আবুল হোসেন চৌধুরী

21

 

শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবী, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও সমাজ সংস্কারক আবুল হোসেন চৌধুরী ১৮৯৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিন পুত্র, দুই কন্যা সন্তানের জনক। ফজলুল হক চৌধুরী, আহমদ সোবহান চৌধুরী, মোজাহেরুল হক চৌধুরী, নুর জাহান বেগম চৌধুরানী, রেজিয়ে বেগম চৌধুরানী। জমিদারির সাথে সাথে তাদের বিরাট ব্যবসা ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোলকাতা বন্দরে জাপানের বোমা হামলায় সবকিছু ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়। অবশিষ্ট যা কিছু ছিল তা স্থানীয় লোকজন লুটপাট করে নিয়ে যায়। আবুল হোসেন চৌধুরী চাটার্ড লঞ্চে আকিয়াব থেকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর হয়ে হালদা নদী দিয়ে সোজা আজিম চৌধুরী ঘাটে ফার্নিচার বোঝাই লঞ্চ নিয়ে আসতেন। তিনি গাউসুল আযম শাহসুফি সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভাÐারী (ক.) বাবাজান কেবলা’র খেদমতে শামিল থাকতেন। তিনি ১৯১৮ সাল হতে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত হারুয়ালছড়ি ইউপির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। চট্টগ্রাম জুরি বোর্ডের জুরার (চটগ্রাম আদালত এর বিচারক) ডিএসবি চট্টগ্রাম বিভাগীয় মেম্বারের (সদস্য) দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৪৩ সালে এই বাংলায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখন চট্টগ্রামবাসীর অবস্থা দেখে অর্থ বিত্তশালী, জমিদার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্ত নিলো, যার যার নিজ এলাকায় লঙ্গরখানা খুলে খাবার বিতরণ করার, আবুল হোসেন চৌধুরী ছোট ভাই আহমদর রহমান চৌধুরীকে সাথে নিয়ে খাবার বিতরণ শুরু করলেন। অনেকে তখন দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সেবায় ঝাপিয়ে পড়েছিল। মরহুম আবুল হোসেন চৌধুরী একজন ধার্মিক, মানবিক ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব ছিলেন। জনগণকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে।তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় মাদ্রাসা ও মক্তব গড়ে তুলতে। তিনি নিজের অর্থ ব্যয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান পাটিয়াল ছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিনপিনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় উনার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষানুরাগী হিসাবে সমাজে সমাধিক পরিচিত। হারুয়ালছড়ির ৮-১০ টি গ্রাম এবং আসেপাশের গ্রামে কোনো ভাল ডাক্তার বা চিকিৎসালয় না থাকার দূরবর্তী চট্টগ্রাম শহরে যেতে হতো। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা কারণে জনগণের পক্ষে শহরের গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া অসম্ভব কষ্টকর। তাই এলাকার গরীব জনগণের জীবন রক্ষার্থে ও সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা বিধানকল্পে গরীব জনগণের দুঃখ দুর্দশার কথা বিবেচনা করে হারুয়ালছড়ি নয়াহাট বাজারে নিজের জায়গায় সানাউল্লাহ ব্যারিষ্টারের নামে (হাটহাজারী এমপি ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নানা) দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন। ১৯৪১ সালে কৃষকের দুর্দশা, বিশেষ করে তাদের ঘাড়ে মহাজনের জোঁয়ালের চাপে অনেকেই চাষাবাদ ছেড়ে দিয়ে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন।
আবুল হোসেন চৌধুরী কৃষকের দুঃখ দুর্দশা দুর করা, কৃষকেরা সরকারী সুযোগ সুবিধা চাষাবাদে কি ভাবে পায়,সেই ব্যবস্হা করার চেষ্টা চালিয়ে যান।কৃষকের দোরগোড়ায় সরকারি সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য হারুয়ালছড়ি নয়াহাট বাজারে নিজে জায়গা জমি দিয়ে সরকারি কৃষি অফিস স্হাপন করেন। তৎকালীন সময়ে কৃষি অফিস থেকে বীজ সার কৃষি উপকরণ সহ কৃষিকাজে যাবতীয় সুবিধা নিয়ে হারুয়াল ছড়ির চাষিরা চাষাবাদ করেন। দেশভাগের (পাকভারত)কয়েক বৎসর পর তৎকালীন পাকিস্হান সরকারের আমলে এই অফিসের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।জনগণের সেবা ও মানবিকতা আবুল হোসেন চৌধুরী মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন। কালের সাক্ষী হয়ে কৃষি ভবনটি এখনো পরিত্যক্ত ভবন হিসেবে দৃশ্যমান আছে। আমি শ্রদ্ধেয় দাদা মরহুম আলহাজ্ব আবুল হোসেন চৌধুরী আত্মার মাগফেরাত কামনা, রাব্বুল আলামিনের দরবারে ফরিয়াদ জানাই উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন।
লেখক: নাজমুল হাসান চৌধুরী হেলাল