আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও দামপাড়া পুলিশ লাইন

38

জামাল উদ্দিন

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রাম এক রক্তাক্ত ইতিহাস। এই ইতিহাসের অনন্য দৃষ্টান্ত চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের ‘দামপাড়া পুলিশ লাইন’। ১৮৫৭ সালের ১৮ নভেম্বর রাত ন’টার দিকে এই পুলিশ লাইন থেকে সিপাহীরা বিদ্রোহ ঘটালো।বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৩৪ রেজিমেন্টের সুবেদার রজব আলী খাঁ। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে উড়িয়ে দিল বিদ্রোহের ঝাÐা। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সরকারের দমন-পিড়ন এতই ভয়াবহ ছিল যে, বিদ্রোহী ২০৬ জন সামরিকের কেউ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তাদের সঙ্গী কারামুক্ত ২০২ জন কয়েদীর ভাগ্যেও একই পরিণতি ঘটে। এরপর ১৯৩০ সালের এপ্রিলে মাস্টারদা সূর্য সেনের বিস্ময়কর বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান। এ-অভ্যুত্থানের মূল উদ্দেশ্য ছিল, চট্টগ্রামের সরকারি অস্ত্রাগার দুটি দখলে নিয়ে ভারতবর্ষের অন্যান্য এলাকা থেকে এ অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন ও স্বাধীন করা এবং ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সত্যিকার যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া। বিপ্লবীদের আত্মবিশ্বাস ছিল তাঁরা সফল হবেন, একই বিশ্বাসে সারা ভারতবর্ষ সশস্ত্র মুক্তি-সংগ্রামে একাত্ম হবে। ফলে ব্রিটিশ বাহিনীর পক্ষে এই সংগ্রাম মোকাবেলা করা সম্ভব হবে নাÑ এমনটি ছিল বিপ্লবীদের প্রত্যাশা।
বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলে নিয়ে ব্রিটিশ বাহিনী ক্রমে সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিপ্লবীদের পরাস্ত করতে তারা তখন মরিয়া। অন্যদিকে, অর্জিত স্বাধীনতার গৌরব ও প্রতিষ্ঠিত সরকারের মর্যাদা রক্ষার্থে মহানায়ক মাস্টারদাও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে জালালাবাদ পাহাড়ে অবস্থান নেন। সেখানে ২২ এপ্রিল সশস্ত্র ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে দু’ঘণ্টা ধরে প্রচন্ড সম্মুখযুদ্ধ হয়। ঐ-যুদ্ধে সূর্য সেনের ১২ জন সহযোদ্ধা শহীদ হন এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনী পরাজিত হয়ে পলায়ন করে।
চট্টগ্রাম বিদ্রোহের সে স্ফুলিঙ্গ সারা ভারতবর্ষে প্রচন্ড দাবানল ছড়িয়ে দিয়ে ইতিহাসে অজ্ঞান অধ্যায় হয়ে রয়েছে। প্রচন্ড দমননীতি চালানো সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিদ্রোহের যবনিকা টানতে ব্রিটিশ সরকারকে আরও চার বছর অপেক্ষা করতে হয়। সেই দিনগুলোতে অসম লড়াইয়ে শত্রুর গুলির মুখে বিপ্লবীরা ঢেলেছেন বুকের তাজা রক্ত। তাঁদের অনেকে বরণ করেছেন বীরের মৃত্যু; চিরবিশ্রাম নিয়েছেন প্রিয় জন্মভূমিতে। যাঁরা বেঁচে থাকলেন তাঁদের দাঁড় করানো হলো আসামির কাঠগড়ায়। লোহার গরাদেঘেরা কুঠরিতে তাঁরা তখন যন্ত্রণাক্লিষ্ট জীবনের শিকার। কাউকে বরণ করে নিতে হয়েছে যাবজ্জীবন নির্বাসন দন্ড কিংবা কারো কারো জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো কেটেছে কারাপ্রকোষ্ঠে ঘাতকের প্রতীক্ষায়।
কোনো সন্ত্রাসবাদী অভিযান পরিচালনা সূর্য সেনের অভিপ্রায় ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল না অস্ত্রাগার লুট করা। তাঁদের প্রয়াস যে ভারতকে স্বাধীন করে তুলবে, নিদেনপক্ষে ভারতের বুকে কোনো স্বাধীন ভূখন্ড প্রতিষ্ঠা করবে এমন দুরাশাও তাঁদের ছিল না। বস্তুত তাঁরা ছিলেন স্বপ্নতাড়িত মানুষ। দেশবাসীর মনে সেই স্বপ্নের বীজই তাঁরা রোপণ করতে চেয়েছিলেন দুঃসাহসিক অভিযান দ্বারা। মাস্টারদার অত্যন্ত প্রিয় ছিল আইরিশ বিপ্লবী লারোর-এর এই উক্তি – ‘যদি কেউ আপনাকে বলে সশস্ত্র প্রতিরোধের কোনো কার্যক্রম, তা যদি কেবলমাত্র প্রস্তরখন্ড হাতে মানুষের দ্বারাও পরিচালিত হয়, এমনি একটি বা প্রতিটি কাজই হচ্ছে অসময়োপযোগী, অবিবেচনাপ্রসূত অথবা বিপজ্জনক, তবে এই মন্তব্যের জন্য তাকে তৎক্ষণাৎ প্রতিহত করা উচিত। এক্ষেত্রে এটা মনে রাখতে হবে কোথাও না কোথাও, কোনো না কোনোভাবে, কাউকে না কাউকে একটি সূচনা তো ঘটাতেই হবে এবং প্রতিরোধের প্রথম কাজটি সবসময়েই হবে অসময়োপযোগী, অবিবেচনাপ্রসূত, অবিজ্ঞ ও বিপজ্জনক।’
সূর্য সেন ও তাঁর সতীর্থরা অত্যন্ত সচেতন ও সুপরিকল্পিতভাবে সাম্রাজ্যবাদী থাবা থেকে মাতৃভূমির মুক্তির জন্য একটি অভ্যুত্থান সংঘটিত করতে চেয়েছিলেন এবং লড়াই করেছেন। শত্রুর পরিবেষ্টনের ভিতর থেকে প্রতিটি মুহূর্তে হামলার আশঙ্কায় সজাগ উৎকণ্ঠায় তাঁদের এগুতে হয়েছে। প্রতিটি পদক্ষেপের সামনে ছিল গুরুতর বিপদ, এমন কি মৃত্যু। তা সত্তে¡ও অনেকেই নিঃশঙ্কচিত্তে গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছেন, প্রাণশক্তিতে ভরপুর দেহ হয়েছে বুলেট জর্জরিত রক্তপ্লাবিত।
বিপ্লব এগিয়ে গেল ক্রমশ। পাশাপাশি চলল চক্রান্ত, লোভ আর বিশ্বাসঘাতকতা। চট্টগ্রাম জেলে বন্দী মাস্টারদার ক্ষতবিক্ষত প্রাণহীন দেহকে ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি ফাঁসির রজ্জুতে ঝুলিয়ে দেয় বর্বর ব্রিটিশ শাসক। এই হত্যাকাÐ সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে দেয় আরেক দাবানল। সে দাবানলে দগ্ধ-ক্ষতবিক্ষত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ অবশেষে পাট গুটাল ইতিহাসের নির্মম অনিবার্য পথ বেয়ে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালে ভারত পকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হল। ইতিহাসের দুর্নিবার ধারায় সে দাবানল থেমে থাকল না। জাতির আরেক সূর্যসন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন থেকে ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে এসে গেল ১৯৭১ সাল। শুরু হলো পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নানা ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’। ঐতিহাসিক এই ঘোষণার সাথে সাথে বাঙ্গালিজাতি দাবানলের মতো জ্বলে ওঠে। বাঙালি রুখে দাড়ালো পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে। চট্টগ্রামে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যদ্ধের পূর্ব প্রস্তুতির জন্য প্রস্তুত দামপাড়া পুলিশ লাইন। এই প্রস্তুতির আরেক নায়ক বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্থ এসপি শামসুল হক। তিনি চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দর হাতে হাত মিলিয়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা কর্মসুচী গ্রহণ করেন। ২৫ মার্চ রাতে জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূণস্থানে বাঙালি পুলিশ সদস্যদের মোতায়ন করে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার নির্দেশ দেন। ২৮ মার্চ তাঁরই নেতৃত্বে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে সর্বপ্রথম সম্মুখযুদ্ধ হয় দামপাড়া পুলিশ লাইলে। সেদিন এই যুদ্ধে শহীদ হন ৫১ জন পুলিশ সদস্য। এর কিছুক্ষণ পরেই তাঁর বাসভবনে হানাদার বাহিনী আক্রমণ রচনা করলে সেখানেও বেশ কয়জন পুলিশ শহীদ হন। অবশেষে তিনি হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে নির্মমভাবে প্রাণ হারান। একই সাথে তাঁরই সহযোদ্ধা আর.আই. আকরাম হোসেন, কোতোয়ালী থানার ওসি আবদুল খালেক সহ বেশ কয়জন পুলিশ অফিসার ধৃত হয়ে অমানুষিক নির্যাতনে প্রাণ হারান।
যেভাবে প্রাণ হারালেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এম শামসুল হক
এসপি শামসুল হক ১ মার্চ থেকে লালদিঘি পাড়স্থ নিজ দপ্তরে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে সাহসিকতার সাথে শত্রæবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং ২৫ মার্চ রাত থেকে নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন ৪০০০ পুলিশ সদস্যকে যুদ্ধের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁর লক্ষ্য ছিল নিজ মাতৃভূমিকে শত্রæর কবল থেকে মুক্ত করা। ২৮ মার্চ দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে সম্মুখযুদ্ধের নেতৃত্ব এবং নিজের সামনেই ৫১ জন পুলিশ নিহত হবার ঘটনা এবং একই দিন নিজের বাসভবনে সম্মুখযুদ্ধে ১১ পুলিশ নিহত হবার ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে আক্রান্ত হলেও শত্রæর ভয়ে শহর ছেড়ে চলে যাবার কোন পরিকল্পনা নেননি। লালদীঘির পাড়স্থ তাঁর দপ্তরও হানাদার বাহিনীর গোলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইপিআর বাহিনীর সদস্যরাও শহরের বিভিন্ন স্থানে খÐ খÐ যুদ্ধ শেষে শহর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে দেখা গেল শহর পুরোপুরিই হানাদার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। এমনই দুঃসময়ে তখনো তাঁর পাশে অবস্থান করছিলেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি আবদুল খালেক ও বডিগার্ড কালাম। ইতিমধ্যে হানাদার বাহিনী শহরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থান দখলে নিয়েছে। শহরের রাস্তাঘাট ফাঁকা। চতুর্দিকে গুলির শব্দ। এসপি শামসুল হক নিরাপত্তার কারণে তাঁর এনায়েতবাজারস্থ এক আত্মীয়ের বাসায় চলে গেলেন, যেখানে ২৬ মার্চ থেকে তাঁর স্ত্রী ও দু’ শিশুসন্তানসহ আশ্রয় নিয়েছিলেন। ২৯ মার্চ সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার একটু পরেই ওসি আবদুল খালেক বিদায় নিয়ে থানার দিকে রওয়ানা হলেন। তিনি ভেবেছিলেন থানায় তখনো সিপাহিরা তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু দূর থেকে দেখলেন হানাদাররা থানায় অবস্থান নিয়েছে। তিনিও চলে গেলেন আত্মগোপনে। ৭ এপ্রিল শত্রুসেনাদের হাতে শহীদ হলেন সহযোদ্ধা দুর্নীতিদমন বিভাগের ডেপুটি ডাইরেক্টর নাজমুল হক। তিনি আরও মুষড়ে পড়লেন। ভাবছেন এখন কি করা যায়। তার কারণ তিনি যেই বাড়িতে আছেন, তার অনতিদূরেই কয়েক অবাঙালি পরিবারের বসবাস। তারা যদি চিনে ফেলে! এদিকে স্ত্রী মাহমুদা হকের ভগ্নিপতি মোখলেছুর রহমান তাঁদের জন্য কর্ণফুলি নদীর অপর তীরে আনোয়ারা থানার এক গ্রামে একটি বাসাও ঠিক করে রেখেছেন। তিনি চাপ দিচ্ছেন সেখানে নিয়ে যাবেন। কিন্ত্র এসপি সাহেব যাবেন না। ১৩ এপ্রিল সকালে তাদেরই পূর্ব পরিচিত এলিট পেইন্টের সিরাজ সাহেব তাঁকে নিয়ে যাবার জন্য বাসায় আসলেন, কিন্তু তিনি কাপুরুষের মতো রণাঙ্গন ছেড়ে যাবেন না। তার কারণ তখনো তাঁর বিশ্বাস শত্রæবাহিনীকে শহর থেকে নির্মূল করা যাবে। কারণ পূর্বের পরিকল্পনা অনুয়ায়ী শত্রæবাহিনী বাঙালিদের সাথে অন্তত চট্টগ্রাম শহরে টিকতে পারার কথা নয়। হয়তো তিনি তখনো জানেন না যে, যোদ্ধারা শহর ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে গেছে এবং অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কালুরঘাটের অপর তীর থেকে শহরে আর ফিরে আসেনি। কাপ্তাই, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি থেকে আগত ইপিআর সৈনিকরা মেজর জিয়ার নির্দেশে কালুরঘাটেই আটকে আছে। কয়েক দিন যেতে না যেতে তিনি পরিষ্কার হয়ে গেলেন শহর থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত শত্রæবাহিনীর দখলে চলে গেছে। অবশেষে তিনি ভারত যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন।
শহর অতিক্রম করতে হবে অতি গোপনে। তার কারণ অবাঙালি পুলিশরা দেখলেই চিনে ফেলবে। তাছাড়া পাহাড়তলী ক্যাম্পে তাঁর নির্দেশেইতো বাঙালি পুলিশবাহিনী অবাঙালি পুলিশের উপর আক্রমণ রচনা করেছিলো, এ আক্রমণে অনেক অবাঙালি পুলিশ প্রাণ হারিয়েছিলো। এখন তো শহর তাদেরই দখলে। এরই মধ্যে খবর পেলেন চট্টগ্রামের ডিআইজি আবুল আহসান ও জেলা প্রশাসক মুস্তাফিজুর রহমানকে সার্কিট হাউজস্থ চট্টগ্রামের সামরিক প্রশাসকের দপ্তরে নিয়ে গেছে এবং তাদেরকে গোয়েন্দা নজরে রাখা হয়েছে। হয়তো তাঁরা নিজেদেরকে রক্ষার জন্য সব দোষ তাঁর উপর চাপিয়ে দিয়ে পার পেয়ে গেছেন। কারণ, এ কয়েক দিনের যুদ্ধে তাঁদেরতো কোনো ভূমিকা ছিল না। এসব কিছু ভাবতে ভাবতেই এসে গেল ১৫ এপ্রিল। এদিন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শত্রæবাহিনীর এক গাড়িবহর এনায়েত বাজারস্থ যে বাসায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এসপি শামসুল হক আশ্রয় নিয়েছেন ঐ বাসার সামনেই চলে এলো। গাড়ি থেকে নামলেন স্বয়ং বাঙালি অফিসার ডিআইজি এস এ মাহমুদ। শত্রæসেনারা মুহূর্তেই বাসা ঘিরে ফেলল। সাথে এলো কয়েক অবাঙালি। ঐ অবাঙালিরাই বাসাটি চিনিয়ে দিয়েছে। তারাও থাকে আশ্রিত বাসার নিকটে। এসপি সাহেবকে কয়েকবার গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরতে তারা দেখেছে। বাসার লোকজন জানালা দিয়ে দেখল হানাদাররা ঘেরাও করে ফেলেছে। স্বয়ং ডিআইজি দরজার কড়া নাড়লেন। অবস্থা দেখে এসপি সাহেব নিশ্চিত হলেন যে তাঁরা জেনেশুনেই এসেছেন। সরে যাবার কোন পথ নেই। সত্যি কি ডিআইজি তাঁকে ধরিয়ে দেবেন? তিনিও তো বাঙালি, তিনি কি তাঁর ক্ষতি করবেন? অবশেষে তিনি নিজেই দরজা খুলে দিলেন। ডিআইজি ঘরে ঢুকে বসলেন। তিনি এসপি সাহেবকে বললেন, ‘এসপি সাহেব, আপনি চাকরিতে জয়েন করুন, আমি আছি, আপনার কোনো অসুবিধা হবে না।’ তিনি জবাব দিলেন, ‘স্যার, আপনি যেভাবে এসেছেন, এ মুহুর্তে না বলারও কোন সুযোগ নেই।’ অনিচ্ছাসত্তে¡ও তিনি ডিআইজির গাড়িতে চড়ে বসলেন। গাড়ির পেছনের সিটে কয়েকজন শত্রুসেনা। বাসা পাহারায় রয়ে গেলো আরও কয়েকজন শত্রæসেনা। (চলবে)
লেখক: গবেষক ও প্রকাশক