আমার মন মানে না

17

 

আমার মা ছিলেন একদম সাদামাটা মানুষ। লক্ষীপুর শহরের ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান হয়েও হিসাবের মাথা লবডঙ্কা! পাক আমলে সোয়া’ আর পৌণে’র হিসাব বুঝতে না পারায় সেইযে দাদি ভর্ৎসনা করেছিল; সেটা জানতে পেরে আজীবন মাকে রাগানোর জন্য উদাহরণ দিতাম ‘তুমি সোয়া পৌণে বুঝনা, এটা বুঝবে কি করে? সোয়া চার সের চাল বা পৌণে আট মন ধান এর পরিমাণ মা কখনোই বুঝতে পারতো না।
মানুষকে ভালবাসার কী অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তার! ফকিন্নিকে খালা ডাকার অনুযোগে নিকটজনদের হাসাহাসিকে মোটেও তোয়াক্কা করতো না মা।
এবারও সপ্তাহজুড়ে গোছগাছ করে, অগ্রিম ছুটি বাগিয়ে, বাড়তি কষ্ট মেনে শেকড়ের কাছাকাছি পৌঁছেছি। কিন্তু প্রশান্তি পাই না। চৈতন্যে জলশূন্য উষর মাটির খনখনে অস্থিরতা আঁকড়ে ধরে। পুকুরপাড়, রসুইঘর, লেবুতলা, পিছনের বাগিচা সব আগের মতই আছে, কেবল মা নাই। তাঁর বিবর্ণ শাড়ি, পানরসভর্তি মুখ, সাংসারির ব্যস্ততার হুড়োহুড়ি চোখে ভাসে। এখন মধ্যরাতে গরম চায়ের কাপ হাতে নিয়ে কেউ বললো না, ‘তোর জন্য বানালাম, খেয়ে ঘুম দে’।
মার পঞ্চান্ন বছরের সাজানো সংসারে এখন কেবলই শূন্যতা। বিষন্ন দীর্ঘশ্বাস তার তেল ঝোল ছড়ানো রসুইঘরে। বাড়িতে কতোজন আসে! আড্ডার তুবড়ি বাজায়, হাসির গররা তোলে। এই উল্লাস-আনন্দ সন্তানহারা পুত্রের কাছে অসহিষ্ণু অভিজ্ঞান, শূন্য হওয়া বুকের খাঁচার তৃষ্ণার্ত হাহাকার।