ইসলামের ইতিহাসে খোলাফায়ে রাশেদিনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং চার খলিফার জীবনী

1749

এস এম ফখরুল ইসলাম নোমানী (মোরশেদ)

ইসলামের ইতিহাসে খোলাফায়ে রাশেদিন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল আলোচিত অধ্যায়। বিশ্বনবীর (সা:) সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ চার খলিফার শাসনামলকে ইসলামের ইতিহাসে খোলাফায়ে রাশেদিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। খোলাফায়ে রাশেদিনকে বলা হয় ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে আলোকিত এবং সুবর্ণ সময়। খোলাফায়ে রাশেদিনের এর শাব্দিক অর্থ ন্যায়পরায়ণ, ন্যায়নিষ্ঠ, সঠিকভাবে পথনির্দেশপ্রাপ্ত খলিফা। ইসলাম ধর্মের শেষ বাণীবাহক নবী মুহাম্মদের (সা:) পর ইসলামী বিশ্ব শাসনকারী চারজনকে খোলাফায়ে রাশেদিন বলা হয়। তারা নবী মুহাম্মদের (সা:) সহচর ছিলেন এবং তার মৃত্যুর পর ইসলামের নেতৃত্ব দেন। আজকে জানুন সেই ইসলামের ইতিহাসে খোলাফায়ে রাশেদিনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং চার খলিফার সংক্ষিপ্ত জীবনী।
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:) এর পরিচয়:
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (জন্ম ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দ মৃত্যু ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সা) এর একজন প্রধান সাহাবি, ইসলামের প্রথম খলিফা এবং প্রথম মুসলিমদের মধ্যে অন্যতম। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণের সম্মান তাকে দেয়া হয়। এছাড়া তিনি রাসুল মুহাম্মদ (সা) এর শ্বশুর ছিলেন রাসুল মুহাম্মদ (সা:) এর মৃত্যুর পর তিনি খলিফা হন এবং মুসলিমদের নেতৃত্ব দেন। নবী মুহাম্মদ (সা:) এর প্রতি অতুলনীয় বিশ্বাসের জন্য তাকে “সিদ্দিক” বা বিশ্বস্ত উপাধি প্রদান করা হয়েছে। তাই তাকে আবু বকর সিদ্দিক নামেও সম্বোধন করা হয়।
তরুণ বয়সে আবু বকর একজন বণিক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। তিনি আরব ও প্রতিবেশী মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অঞ্চলে ভ্রমণ করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি সম্পদশালী হয়ে উঠেন এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তিনি তার গোত্রের একজন নেতা হয়ে উঠেছিলেন। ইয়েমেন থেকে বাণিজ্য শেষে ফেরার পর তিনি নবী মুহাম্মদ (সা:) এর ইসলাম প্রচারের সংবাদ পান। এরপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণ অন্য অনেকের ইসলাম গ্রহণের উৎসাহ যুগিয়েছে। আবু বকরের মেয়ে আয়িশার সাথে নবী মুহাম্মদ (সা:) এর বিয়ের ফলে তাদের দুজনের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়।
আবু বকর একজন একনিষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে নবী মুহাম্মদ (সা:) এর সহযোগিতা করেছেন। তার জীবদ্দশায় আবু বকর বেশ কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তাবুকের যুদ্ধে তিনি তার সমস্ত সম্পদ দান করে দেন। আবু বকরকে বলা হয় ইসলামের ত্রাণকর্তা। হুদায়বিয়ার সন্ধিতে আবু বকর অংশ নিয়েছিলেন এবং তিনি ছিলেন এই চুক্তির অন্যতম সাক্ষী। নবীজির পরীক্ষিত বন্ধু ছিলেন হজরত আবু বকর।
আবু বকর ছিলেন ইসলামের এক জ্বলন্ত নক্ষত্র। আবু বকরের খিলাফত দুই বছরের কিছু বেশি সময় স্থায়ী হয়েছিল। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে মারা যান। তার খিলাফতকাল দীর্ঘ না হলেও তিনি একজন সফল শাসক ছিলেন। নবী মুহাম্মদ (সা:) এর মৃত্যুর পর নবী দাবি করা ব্যক্তিদের তিনি রিদ্দার যুদ্ধে সফলভাবে দমন করেছেন এবং তৎকালীন দুটি পরাশক্তি পারস্য ও বাইজেন্টাইনদের উপর সফল অভিযান পরিচালনা করেছেন। অভিযানের ধারাবাহিকতায় কয়েক দশকে মুসলিম খিলাফত ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্যের একটিতে পরিণত হয়। ৬৩৪ সালের ২৩ আগস্ট আবু বকর মারা যান। আয়েশার ঘরে হযরত মুহাম্মদ (স:)এর এর রওজার পাশে তাকে দাফন করা হয়। ইসলামের এই প্রথম খলিফা চির স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাসের পাতায় রয়েছেন। আবু বকরের সততা-দৃঢ়তা, মিথ্যার সঙ্গে আপস না করার মানসিকতা আমাদের দান করুন হে আল্লাহ।
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা:) এর পরিচয়:
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (জন্ম ৫৭৭ খ্রিস্টাব্দ-মৃত্যু ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং প্রধান সাহাবীদের অন্যতম। তাঁর ব্যক্তিগত নাম ছিল ‘উমর’, ‘ফারুক’ তাঁর উপাধি এবং ইব্ন আল খাত্তাব তাঁর পারিবারিক নাম। তিনি মক্কায় কুরাইশদের এক উচ্চ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী ছিলেন এবং তিনি সিরিয়া ও ইরাকে বাণিজ্য প্রতিনিধিদের নেতৃত্ব দিতেন।
হযরত উমর (রাঃ) মহানবী (সাঃ) এর দ্বিতীয় খলিফা ছিলেন। তার খিলাফতকালে, মুসলমানদেরকে ইরান, ইরাক, সিরিয়া এবং মিশরের বিরুদ্ধে অনেকগুলো যুদ্ধকরতে হয়। যার ফলশ্রæতিতে এসব দেশের ব্যাপক এলাকা মুসলিম শাসনাধীনে চলে আসে। যখন ১৭ হিজরীতে মুসলমানদের দ্বারা জেরুজালেম বিজিত হলো, তখন রোমানদের অনুরোধে তিনি সেই শহর পরিদর্শন করেন এবং মুসলমান ও জেরুজালেমের অধিবাসীদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। হযরত উমর (রাঃ) ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য এক চমৎকার প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করেন।
এক্ষেত্রে তাঁর প্রধান কিছু কৃতিত্ব হলো :
মজলিশে সুরা প্রতিষ্ঠা, যা খলিফাকে পরামর্শ দানকারী একটি মন্ত্রণা পরিষদ।
পুরো ইসলামী রাষ্ট্রকে প্রশাসনের সুবিধার্থে প্রদেশে বিভক্তিকরণ।
অর্থ বিভাগের প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে স্কুল এবং মসজিদ নির্মাণ।
ইসলামী হিজরী বর্ষপঞ্জীর প্রতিষ্ঠা।
হযরত উমর ফারুক (রাঃ) তাঁর অধীনস্থ লোকদের মঙ্গলচিন্তায় এতটা উদ্বিগ্ন থাকতেন যে, তিনি রাতে ছদ্মবেশে মদীনা শহরে বেরিয়ে পড়তেন। তিনি প্রকৃতই একজন মহান খলিফা ছিলেন, তাঁর খিলাফতকাল নিঃসন্দেহে ইসলামের ইতিহাসের এক সোনালী অধ্যায়। উমর ফারুক (রা) এর বিখ্যাত একটি উক্তি রয়েছে, তিনি বলেছিলেন সেই দুর্ভিক্ষের সময়, “আজ যদি ফোরাতের তীরে একটা কুকুর না খেতে পেয়ে মারা যায়, তবে তার জন্য আমি উমার আল্লাহ কাছে দায়ী থাকব।” তিনি সেই দশজন সৌভাগ্যশালীদের একজন মহানবী (সাঃ) যাঁদের বেহেস্তের সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন।
উমার (রাঃ) এর অন্তরে আল্লাহ ভয় ও ভক্তির মধ্যে দৃশ্যত ভয়ই ছিল প্রবলতর । তিনি যে সম্মান অর্জন করেন তা তাঁর চরিত্রগুণের কারনে, শারীরিক শক্তির জন্য নয়।
আবু বকরের মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব নেন। উমর ইসলামি আইনের একজন অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ ছিলেন। ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করার কারণে তাকে আল ফারুক (সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী) উপাধি দেয়া হয়। আমিরুল মুমিনিন উপাধিটি সর্বপ্রথম তার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। ইতিহাসে তাকে প্রথম উমর হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। নামের মিল থাকার কারণে পরবর্তী কালের উমাইয়া খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজকে দ্বিতীয় উমর হিসেবে সম্বোধন করা হয়। সাহাবীদের মর্যাদার ক্ষেত্রে সুন্নিদের কাছে আবু বকরের পর উমরের অবস্থান। শিয়া স¤প্রদায় উমরের এই অবস্থান স্বীকার করে না।
উমরের শাসনামলে খিলাফতের সীমানা অকল্পনীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। এসময় সাসানীয় সাম্রাজ্য ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দুইতৃতীয়াংশ মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে আসে। তার শাসনামলে জেরুজালেম মুসলিমদের হস্তগত হয়। তিনি পূর্বের খ্রিষ্টান রীতি বদলে ইহুদিদেরকে জেরুজালেমে বসবাস ও উপাসনা করার সুযোগ দিয়েছিলেন। ৬৪৪ খ্রীস্টাব্দে হযরত উমর (রাঃ) মসজিদে নামাজ পড়া অবস্থায় এক পার্সি ভৃত্য অতর্কিতভাবে তাহাকে হত্যা করে। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা চির স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাসের পাতায় রয়েছেন। তিনি সাড়ে দশ বছর অর্ধপৃথিবী শাসন করে ৬৩ বছর বয়সে আখেরাতের পথে পাড়ি জমান। মদিনায় রওজাতুন্নবীর পাশে হজরত আবু বকরের কবর, তার পাশেই ঘুমিয়ে আছেন অর্ধপৃথিবীর ন্যায়পরায়ন শাসক হজরত ওমর। হে আল্লাহ! ওমরের মতো ন্যায়ের সৈনিক হিসেবে পৃথিবীর সব শাসককে কবুল করুন।হজরত ওমরের মতো শাসকের প্রয়োজন আজকের দুনিয়ায়।
হযরত উসমান ইবন আফ্ফান (রা:) এর পরিচয় :
হযরত উসমান ইবন আফ্ফান (জন্ম-৫৭৭ খিস্টাব্দ-মৃত্যু-৬৫৬ খিস্টাব্দ) ছিলেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা। খলিফা হিসেবে তিনি চারজন খোলাফায়ে রাশেদিনের একজন। উসমান আস-সাবিকুনাল আওয়ালুনের (প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণকারী) অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও তিনি আশারায়ে মুবাশ্শারা‘র একজন এবং সেই ৬ জন সাহাবীর মধ্যে অন্যতম যাদের উপর মুহাম্মদ (সা:) আমরণ সন্তুষ্ট ছিলেন। তাঁকে সাধারণত: হযরত উসমান (রা:) হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে হজরত ওসমান (রা.)-এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মানবতার কল্যাণে জীবন ও সম্পদ উৎসর্গকারী এ সাহাবি সম্পর্কে রাসুলে খোদা (সা:) বলেছেন, ‘উসমান হলো তাঁদেরই একজন, যাঁরা আল্লাহ ও রাসুলকে বন্ধু ভাবেন এবং আল্লাহ ও রাসুল তাঁদের বন্ধু ভাবেন। ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথমে নিজের মেয়ে হজরত খাদিজার (রা.) গর্ভজাত সন্তান রুকাইয়াকে ওসমান (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহ দেন। হজরত রুকাইয়ার ইন্তেকাল হলে তাঁর সহোদরা উম্মে কুলসুমকে হজরত ওসমান (রা.)-এর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। রাসুল (সা.)-এর দুই মেয়েকে বিয়ের কারণে তাঁকে ‘জিননুরাইন’ বলা হয়। উম্মে কুলসুমের ইন্তেকালের পর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার যদি আরো একটি মেয়ে থাকত, তাহলে তাকেও আমি ওসমানের সঙ্গে বিয়ে দিতাম।’ তিনি রাসুল (সা.)-এর নির্দেশে পীড়িত স্ত্রী রুকাইয়ার সেবায় মদিনায় অবস্থানের কারণে একমাত্র বদর ছাড়া সব যুদ্ধেই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে অংশ নেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে একাধিকবার জান্নাতের শুভ সংবাদ দিয়েছেন। রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবীরই বন্ধু থাকে, জান্নাতে আমার বন্ধু হবে ওসমান।’ তিনি ছিলেন রাসুল (সা.)-এর কাতেবে ওহি দলের অন্যতম।
বিপুল ধন-ঐশ্বর্যের মালিক হযরত ওসমান (রা.) মুসলিম জাহানের খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পরও অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। হযরত হাসান (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত ওসমান (রা.) মসজিদে নববিতে মাথার নিচে চাদর দিয়ে শুয়ে থাকতেন। মানুষ তাঁর পাশে এসে বসত। তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলতেন। মনে হতো তিনি তাদেরই একজন। জুবাইর ইবনে আব্দুল্লাহ বর্ণনা করেন, ‘হযরত ওসমান সারা বছর রোজা রাখতেন এবং সারা রাত নামাজ পড়তেন। রাতের প্রথমার্ধ্বে একটু ঘুমাতেন।’ হযরত ওসমান (রা.) তাঁর শাসনামলের প্রথমদিকে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভূত সাফল্য অর্জন করেন। তাঁর জনহিতকর কার্যাবলি সমাজের আদল পরিবর্তন করে দিয়েছিল। তিনি মদিনা শহর রক্ষাবাঁধ ‘মাহরু‘ নির্মাণ করেন। খাল খনন করে কৃষিতে প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। পয়ঃপ্রণালী ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করে জনগণের অত্যন্ত প্রিয় খলিফায় পরিণত হন। মসজিদে নববির আধুনিকায়ন করেন তিনি। তাঁর সময় অর্থনৈতিক সচ্ছলতা মদিনার ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল। ৬৪৪ থেকে ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত খিলাফতে অধিষ্ঠিত ছিলেন। জান্নাতুল বাকীর পিছনে জিউস কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়। ইসলামের তৃতীয় খলিফা চির স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাসের পাতায় রয়েছেন। হে আল্লাহ হজরত উসমানের মতো দান করার তৌফিক আমাদের দিন। আল্লাহতায়ালা উসমান (রা.)-এর মতো মন খুলে দান করার তৌফিক আজকের মুসলমানদের দান করুন।
হযরত আলী ইবন আবী তালিব (রা:) এর পরিচয় :
হযরত আলী ইবন আবী তালিব ইসলামের চতুর্থ ও শেষ খলিফা । তিনি ছিলেন আবু তালিবের পুত্র। তাঁর মাতার নাম ফাতিমা বিনতে আসাদ । হয়রত আলী কোরায়েশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। শিশু বয়স থেকেই তিনি ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদের (সা:) সঙ্গে লালিত-পালিত হন। ইসলামের ইতিহাসে তিনি পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম যিনি হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) সাথে নামাজ আদায় করতেন। বালকদের মধ্যে তিনি সর্ব প্রথম বালক যিনি নবুয়তের ডাকে সাড়া দিয়ে মাত্র ১০ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন।
হজরত আলী (রা.) এর বয়স ছিল তখন প্রায় ২২ বছর। আল্লাহতায়ালার নির্দেশে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইয়াছরিবে হিজরত করার শেষ রাতে শত্রুদের চোখের সামনে দিয়ে নিরাপদে গৃহত্যাগ করলেন। যাওয়ার সময় হজরত আলী (রা.) কে আমানতের গচ্ছিত সম্পদ প্রদানের দায়িত্ব দিয়ে গেলেন। প্রত্যুষে শত্রুপক্ষ দেখল, রসুলুল্লাহ (সা.) এর বিছানায় হজরত আলী (রা.) নিশ্চিন্ত মনে ঘুমিয়ে আছেন। নবীজি (সা.)-এর কোলে যিনি লালিত-পালিত হয়েছিলেন, নবীজি (সা.)-এর মুখে যিনি কোরআন পাক শ্রবণ করেছেন, নবীজি (সা.) এর কাছেই যিনি কুরআন শিক্ষালাভ করেছেন এবং বুঝেছেন। তাঁর জ্ঞান-গরিমা অতুলনীয় হওয়ারই কথা। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আমি জ্ঞানের শহর এবং আলী তার দরজা।’
হযরত আলী (রাঃ) ছিলেন একজন অকুতোভয় যোদ্ধা। বদর যুদ্ধে বিশেষ বীরত্তের জন্য নবী মুহাম্মদ (সা:) তাঁকে “জুলফিকার” নামক তরবারি উপহার দিয়েছিলেন। খাইবারের সুরক্ষিত কামূস দুর্গ জয় করলে মহানবী (সাঃ) তাঁকে “আসাদুল্লাহ” বা আল্লাহর সিংহ উপাধি দেন। তিনি ছিলেন রাসূল (সা:) এর কন্যা হযরত ফাতেমা (রা:) এর স্বামী । রাসূল (সা:) যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিযরত করেন তখন হযরত আলীকে রাসূল (সা:) এর বিছানায় রেকে যান । তিনি সাহসের সাথে সে দায়িত্ব পালন করেন। হযরত আলী(রাঃ) একজন দুঃসাহসী এবং দক্ষ কৌশলী যোদ্ধা ছিলেন। তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে প্রায় সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি খোলাফায়ে রাশেদীনের একজন। মসজিদে যাবার সময় আক্রমণকারীর দ্বারা গুরুতর আহত হন। দু’দিন পর এই অমিত সাহসী এবং ধর্মপ্রাণ খলিফা ৪০ হিজরীর ২০ রমজানে পরলোক গমন করেন। নিঃসন্দেহে, হযরত আলী (রাঃ) খেলাফতের পবিত্রতা এবং মর্যাদা রক্ষার খাতিরে তাঁর জীবন কুরবান করেন। তিনিও সেই দশজন সৌভাগ্যশালীদের একজন মহানবী (সাঃ) যাঁদের বেহেস্তের সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন। ইসলামের চতুর্থ ও শেষ খলিফা চির স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাসের পাতায় রয়েছেন। হে আল্লাহ আমাদেরকে হযরত আলী (রাঃ) এর মত দুঃসাহসী যোদ্ধা এবং জ্ঞানী হওয়ার তৌফিক দাও।
পরিশেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে ফরিয়াদ আমাদের সবাইকে বিশ্ব নবী ও কামলীওয়ালানবীর উছিলায় ইসলামের এই মহান চার খলিফার জীবনাদর্শন মোতাবেক জীবন গড়ার এবং তাদের অনুসরণ, অনুকরণ এবং সবাইকে খোলাফায়ে রাশেদিনের কাতারে সামিল হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।

লেখক : হেড অব ফাইন্যান্স এন্ড একাউন্টস,
এপিক হেলথ কেয়ার লিঃ