আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে

697

আবহমান কাল থেকে বঙ্গভূমি ভৌগলিক কারণে সুজলা সুফলা ছিল। বদ্বীপ হওয়ার কারণে এখানকার জমিতে প্রচুর লতা পাতা ঘাস জন্মাতো। তৃণভোজী প্রাণীর অভয়ারণ্য ছিল। একই কারণে গৃহস্থ বাড়িতে গবাদিপুশ থাকত। এগুলোর মধ্যে গরু ছাগল মহিষ প্রধান। ফলে এতদঞ্চলে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের ছড়াছড়ি ছিল। দুধ, দই, মাঠা, ছানা সহজলভ্য হওয়ায় বাঙালিদের খাদ্যাভাসে দুগ্ধজাত পণ্য যুক্ত হয়। সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়া প্রায় প্রতি বাড়িতে ভোজনের পর দুধ দই, মাঠা ছানা কিংবা মিষ্টি পাতে দেওয়ার রেওয়াজ গড়ে উঠে। দুগ্ধজাত পণ্যের ছড়াছড়ির তথা সহজলভ্যতার প্রেক্ষিতে আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে দুগ্ধজাত পণ্যের প্রচুর উদাহরণ দেখা মেলে। বাঙালির একটি পরিচয় ‘মাছে ভাতে’ বাঙালি। কিন্তু বাঙালি মায়েরা সকল সময় সেই অনাদিকাল থেকে কামনা করেন, তাঁর সন্তান যে থাকে দুধে ভাতে। এটা শ্বাশত কালের বাঙালি মায়ের চাওয়া ও প্রার্থনা। কবি ভারত চন্দ্র রায় গুণাকরুণ (১৭২২-১৭৬০) তাঁর ‘ইস্তরী পাটনী’ কবিতায় দেবীর কাছে বর চাইতে গিয়ে নিজে কথা ভুলে গিয়ে সন্তানের স্বার্থের কথা চিন্তা করেন। তিনি বর চাইলেন, তাঁর সন্তান যে দুধে ভাতে থাকে। দেবী তাঁর প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। বস্ততঃ পৃথিবীর সকল মা-ই চান, তাঁর সন্তান যেন সুখে শান্তিতে থাকে। সন্তান জন্মের পর মাতৃদুগ্ধ পানের এক পর্যায়ে শিশুকে তোলা দুধ খাওয়ানো হয়। এই তোলা দুধ বলতে গরু, ছাগল, মহিষের দুধকে বোঝায়। হালে গুঁড়া দুধের প্রচলন। বাংলাদেশ ১৯৫৮ সালে প্রথম গুঁড়া দুধ আমদানি হয়। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী সরকারের সাহায্য পিএল ৪৮০এর আওতায় প্রথম দেশে গুঁড়া দুধ আসে। এই দুধ শিশু কিশোরদের স্বাস্থ্য রক্ষার কথা বিবেচনা করে স্কুলে বিরতণ করা হতো।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি কবিতায় লেখেন : আমসত্ত¡ দুধে ফেলি/তাহাতে কদলি দলি/সন্দেস মাখিয়া তাতে,/হাপুস হুপুস শব্দ/চারিদিকে নিস্তব্দ/ পিঁপড়া কাঁদিয়া যায় পাতে’। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল শৈশবের একটি ছড়া : ‘তাই তাই তাই/মামার বাড়ি যাই/মামা দিল দুধ ভাত/ পেট ভরে খাই/মামী এলো লাঠি নিয়ে পালাই-পালাই।’ উপরে বর্ণিত কবিতা ও ছড়ার মাধ্যমে বাঙালি সমাজের খাদ্যাভাসের চিত্র প্রস্ফূটিত হয়। খুঁজলে আরো প্রবাদ প্রবচন ও উদাহরণ পাওয়া যাবে। এই সকল গল্প, কবিতা, ছড়ার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় বাঙালি সমাজে, পরিবারে মাছ ভাতের চেয়ে ‘দুধভাত’ বেশি কাক্সিক্ষত ছিল। বলা চলে বাঙালি পরিবারে শিশুরা দুধভাত খেয়ে বড় হয়েছে। মেধার বিকাশ হয়েছে। দুধভাত আমার পছন্দ ছিল না, তারপরও মায়ের শাসনে বাধ্য হয়ে দুধভাত খেতে হয়েছে। তেমনি আমার প্রতিবেশি ও বন্ধুদের মায়েরা সন্তানদের দুধভাত খেতে বাধ্য করতেন। তবে অধিকাংশ শিশুরা দুধভাত পছন্দ করতো। শুধু শিশু বললে ভুল হবে দেশে প্রায় সকল বয়সের লোকজন দুধভাত পছন্দ করেন। আম দুধ, ছাড়াও কলা কাঁঠাল গুড় দিয়ে দুধভাত খাওয়া হয়ে থাকে। অনেক বাড়িতে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধ খাওয়া এখনও নিয়মিত অভ্যাস। বলা যায়, বাঙালি সমাজে দুধকে পুষ্টিকর ও উপাদেয় মনে করা হয়।
সাতক্ষীরার কোন কোন অঞ্চলের অতিথিকে দুধ ভাত দিয়ে আপ্যায়ন করা না। অপমান বা অসম্মান মনে করা হয়। বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে কৃষি কাজের জন্য প্রতি বাড়িতে হাল চাষের বলদ থাকতো। পাশাপাািশ দুধের জন্য গাভীও পুষতেন। সমাজে তখন দুধের অভাব হতো না। গোয়ালা বাড়ি বাড়ি দুধ দিয়ে যেত। দুধ সরবরাহের জন্য একটি সম্প্রদায় গড়ে উঠেছিল। এ ছাড়া হাটে বাজারে গৃহস্থরা দুধ বিক্রয়ের জন্য নিয়ে যান। দুধ উৎপাদনের জন্য চট্টগ্রামের ‘রেড কাউ’ জাতটি প্রসিদ্ধ। এটি দেশের একমাত্র নিজস্ব জাত। এছাড়া হাতিয়া স›দ্বীপসহ উপকূলীয় অঞ্চলে মহিষের দুধ, দই এর খ্যাতি আছে। দুধ থেকে শুধু দই মাঠা, ছানা প্রস্তুত হয় তা নয়, মাখন, ঘি, পনিরসহ নানা ধরনের উপাদেয় মিষ্টিও প্রস্তুত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের গুঁড়া দুধের আমদানির হিড়িক পড়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর পোড়ামাটি নীতির কারণে বাঙালিদের বাড়িঘর, সহায় সম্পদ লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে। এ ধ্বংসযজ্ঞ থেকে দেশের গবাদিপশুও বাদ যায় নি। ফলে দেশের দুধ সরবরাহ কমে যায়। স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুরদর্শী সিদ্ধান্তে গঠিত হয় ‘বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি’ (মিল্কভিটা)। পরবর্তীতে বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান পশু সম্পদ মন্ত্রী থাকাকালে পশুসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজি ছিলেন চট্টগ্রামের নজির আহমদ। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিদেশ থেকে উন্নতমানের গাভী, ষাঁড় ও শুক্রানু আমদানি করে পশু সম্পদ উন্নত করার চেষ্টা চালান। এরশাদের শাসন আমলে দেশে গুঁড়া দুধ আমদানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়।
একটি ঘটনা বলা যাক। ২০০০ সালে দেশের ব্যবসার কেন্দ্র ভূমি খাতুনগঞ্জে একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক হিসাবে কর্মরত ছিলাম। ব্যবসায়িক কারণে অনেকেই ব্যাংকে আসেন। তেমনি এক ভাসমান গ্রাহকের সাথে পরিচয়। তিনি সিঙ্গাপুর থেকে গুঁড়োদুধ আমদানি করেন। আমি বললাম, বিশ্বে গুঁড়া দুধ উৎপাদনের শীর্ষস্থানীয় দেশ হলো নেদারল্যান্ড, হল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড প্রমুখ। সিঙ্গাপুর তো দুগ্ধ উৎপাদনকারী দেশ না। তিনি জানালেন, রাশিয়ার চেরনোবিল পারমানবিক চুল্লির দুর্ঘটনার পর ইউরোপের অনেক দেশের পণ্য আমদানিতে দেশে বিধিনিষেধ আরোপ হয়। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী স্বল্প মূল্যে ঐ সকল নিষিদ্ধ দেশ থেকে তেজষ্ক্রিয়া সম্পন্ন গুঁড়া দুধ সিঙ্গাপুরে এনে পুনরায় প্যাকিং করে দেশে আমদানি করেন প্রচুর লাভের আশায়।
কৌতুহল বশতঃ জানতে চাইলাম, আপনার বড় ক্রেতা কারা? তিনি শপথ করায়ে বললেন, কাউকে বলবেন না, আড়ং ডেইরী হচ্ছে মূল ক্রেতা। এই দুধ পাস্তরিত করে তারা বাজারজাত করে। আমাদের দেশের লোভী ব্যবসায়ীদের নীতি ও নৈতিকতার অধপতনের কারণে সাধারণ জনগণ রোগে শোকে ভুগেন। অথচ ব্যবসাকে মহান আল্লাহ হালাল ঘোষণা করেছেন! তবে প্রতারণার ব্যবসা নয়।
দেশের মিল্কভিটা, আড়ং, ফ্রেস, প্রাণ, আফতাবসহ প্রায় ১৪টি কর্পোরেট দুধ ব্যবসায়ী আছে। এছাড়াও বেসরকারি ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মালিকানায় আছে অসংখ্য দুধ উৎপাদনকারী খামারী। পূর্বের ন্যায় প্রতি বাড়িতে এখন দুধের জন্য গাভী পালন বড় একটা দেখা যায় না। মূলত দেশের সিংহভাগ দুধ উৎপাদন ও সরবরাহ করে থাকে কর্পোরেট হাউস ও খামারীরা। কর্পোরেট হাউসগুলো তাদের মনোনীত খামারীদের কাছ থেকে দুধ কিনে বাজারজাত করে থাকে। এ ছাড়াও দেশে ২০১৮-১৯ সালে ২৭০০ কোটি টাকার গুঁড়া দুধ আমদানি হয়েছে। পূর্বে দেশে দুধভাত, মিষ্টি, ছানা, দই ঘি প্রভৃতি কাজে তরল দুধ ব্যবহৃত হত। এখন দুধের বহুবিধ ব্যবহার বেড়েছে। ফলে দেশে তরল ও গুঁড়া দুধের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। চাহিদা বাড়ায় অনেক শিক্ষিত তরুণ দুগ্ধ খামার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসছেন। তবে কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর চমৎপ্রদ বিজ্ঞাপনের ফলে অধিকাংশ ভোক্তাগণ কোম্পানিগুলোর প্রতি আস্থা রেখে তাদের বাজারজাত দুধ ও পণ্য কিনে থাকেন। বলা যায়, বাংলাদেশ নিজস্ব খামারের দুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশে শুধু দুধ নয়, গরু ছাগল (মাংসের জন্য) উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ। চটকদার বিজ্ঞাপনে দুগ্ধ ব্যবসা ভালোই চলছিল। এ কোম্পানিগুলো দেশের মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্টান্ডার্ড টেস্টিং ইনিস্টিটিউড (বিএসটিআই) অনুমোদন সাপেক্ষে পণ্যে বিএসটিআই সিল ব্যবহার বাজারজাত করে থাকে। এ সিলের সুবাদে ভোক্তার আস্থা অর্জন করতে সমর্থ হয়। দেশের ক্রেতাগণ নিশ্চিন্তে এদের দুধ পান করতে থাকেন।
একদিন সকালে হঠাৎ দেখা গেল আমরা যে দুধ পরম আস্থার সাথে পান করছি, তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদানে ভুরপুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফারুকের গবেষণায়, দুধে এন্টিবায়টিক, সীসাসহ নানান ক্ষতিকর উপাদান ধরা পড়ে। শুরু হয় নানা জনের বাচাল কথাবার্তা, কেউ কেউ ধমকের সুরে কথা বলেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে বসেন বাপেক্সসহ বিভিন্ন চেম্বার ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। তারা মাননিয়ন্ত্রণের একটি সতন্ত্র ও স্বাবলম্বী প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুরোধ করে। এ আলোচনার উদ্যোক্তা ছিলেন দরবেশ নামে খ্যাত একজন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। যাই হোক ফারুক সাহেবের এ প্রসঙ্গটি শেষতক আদালত ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পৌঁছায়। চলতে থাকে বাহাস।
মাননীয় আদালত দেশের ১৪টি কোম্পানির পাস্তরিত দুধ উৎপাদন ও বিপনন থেকে সাময়িক সময় বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়। (পরে কোন কোন কোম্পানি থেকে নির্দেশধাজ্ঞা রহিত করা হয় উচ্চ আদালত সামায়িকভাবে) এখানে উল্লেখ্য যে, মৎস্য খাদ্য ও পশু খাদ্য আইনের (২০০০ সাল) ১৪ ধারা অনুসারে গবাদি পশুকে এন্টিবায়োটিক দেয়া যাবে না। অথচ দেশে পাস্তরিত দুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর দুধে এন্টিবায়োটিক ও সীসাসহ ক্ষতিকর পদার্থ পাওয়া যায়। আদালতের পর্যবেক্ষণে এই দুধ পান করা নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেন। আমি আরো উল্লেখ করতে চাই আমাদের পোল্ট্রী ও মৎস্য খামারের অবস্থা আরও ভয়াবহ। ঘটনাক্রমে আমি নোয়াখালীতে অবস্থিত কর্পোরেট পোল্ট্রী খামারে থাকার অভিজ্ঞতা হয়। গুটি কয়দিনের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, একদিনের বাচ্চা থেকে সকল বয়সের মোরগ মুরগীকে এন্টিবায়োটিকসহ নানা ধরনের ওষুধ সেবন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী তখন লন্ডনে ছিলেন। উদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি লন্ডন থেকে দলের নেতাকর্মীদের সাথে টেলি কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন। তিনি আশক্সক্ষা করছেন এর পেছনে গুঁড়া দুধ আমদানিকারকদের কোন কারসাজি আছে কিনা? তা তিনি ভেবে দেখার কথা বলেন। তাঁর এ মন্তব্য আমার ভাল লাগেনি। তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। দেশবাসীকে এভাবে সন্দেহের মধ্যে না রেখে বলতে পারতেন, আমি বিষয় তদন্ত করার নির্দেশ দিচ্ছি! দেশবাসী আশ্বস্থ হতে পারতেন। তাই হোক, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে টিসিবি’র তথ্যানুযায়ী গত এক মাসে কয়েকটি ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৪০-৫০ টাকা। তাদের তথ্য থেকে আরো জানা যায়, গত পাঁচ বছরে দেশে গুঁড়া দুধ আমদানি দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দেশে গুঁড়া দুধ আমদানি হয়েছে ৩২ কোটি ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৭০০ কোটি টাকা। অথচ একটি সমীক্ষায় দেখা যায় দেশে মানুষের মাথাপিচু দৈনিক দুধ গ্রহণের হার কমেছে। যা ২০১০ সালে ছিল ৩৩.৭২ গ্রাম, তা কমে ২০১৬ সালে হয়েছে ২৭.৩১ গ্রাম। তারপরও দেশে গুঁড়া দুধের আমদানী বেড়েছে। ২০১৩ সালে ০.৫৪ লক্ষ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ সালে তা দাড়ায় ১.৩৪ লক্ষ মেট্রিক টন। পাশাপাশি তরল দুধ উৎপাদনও বেড়েছে। ২০১৩-১৪ সালে ছিল ৫১ লাখ মেট্রিকটন ২০১৮-১৯ সালে তা দাঁড়ায় ৯৪ লাখ মেট্রিক টন। (সূত্র : বাংলাদেশ ব্যাংক ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর)। খাদ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষের মধ্যে দুধ খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। পাশাপাশি দুধের ব্যাণিজ্যিক ব্যবহার ও বেড়েছে। ফলে দেশে দুধের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী একজন মানুষের দৈনিক ২০০ মিলিলিটার দুধ/দুগ্ধজাত গ্রহণ করা আবশ্যক। সে তুলনায় বাংলাদেশিদের দুধ গ্রহণ অত্যন্ত কম।
উৎপাদনকারী, ভোক্তা, গবেষক এবং রাজনীতিবিদদের মাঝে বিতর্ক আমরা চাই না। দেশে পণ্যের মান যাচাই করার প্রতিষ্ঠানটি আরো পেশাদার ভ‚মিকাসহ, আধুনিক ও উন্নত সেবা দান করুক এটাই সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে দুধে এন্টিবায়োটি ও সীসার উৎস কোথায়। গোড়ায় হাত দিতে হবে। গবেষকদের ধমক দিয়ে লাভ নাই। তাদের গবেষণা করার বরাদ্দ ও প্রণোদনা বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। গবেষক, আদালত, প্রধানমন্ত্রী ইত্যাদি করে সময়ের অপচয় করার কোন যুক্তি হয় না।
অধিকšুÍ খামারের বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, গবাদিপশু, খামারিসহ সকল পক্ষ এবং সর্বোপরী নিরপরাধ ভোক্তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। সাম্প্রতিক সময়ে কোরবানীর ঈদে অন্য দেশ থেকে গবাদী পশু আমদানি করতে হয় নি বললেই চলে। দুগ্ধ উৎপাদনকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিলে গুড়ো দুধ যেমন কমে যাবে। তেমনি দেশ দুগ্ধজাতপণ্য উৎপাদনে সয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে। এমন কী তরল দুধ রফতানীর নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আগে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন। জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে কোন আপস নয়। সুস্থ্য ও সবল নাগরিক দেশের পরম সম্পদ। মানুষ বাঁচলে শিল্প কারখানা বাঁচবে। সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাহাস করার যথেষ্ট সময় আছে। আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে গোড়ায় হাত দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কথা ভেবে দেখা দরকার। কোন বিষয় উপেক্ষা করার সুযোগ ওও অবকাশ নেই। বাঙালি দুধভাত খাবে। এটাই চিরন্তন রীতি ও খাদ্যাভ্যাস। আমাদের সন্তান যেন দুধে ভাবে থাকে সেটাই নিশ্চিত করা আবশ্যক।
লেখক : কবি নিসর্গী ও ব্যাংক নির্বাহী (অব.)