আব্দুল কাদের জিলানী রহ.

16

 

ইসলামী জগতের প্রাতঃস্মরনীয় আধ্যাত্নিক ব্যক্তিত্ব,দরবেশকুল শিরোমনি,মাহবুবে সোবহানী,কুতুবে রাব্বানী বড় পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী র: ১লা রমজানুল মোবারক হিজরী ৪৭০ বা ৪৭১ সালে পারস্যের এক বিখ্যাত জনপদ ‘জিলানে’ এ জনপদে জন্মগ্রহণ করেন।তার বংশতালিকায় পিতা সায়েদ শেখ আবু সালেহ র: এর একাদশতম উর্ধ্বতন পুরুষ হযরত হাসান র: এবং তার মাতা সাইয়েদেনা ফাতেমা র: এর চৌদ্দতম উর্ধ্বতন পুর্বপুরুষ ছিলেন হযরত ইমাম হোসেইন র:।এভাবেই তিনি পিতৃ সুত্রে হাসানী ও মাতৃ সুত্রে হোসাইনী বংশধারার উত্তরসুরী। আব্দুল কাদির জিলানী র: এর পিতা সাইয়্যেদ আবু সালেহ মুসা র: একজন বিশেষ পুন্যবান,কামেল ও বোযর্গ ব্যক্তি ছিলেন।
সচ্চরিত্রতা ও আল্লাহ প্রেমের বিবিধ গুন তাহার মধ্যে বিরাজমান ছিল। যৌবন কালে যখন তিনি বিয়ে করেননি তখনকার একটি ঘটনা! তিনি একদিন নদীর ধারে ক্লান্ত অবস্থায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন একটি আপেন পানিতে ভেষে যাচ্ছে।তিনি ফলটি উঠিয়ে আনলেন ও পরম তৃপ্তিসহকারে ভক্ষন করলেন।কিছুক্ষন পর হঠাৎ তর মনে হল এই ফলটি খাওয়া তাহার ঠিক হলো ? এই ফলের মালিকতো তিনি নন। কোথা হতে এ ফল ভেসে এসেছে কে জানে। তার অনুমতিতো নেয়া হয়নি।তাহলে তিনি কি পরদ্রব্য ভক্ষনজনিত অপরাধ নিয়ে মহা বিচারকের সামনে হাজির হবেন ? যে করেই হোক মালিকের ঠিকানা বের করে মাফ চেয়ে নিতে হবে।তাই তিনি গ্রোতের বিপরীত দিকে বিষন্নচিত্তে আপেল ফলের বাগানের সন্ধান করিতে লাগিলেন এবং বাগানের ও বাগানের মালিকের সন্ধান পেলেন। বাগানের মালিক সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহ সাউয়েমী র:।
তার কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে তার কাছে ক্ষমা চাইলেন যুবক আবু সালেহ। বিস্মিত হলেন বাগানের মালিক। এই যুবকের অন্তরে কি আল্লাহভীতি। একেতো হাত ছাড়া করা যায় না।তিনি বললেন, ‘আপেলেরতো অনেক মুল্য।কি এনেছ তার জন্য ?’ আবু সালেহ জবাব দিলেন,’আমার কাছেতো কোন টাকাপয়সা নেই’ তবে গায়ে খেটে মুল্য পরিশোধ করতে চাই। আপনি যতদিন খুশী গায়ে খাটিয়ে নিতে পারেন।’হজরত সাউয়েমী র: বললেন ওয়াদা করবার আগে ভাল করে ভেবে দেখ। আবু সালেহ বললেন আমি ওয়াদা পুর্ন করবো ইনশাআল্লাহ। সাউয়েমী র: বললেন তোমাকে পুরো এক বৎসর বাগানের দেখাশোনার কাজ করতে হবে উপরন্তু আমি যখন যে কাজের হুকুম দিব তাই করতে হবে। কোন কথা ছাড়াই সব শর্ত মেনে নিলেন আবু সালেহ।সময় শেষ হবার পর নুতন শর্ত যুক্ত করলেন সাউয়েমী র:। ‘আমার একটি অন্ধ,বধির ও বোবা কন্যা আছে তাকে তোমার বিয়ে করতে হবে’।! অন্ধ,বধির বা বোবা কিছুই নন।পরদিন ব্যখ্যা দিলেন সাউয়েমী র:।,বাইরের কোন লোকের দিকে কখনো চোখ তুলে তাকায়নি এবং তার মুখে কখনও অশ্লীল বাক্য উচ্চারিত হয়নি।তাই তাকে আমি অন্ধ,বধির ও বোবা বলেছিলাম।
আব্দুল কাদির জিলানী র: যখন মাতৃগর্ভে তখন একদিন তার মাতা সাইয়্যেদেনা উম্মুল খায়ের ফাতেমা(র:) স্বপ্নে দেখেন যে মানব জাতির আদি মাতা, হযরত আদম আ: এর স্ত্রী হজরত হাওয়া আ: সহাস্য আনন্দে তাকে বলছেন,”ওগো ফাতেমা ! তুমি বিশ্বচরাচরের ভাগ্যবতী মহিলা।তোমার গর্ভে যে সন্তান আছে,সে হবে আওলিয়াকুল শিরমনি গাউসুল আজম।”
অনুরুপ আরেক স্বপ্নে দেখিলেন হযরত হযরত ইব্রাহিম আ: এর স্ত্রী বিবি সারা র: মধুর স্বরে বললেন,”হে সৌভাগ্যবতী ফাতেমা ! আল্লাহ পাকের মারেফাত তত্তে¡র শ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক ‘নুরে আজম’ তোমার গর্ভে আছে।সুতরাং তুমি নিবিষ্ট মনে আল্লাহর গুনগানে নিমগ্ন থেক।”
একই ভাবে আবার দেখলেন ফেরাউনের পুন্যবতী স্ত্রী আসিয়া আ: মধুর কন্ঠে বলছেন,”ওগো সৌভাগ্যবতী ও মর্যাদাশীলা ফাতেমা ! আমি তোমাকে এক অনির্বচনীয় শুভসংবাদ প্রদান করছি। তুমি অতিশয় সৌভাগ্যবতী ও মর্যাদাশীলা রমনী। তোমার গর্ভে যে আওলিয়াকুল শ্রেষ্ঠ সন্তানের আবির্ভাব হয়েছে, পৃতিবীর বুকে তার উপাধি হবে ‘রওশন জমির’।”এরকম আরো বহু স্বপ্ন তিনি তার গর্ভাবস্থায় দেখেন।
হযরত আব্দুল কাদির জিলানী(র:) এর বয়স যখন মাত্র ৫ বৎসর তখনই তিনি পিতৃহীন হন। তার লালন-পালন ও পড়াশোনার দায়িত্ব এসে পড়ে মায়ের উপর। মা চরকায় সুতা কেটে জিবীকা নির্বাহ করতে শুরু করেন।
শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী র: এ মাদ্রাসার উন্নতি ও উৎকর্ষের কাজে আতœনিয়োগ করেন। হাদীস ,তাফসির, ফিকহ ও অন্যান্য জ্ঞান বিজ্ঞানের শিক্ষাদান নিজেই শুরু করেন। পাশাপাশি ওয়াজ নসিহত ও তাবলিগের কর্মসুচীও চালু করেন। অল্পদিনের মধ্যেই এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম চারিদিকে ছরিয়ে পড়লো এবং দেশ বিদেশের বিদ্যার্থীরা এতএ ছুটে আসতে লাগলো। এ পর্যায়ে মাদরাসার নামকরনও শায়খের সাথেই সম্পৃক্ত হয়ে ‘মাদরাসায়ে কাদেরিয়া” হয়ে গেল।
শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী র: এর শিক্ষকতার জীবন ছিল ৫২৫ থেকে ৫৬১ হিজরি পর্যন্ত মোট ৩৬ বছর। যাতে তিনি দিনের প্রথম ভাগে তাফসির ও হাদীস, যোহরের পর পবিত্র কোরাআন, আর অন্যান্য সময় ফিকহ, উসুল ইত্যাদি বিষয়ের পাঠ দান করতেন। আল্লাহ তাআলা তাকে বাহ্যিক জ্ঞান ও বিদ্যায় এতই ব্যুৎপত্তি দান করেছইলেন যে, যখন ফতোয়া দান করতেন তখণ কোন উৎস বা গ্রন্থ দেখার প্রয়োজন হতো না। কাগজ কলম নিয়ে কোনরুপ চিন্তা ভাবনা ছাড়াই উপস্থিত তিনি যা লিখতেন ,সমকালীন জ্ঞানীগুনি ও আলেম সমাজ ইহাকেই দলীল স্বরুপ মনে করতেন। তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট থেকে