আসন্ন রমজানের আগেই দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি

28

সাফি ইরফাত জেবিন

ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের আত্মশুদ্ধি, নৈতিক প্রশিক্ষণ ও আত্মগঠনের সুবর্ণ মাস পবিত্র মাহে রমজান। প্রতি বছর মাহে রমজান আসে ঈমানদার মুসলমানদের জীবনকে পরিশুদ্ধ এবং পাপমুক্ত করার জন্য। আমরা কেউই হলফ করে বলতে পারবো না পরবর্তী রমজান পালন করার সৌভাগ্য আমাদের হবে কিনা। রমজানের মাসব্যাপী ফরজ রোজা তাকওয়ার গুণ অর্জন এবং ইবাদতের অবারিত সুযোগ করে দেয়। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের সেবা করার এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়,অথচ এই পবিত্র রমজান মাসেও একশ্রেণির কালোবাজারি অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও দ্রব্যসামগ্রীর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। যা ইসলাম ধর্মমতে কোন ধর্মপ্রাণ মুসলিম এর ব্যবসার মূলনীতির খেলাপ করে। বিশেষ করে রমজানে রোজাদারদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, ইফতার ও সেহরিতে ব্যবহৃত খাদ্য সামগ্রির দাম বাড়ানোর একটি প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। ফলে শহরের নির্ধারিত আয়ের মানুষের জীবনও কষ্টকর হয়ে পড়ে। অথচ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশই রমজান উপলক্ষে দ্রব্যমূল্যের সহজলভ্যতার জন্য প্রায় ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে থাকে পরকালে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়। কিন্তু বিষয়টি আমাদের দেশে ব্যতিক্রম।
কিছুদিন আগে আমাদের তথাকথিত রাজনীতিবিদরা বলেন, এবার আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য সবার হাতের নাগালে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেজন্য রমজানের আগেই অতিরিক্ত পণ্য মজুদ করে রাখার প্রয়োজন নেই। কিন্তু গেলো সপ্তাহে লক্ষ্য করা গেছে ভয়ংকর চিত্র। গত এক সপ্তাহে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক দিনের ব্যবধানে গ্যাসের সিলিন্ডার প্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ৩০০ টাকা, অন্যদিকে চিনির মূল্য বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। এর পিছনে প্রকৃত কারণ কি আদৌ অনুসন্ধান করা হচ্ছে? আসন্ন পবিত্র রমজানে পণ্য মজুত রেখে বাজার অস্থিতিশীল করা হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রতিটি বাজার কমিটিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যতালিকা প্রদর্শন নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেসব বাজারে মূল্য তালিকা প্রদর্শন করা হবে না, অধিদপ্তর সেসব বাজার কমিটিকে বিলুপ্ত করার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবে।
তাহলে আকস্মিক এই মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ কি? রমজানের আগেই পর্যাপ্ত মূল্য বৃদ্ধি করে রমজানে সেই বাজারদরকে স্থীতিশীল রাখা? এতে করে দেশের মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষ রা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। এত স্বল্প সময়ের ব্যবধানে রাতারাতি কিভাবে পালটে যাচ্ছে বাজারের চিত্র, এটা কি শুধুই ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এর প্রভাব নাকি অন্য কোন বড় যোগসূত্র কাজ করছে এর পিছনে। অতিসত্বর এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হলে সরকারের উপর জনগণের আস্থা অনেকটাই কমে যাবে। কারণ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মূলনীতি ‘জনগণের জন্য সরকার’, সরকার কে টিকিয়ে রাখার জন্য জনগণ নয় কিন্তু। তাহলে জনগণকে কেনো এই দুর্ভোগ পোহাতে হবে? কে বা কারা দায়ী এর পিছনে, এর সমাধানই বা কোথায়? সুশীল সমাজ এবং চিন্তাবিদ রা প্রকৃতপক্ষে কি ভাবছেন অদূর ভবিষ্যতে এই দুরাবস্থা দূরীকরণের জন্য, এই প্রশ্ন এখন আপনার আমার সবার মনেই।
লেখক: প্রাবন্ধিক