আসুন শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই

16

ষড়ঋতুর আবর্তনে পৌষ ও মাঘ দু’মাস শীতকাল। আমাদের দেশে পশ্চিমা বিশ্বের তুলনায় শীত অপেক্ষাকৃত কম। একসময় দেশে শীত মানুষের জন্য সহনীয় পর্যায়ে ছিল। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু বিবর্তনের সূত্রে বর্তমানে ভয়ানক শীত পড়তে দেখা যাচ্ছে দেশে। কয়দিন হতে দেশের তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে এসেছে। বিভিন্ন অঞ্চলে তারতম্য থাকলেও সাধারণত দেশের কোথাও কোথাও শৈত্যপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে। শীত বিত্তশালী মানুষের জন্য আরামদায়ক হলেও দরিদ্র সাধারণ মানুষের জন্য খুবই দুর্ভোগের ঋতু। শহরের রাস্তার ধারে, ফুটপাতে, রেলস্টেশনে যে সকল ছিন্নমূল দরিদ্র অসহায় মানুষ মাথাগুঁজার ঠাঁই না থাকায় রাত্রিযাপন করছে তাদের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। দেশের বহু দরিদ্রমানুষ যারা বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে দু’বেলা খাবার জোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছে, তাদের অবস্থা বিবেচনা করলে বিবেকবান মানুষের অন্তর ফেটে যায়। অবস্থাদৃষ্টে মানুষের অধিকার দেশে কতটুকু নিশ্চিত হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ এ বছর শীতে নিজেদের শীত নিবারণে সমস্যায় পড়ছে। কারণ বর্তমানে দফায় দফায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবনে আয় ও ব্যয়ে ভারসাম্য তৈরি হচ্ছে না।
বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির সময়ে শীত বস্ত্রের মূল্য জোগাড় করা বহু মানুষের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় সরকার দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষের জন্য গৃহায়ণ প্রকল্প এবং শীত বস্ত্র সংস্থানের চেষ্টা করছে কিন্তু যে পরিমাণ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে তাদের মাথাগুঁজার ঠাঁই প্রদান এবং শীত নিবারণে কম্বল ও শীতবস্ত্র সরবরাহ সরকারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সরকার যাদের সহায়তা করছে তাদের বাইরে আরো দ্বিগুণ তিনগুণ দরিদ্র মানুষ দেশে বসবাস করছে। তাদের সাহায্যে বিত্তশালী হৃদয়বান নাগরিকদের এগিয়ে আসা জরুরি। বিগত দশ বছরে দরিদ্রের সংখ্যা যাই হোক না কেন, দেশে কোটিপতি তথা ধনি লোকের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেনি। দীর্ঘ সময় ধরে করোনা মহামারির তাÐবের ফলে দেশে বহু নি¤œ আয়ের মানুষ আরো দরিদ্র হয়ে পড়েছে। যারা নতুন করে অর্থবৃত্তের মালিক হয়েছে এবং যারা এদেশে ঐতিহ্যগতভাবে ধনিশ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল, মানবিক বিবেচনায় তাদের উপর দরিদ্র মানুষের অধিকার আছে। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীর এদেশে ইসলাম ধর্মের বিধান মতে ধনিদের সম্পদে গরিব তথা দরিদ্র সাধারণ মানুষের অধিকার রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং অনৈতিকতা চর্চা বেড়ে যাওয়ায় ধনিদের নিকট হতে দরিদ্রমানুষ যে পরিমাণ সহায়তা পাওয়ার কথা তা পাচ্ছে না। এদেশে এমন অবস্থাও চোখে পড়ে যে, সরকার বা সরকার সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি শীত হতে দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য যেসব সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন জনপদে হাজির হচ্ছে সেখানেও ব্যাপক দুর্নীতির খবর পত্র-পত্রিকায় আসতে দেখা যায়।
যারা প্রকৃত অসহায় দরিদ্র মানুষ তারা যথাযথ ভাবে সাহায্য সহযোগিতা পেতে দেখা যায় না। জনগণের নিকট হতে দরিদ্র মানুষের সহায়তার নাম দিয়ে চাঁদা আদায় করে, সে অর্থও একশ্রেণির লোভি অসাধু মানুষ খেয়ে নিজেরা আর্থিকভাবে মোটাতাজা হচ্ছে। সমগ্র সমাজের মানুষের বিভিন্ন কর্মকাÐ নিরীক্ষণে দেখা যায়, সততা, নৈতিকতা, শ্রেয়বোধ, মূল্যবোধ ও মানব কল্যাণের যে মানবিক ভিত্তি ধর্মে এবং রাজনীতিতে আছে, তা বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে দেশের মানুষের জীবনযাত্রা খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। দফায় দফায় জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বাড়লেও দীর্ঘ দিন অতিক্রম হলেও সরকার দ্রব্যমূল্যের বিপরীতে সরকারি বেসরকারী চাকুরিজীবীদের পে-স্কেল প্রদান করছে না। যার কারণে যেসকল মানুষ শুধুমাত্র বেতনের উপর নির্ভরশীল তাদের জীবন খুবই কষ্টের মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। বৈশ্বিক মূদ্রাস্ফিতি এবং দেশের দ্রব্যমূল্যের কথা বিবেচনা করে দেশের মানুষের বৈধ আয় বৃদ্ধিতে সরকারের তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক উদ্যোগ প্রয়োজন। চাকুরিজীবীরা আন্দোলন সংগ্রাম না করলেও নতুন পে-স্কেল পাবার আশায় দিন গুণছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনগণের শান্তি ও সমৃদ্ধির চিন্তা করেন বলে আশায় বুক বেঁধে চাকুরিজীবীরা প্রতীক্ষায় রয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পে-স্কেল ঘোষণার জন্য। জাতীয় পে-স্কেল ঘোষণা ও বাস্তবায়ন বর্তমান সময়ে দেশের মানুষের প্রাণের দাবি। মানবিক বিবেচনার কথা চিন্তা করে এবছর শীতে দরিদ্রমানুষের পাশে সরকারের পাশাপাশি মানবিক কারণে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন মনে করে দরিদ্র সাধারণ মানুষ।