উপকূলীয় এলাকা সুরক্ষায় গৃহীত প্রকল্পগুলো দ্রæত বাস্তবায়ন হোক

23

কনকনে শীতের মাস মাঘ। এরপর চোখের পলকে বিদায় নেবে বসন্ত, গ্রীস্ম। বাংলাদেশের ঋতু পরিবর্তনের ধারায় গ্রীস্ম আর বর্ষা কাছাকাছিই থাকে। অর্থাৎ প্রায় চারমাস ধরে রোধবৃষ্টিতেই দিন কাটে এদেশের মানুষের। পাহাড়, নদী ও সাগর বেষ্টিত বৃহত্তর এ চট্টগ্রাম। বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চল। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষের কাছে বর্ষা মানেই দুশ্চিন্তার দুর্বিপাকে জীবন চলা। বর্ষা মানেই ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ¡াস। ভাঙ্গাচোড়া বেড়িবাঁধ উপচিয়ে সব নিশ্বেষ করে দেয়া। আমরা যতটুকু জানি, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, চন্দনাইশসহ কক্সবাজার জেলার মহেশখালী, কুতুবদিয়া এলাকার পুরনো বেড়িবাঁধের ব্যাপক সংস্কারসহ অনেক বেড়িবাঁধ নতুনভাবে নির্মিত হয়েছে। এরপরও এ এলাকার মানুষ পুরোপুরিভাবে সুরক্ষিত নয়। এর কারণ বেড়িবাঁধগুলোতে নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রির ব্যবহার এবং স্থায়িত্ব কম। এসব এলাকার বাঁধগুলো যখন নির্মাণ বা সংস্কার হচ্ছিল তখন বেশ কয়েকটি প্রকল্পের অনিয়মের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে বারবার তাগাদাও দেয়া হয়েছিল সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। এরপর কর্তৃপক্ষ কি ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে তা আমাদের জানা না থাকলেও আশা করা যায়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আগাম প্রস্তুতি এবার সংকট অনেকটা কমে আসবে। শনিবার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বর্ষার আগের প্রস্তুতি হিসেবে চট্টগ্রামে চলমান ও বাস্তবায়িত ১৬টি প্রকল্পের উপর আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন। এতে তিনি বর্ষার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলে কাজ করার নির্দেশনা দেন। একই সাথে চট্টগ্রাম উপকূলের বেড়িবাঁধ রক্ষায় আরও সাতটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ সভাকে অভিহিত করেন। এ সংক্রান্ত দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উপকূলে পানি প্রবেশ ঠেকাতে এসব প্রকল্প কার্যকর ভূমিকা রাখবে। সাত প্রকল্পে ছয় হাজার ২০৩ কোটি ২২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যেই প্রকল্পগুলো অনুমোদন হবে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে উপকূলের মানুষের আর্তসামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান পূর্বদেশ প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘আমার বিভাগ থেকে চারটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো অনুমোদন হলে উপক‚লে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থাকবে না। এতে অতিরিক্ত জোয়ারের সময় এলাকায় পানি প্রবেশ বন্ধ হবে। দ্রæত প্রকল্পগুলো অনুমোদন হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম উপকূলের চিত্র পাল্টে যাবে।’ পাউবো সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম পওর বিভাগ-২ এর অধীনে স›দ্বীপ উপজেলার পোল্ডার নং ৭২ এর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের স্থায়ী পুনর্বাসনসহ ঢাল সংরক্ষণ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। ৮৪৯ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুনঃপ্রণয়নের কাজ চলছে। একই বিভাগে সীতাকুÐ ও মিরসরাই এলাকায় পাহাড়ি ছড়ার অব্যবহৃত বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারে পরিবেশবান্ধব জলাধার নির্মাণ প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের বর্ধিতাংশে (সীতাকুÐ অংশ) সুপারডাইক ও আনুষঙ্গিক পানি নিষ্কাশন কাঠামো নির্মাণ প্রকল্পটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে যাচাই সভায় উত্থাপনের অপেক্ষায় আছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে বোয়ালখালীর কর্ণফুলী নদী ও সংযুক্ত খাল সমূহের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন রোধকল্পে তীর সংরক্ষণ কাজের প্রকল্পটি দ্রæত অনুমোদনের চেষ্টা চালানোর কথা বলেছেন পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। ১৪৪ কোটি ৭৬ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বোয়ালখালীর বিভিন্ন খাল খনন ও সংস্কার হবে। উল্লেখ্য যে, চার বছর আগে চট্টগ্রামে ৮ হাজার ২৯ কোটি চব্বিশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৬টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৭টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, বাকি নয়টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ ৫২ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার। খাল পুনঃখনন ১৮০ কিলেমিটার, বাঁধ নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ ২১৮ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার। চলমান প্রকল্পসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপকূলীয এলাকার মানুষ বর্ষার দুর্ভোগ থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে। আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রæততার সাথে চলমান প্রকল্পের বাস্তবায়নে আন্তরিকতার সাথে কাজ করবে। এছাড়া প্রকল্পের আর্থিক সচ্ছলতাও নিশ্চিত করবে।