রোগীদের স্বজনদের।
করোনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার এমন দূরাবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা ।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, গ্রামে অবকাঠামো থাকলেও সেগুলোর ব্যবহার নেই। উপজেলায় পর্যাপ্ত শয্যা বাড়ানো এবং আইসিইউ সুবিধার আওতায় আনার জন্য আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছি। কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি। আজকে গ্রামের রোগীরা সবাই নগরীর হাসপাতাল পড়ে আছে। ফলে করোনা রোগীর পাশাপাশি সাধারণ রোগীদের সেবা পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। করোনা রোগীদের তীব্র শ্বাসকষ্ট থাকার কারণে তাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে। রোগীদের নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজেন সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বেশি স্পিডে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থার বিকল্প নেই। এতে রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়েও ওঠে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, বিআইটিআইডিতে অক্সিজেন লাইন রয়েছে। প্ল্যান্ট হলেই অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে সমস্যা থাকবে না।আর জেলার ৯টি উপজেলা হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন রয়েছে। যে পাঁচটিতে নেই সেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বর্তমানে ১৪ উপজেলায় ৫৭২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৩৭টি অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর ও ৭টি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে। এসব দিয়েই উপজেলা হাসপাতালগুলোতে রোগী সামলাতে হচ্ছে। তবে উপজেলা পর্যায়ে আইসিইউ স্থাপনের বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে আইসিইউ স্থাপনে যে অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনবল দরকার তার পূর্ণাঙ্গতা নেই।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ঘন্টায় গ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫৭ জন। গ্রামে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। শহরে মারা গেছেন ৮ জন। আগের দিন বুধবার গ্রামে করোনা রোগি মারা যায় ১০ জন। আর শহরে মারা যায় ৭ জন। গ্রামে যে হারে রোগি মারা যাচ্ছে তাতে শহরের তুলনায় উল্লেখ করার মতো চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা দরকার। কিন্তু তা হচ্ছে না।